বিশেষ প্রতিনিধি।। নির্বাচন কমিশনের (ইসি) আপত্তি সত্ত্বেও জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) তৈরির কাজ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের অধীনে যাচ্ছে। তবে আইনের গেজেট না হওয়া পর্যন্ত এই কাজ ইসির অধীনেই থাকবে। জন্মের পরপরই নিবন্ধন করে দেওয়া হবে ইউনিক আইডি। পাঁচ-ছয় বছর তা কার্যকর হবে।
গতকাল সোমবার সচিবালয়ে মন্ত্রিসভার বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রিপরিষদসচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম এসব তথ্য জানান। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে তাঁর কার্যালয়ে মন্ত্রিসভার বৈঠক হয়। পরে সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলনে বৈঠকের সিদ্ধান্ত তুলে ধরেন মন্ত্রিপরিষদসচিব।
সচিব বলেন, মন্ত্রিসভায় ‘জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধন আইন, ২০২২’-এর খসড়া নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। তবে চূড়ান্ত অনুমোদনের আগে আইনের খসড়াটি পর্যালোচনা করে বেশ কিছু বিষয়ে সংশোধন করার মতামত দিয়েছে মন্ত্রিসভা। আগের আইনে ৩২টি ধারা ছিল, সেটা থেকে কমিয়ে ১৫টি করা হয়। বেশ কিছু ধারা বাদ দেওয়া হয়েছিল। সেগুলোতে মন্ত্রিসভা সম্মত হয়নি। যেমন—বিদ্যমান আইনে ছয়-সাতটি অপরাধের জন্য আলাদা দণ্ড ছিল, কিন্তু আইনের খসড়ায় সব কটিকে এক করে সাত বছরের কারাদণ্ড দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। এগুলোকে আলাদাই রাখতে হবে বলে মত দেওয়া হয়। মন্ত্রিসভা যথাসম্ভব আগের ৩২টি ধারার মতো আইন করতে বলেছে। আইন মন্ত্রণালয়ের লেজিসলেটিভ ও সংসদবিষয়ক বিভাগ সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে কথা বলে আগের ৩২টি ধারার অনুরূপ করে আইনের খসড়া করবে। তবে আইনটি চূড়ান্ত না হওয়া পর্যন্ত এখন যেভাবে আছে, সেভাবেই চলতে থাকবে। ইসির অধীনেই কাজ চলবে।
খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম জানান, আইনটি যত দিন পর্যন্ত গেজেট আকারে জারি না হবে, তত দিন পর্যন্ত স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে আসবে না। তবে আইনের খসড়া নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
মন্ত্রিপরিষদসচিব বলেন, এনআইডির কাজটি ইসির চেয়ে সরকারের সরাসরি তত্ত্বাবধানে থাকা বেশি প্রয়োজন। সে জন্য এটি সুরক্ষা সেবা বিভাগের অধীনে আনার সিদ্ধান্ত হয়েছে। পাসপোর্টের কাজটিও হয় সুরক্ষা সেবা বিভাগের অধীনে। সুরক্ষা সেবা বিভাগের অধীনে এলেও এখানে কাজের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্টদের প্রবেশের সুযোগ থাকবে। নির্বাচন কমিশন চাইলেও ১৮ বছরের বেশি বয়সীদের বিষয়ে তথ্য নিতে পারবে। এটি ইসির বিষয়। তারা যদি মনে করে এই তথ্য নিয়ে তাদের উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন হবে, তাহলে তা পারবে। তিনি বলেন, আইনটি মন্ত্রিসভায় চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য আসতে আরো এক মাস সময় লাগবে। আগামী নির্বাচনের আগে আইনটি চূড়ান্ত হবে কি না—এ ব্যাপারে খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, এ নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব করা হবে। কার্যক্রম কিভাবে সম্পন্ন হবে, এ জন্য আইনের অধীনে পরবর্তী সময়ে বিধি করা হবে।
সবার জন্য ইউনিক আইডি
মন্ত্রিপরিষদসচিব বলেন, সরকারের সিদ্ধান্ত হলো সবার জন্য একক পরিচয়পত্র (ইউনিক আইডি) থাকবে। জন্মের সঙ্গে সঙ্গে যে নিবন্ধন হবে, সেই নম্বরই সব জায়গায় নম্বর হিসেবে ব্যবহার হবে। আজ থেকে পাঁচ-ছয় বছর পর এটি কার্যকর হবে। তবে বয়স্ক ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে তা সম্ভব হবে না। আর এনআইডি জন্মের পরপরই হয়ে যাবে।
সুরক্ষা সেবা বিভাগের অধীনে কাজটি কিভাবে হবে—এ ব্যাপারে মন্ত্রিপরিষদসচিব বলেন, বিধি দিয়ে তা নির্ধারিত হবে।
জন্ম নিবন্ধনও ব্যবস্থাও সুরক্ষা সেবা বিভাগের অধীনে চলে যাবে কি না—এ বিষয়ে তিনি বলেন, সবাই মিলে আলোচনা করে একটা সিস্টেম ডেভেলপ করতে বলা হয়েছে। জন্মের সময় যে নিবন্ধন হবে, সেই নম্বরটা যাতে সব জায়গায় থাকে। আইন ও বিধি হলে এ বিষয়গুলো পরিষ্কার হবে। আপাতত যেভাবে আছে, সেভাবে চলবে; কিন্তু নিজেরা বসে যেন ইন্টার-অপারেটিবিলিটি থাকে, ডুপ্লিকেশন না হয়, কেউ যাতে বাদ না পড়ে—সেটা দেখে কাজ করতে বলা হয়েছে। নির্বাচন কমিশন এনআইডি সেবা সুরক্ষা সেবা বিভাগের কাছে হস্তান্তরের বিষয়ে আপত্তি জানিয়েছে।
এ নিয়ে কোনো আলোচনা হয়েছে কি না—এ বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদসচিব বলেন, ‘না, সে বিষয়ে কোনো আলোচনা হয়নি। ’