বিশেষ প্রতিনিধি।। পদ্মা সেতুতে দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ উপকৃত হলেও লঞ্চ ব্যবসায় ভাটা পড়েছে শুরু থেকেই। ধারণা করা হয়েছিল, শুরুতে লঞ্চের যাত্রী কমলেও ধীরে ধীরে তা বাড়বে। কিন্তু সেই আশা ছেড়ে দিয়েছেন লঞ্চমালিকেরা। ভবিষ্যতে লঞ্চের যাত্রী স্বাভাবিক হবে তেমনাটাও আর ভাবছেন না দীর্ঘদিন ধরে ব্যবসায় জড়িত থাকা লঞ্চমালিকেরা।
লোকসান কমাতে প্রতিদিন ছয়টি লঞ্চ চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন লঞ্চমালিকেরা। প্রতিদিন ঢাকা প্রান্ত থেকে তিনটি লঞ্চ বরিশালের উদ্দেশে এবং বরিশাল প্রান্ত থেকে তিনটি লঞ্চ ঢাকার উদ্দেশে যাত্রী পরিবহন করবে।
লঞ্চে যাত্রী কমায় হতাশ মালিকেরা। এ কারণে নতুন করে লঞ্চ তৈরি দূরের কথা, পুরাতন লঞ্চগুলো কেটে কেজি দরে বিক্রির সিদ্ধান্ত নিয়েছেন কেউ কেউ। এ কারণে রাজধানীর পোস্তগোলায় যেখানে একসময় লঞ্চ বানানো হতো, সেখানে এখন লঞ্চ কাটা চলছে। তবে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, লঞ্চ বেশি পুরোনো হলে এছাড়া অন্য কোনো রুটে পারমিট না পেলে লঞ্চ কেটে বিক্রি করা হয়। তবে যে লঞ্চগুলো কাটা হচ্ছে, সেগুলোর রুট পারমিট ছিল বলে জানিয়েছেন মালিকেরা।
দক্ষিণাঞ্চলের ২১টি জেলার বিভিন্ন রুটে লঞ্চ চলাচল করে। আরামদায়ক যাত্রা হিসেবে মানুষ লঞ্চকেই বেছে নিত। কিন্তু পদ্মা সেতুর কারণে বাড়ি পৌঁছাতে খুবই কম সময় লাগছে। এ কারণে আরামদায়ক যাত্রার চেয়ে সময়কেই বেশি মূল্য দিচ্ছেন দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ। যেখানে বরিশালে লঞ্চে যেতে ৬ ঘণ্টা সময় লাগছে। সেখানে পদ্মা সেতু পাড়ি দিয়ে তিন ঘণ্টায় পৌঁছে যাচ্ছে গন্তব্যে।
লঞ্চমালিকেরা বলছেন, একদিকে যাত্রী কমছে, অন্যদিকে বাড়ছে জ্বালানি তেলের মূল্য। এ কারণে ভাড়া বাড়াতে হয়। কিন্তু বেশি ভাড়া দিতে হবে—এ কারণেও যাত্রী লঞ্চে আসছে না।
জনপ্রিয় লঞ্চ কীর্তণখোলা। নাম বদলে হয় কামাল-১। সেটি এখন কাটা হচ্ছে সদরঘাটের সন্নিকটে পোস্তগোলায়। প্রিন্স সাকিন-৪ নামে আরো একটি লঞ্চ কাটা হবে। এর আগে রাজধানী নামে একটি লঞ্চ কাটা হয়। আরো বেশ কয়েকটি লঞ্চ কাটা হবে এমন কথা জানা গেছে।
লঞ্চ মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক শহীদুল ইসলাম গতকাল ইত্তেফাককে বলেন, ‘যে লঞ্চগুলো কাটা হচ্ছে, সেগুলোর রুট পারমিট ছিল। কিন্তু ব্যবসা মন্দা যাওয়ায় সেগুলো কাটতে বাধ্য হচ্ছি আমরা। ইতিমধ্যে পাঁচ-ছয়টি লঞ্চ কাটা হয়ে গেছে। আরো কাটা হবে।
তিনি বলেন, একটি ভালো মানের লঞ্চ বানাতে ২০ থেকে ২৫ কোটি টাকা খরচ হয়। যদি কেউ ব্যাংক ঋণ নিয়ে তৈরি করে, সে ক্ষেত্রে দাম সে অনুযায়ী বাড়বে। তিনি জানান, একটি লঞ্চ কাটলে ৬-৭ কোটি টাকা পাওয়া যায়।
লঞ্চ কাটার কাজে দায়িত্বরত শ্রমিকেরা জানিয়েছেন, লঞ্চ কাটা হয় গ্যাসের আগুন দিয়ে। তিন তলাবিশিষ্ট একটি লঞ্চ কাটতে দেড় থেকে দুই মাস লাগে। সেটি কাটতে খরচ হয় ১০ থেকে ১২ লাখ টাকা। আর বিক্রি করে মালিক পান ছোট-বড় হিসাবে ২ থেকে ৫ কোটি টাকা। অথচ একটা লঞ্চ বানাতে খরচ হয় ২৫ কোটি টাকারও বেশি। ব্যাংকের সুদ হিসাব করলে সেটা বাড়বে। লঞ্চের লোহা ও স্টিল সিটগুলো কেজি দরে বিক্রি করা হয়। পরে রিফাইন করে ব্যবহার করা হয়। প্রয়োজন অনুযায়ী গলিয়ে বানানো হয় বিভিন্ন সাইজের রড।
তবে এরই মধ্যে আরো দুটি লঞ্চ নামছে। যদিও এই লঞ্চগুলো তৈরি শুরু হয় কয়েক বছর আগে। সুন্দরবন-১৪ ও সুন্দরবন-১৬ নামের দুটি বিলাসবহুল লঞ্চ। ইতিমধ্যে সুন্দরবন-১৪ পরীক্ষামূলকভাবে চালানো হয়েছে। সুন্দরবন-১৬ কিছুদিন পরে পানিতে নামবে।