বিশেষ প্রতিনিধি।। দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের বহুল কাঙ্খিত পদ্মা সেতুর পর এবার শুভ উদ্বোধনের মাধ্যমে যাত্রা শুরু করল এই এলাকার আরেকটি কাঙ্খিত স্বপ্নের রেল সেবা। ইতোপূর্বে দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ ট্রেনের সাথে খুব বেশি পরিচিত ছিল না। পদ্মাসেতুর পর আজ থেকে এই অঞ্চলটি রেল সেবার আওতায় আসলো। মাদারীপুর জেলার শিবচরের কোল ঘেঁষে রেললাইনটি রাজধানী ঢাকার সাথে যোগাযোগ স্থাপন করবে। মঙ্গলবার(৪ এপ্রিল) দুপুর ০১টার সময় ফরিদপুরের ভাঙ্গা থেকে ছেড়ে আসা রেলগাড়ীটি পদ্মাসেতু পার হয়ে মাওয়া স্টেশনে যাবে। এই খবরে শিবচরসহ দক্ষিণাঞ্চলের ২১টি জেলার মানুষের মাঝে বাঁধ ভাঙ্গা উচ্ছাস প্রকাশিত হয়। রেললাইনটি উদ্বোধন করেন, রেল মন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন, চীফ হুইপ নুর-ই আলম চৌধুরী (লিটন) এমপি, পানিসম্পদ উপমন্ত্রী এনামুল হক শামিম এমপি, মজিবুর রহমান চৌধুরী (নিক্সন) এমপি, মাহিম রাজ্জাক এমপি ছাড়াও রেল মন্ত্রণালয়ের উর্ধতন কর্তৃপক্ষ, আশপাশের কয়েকটি জেলার প্রশাসনিক কর্মকর্তা, আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তা, বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা কর্মীরা ও উৎসুক স্থানীয় লোকজপদ্মা সেতু চালু হওয়ার ৯ মাস ১০ দিনের মাথায় অপেক্ষার পালা শেষ হলো আজ মঙ্গলবার। জীবনের প্রথম মাদারীপুরসহ দক্ষিণাঞ্চলের অনেক মানুষই হয়তো এই প্রথম রেলগাড়ি দেখবে এটি যেন তাদের কাছে এক পরম পাওয়া।
এর মাধ্যমে দক্ষিণাঞ্চলের ২১ টিকে জেলার মানুষ স্বল্প খরচে তাদের যাতায়াত সুবিধা, পণ্য আমদানি-রপ্তানিতে এবং ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে এক দিকে যেমন গতি আসবে তেমনি ঘটবে এর প্রসার। চাঙ্গা হবে দেশের অর্থনীতি। বিশেষ করে স্বল্প খরচে কৃষিপণ্য রাজধানীতে নিতে পারবেন ভাটি অঞ্চলের কৃষকরা। এরই মধ্য দিয়ে দেশবাসী আরও একটি মাইলফলক স্পর্শ করতে যাচ্ছে।
শিবচরের পদ্মাসেতু সংলগ্ন কুতুবপুর এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, পদ্মা সেতুর এক্সপ্রেসওয়ের পাশেই রেল লাইন। পদ্মা সেতু পার হয়েই প্রথম স্টেশন শিবচরের কুতুবপুর এলাকায় ‘পদ্মা স্টেশন’। রেল লাইন ঘিরে এই এলাকার মানুষের মধ্যে উচ্ছ্বাসের যেন শেষ নেই।
রেলপথ সংলগ্ন শিবচরের দত্তপাড়া, পাঁচ্চর, কুতুবপুর, কাঁঠালবাড়ী এলাকার স্থানীয়রা বলেন,’পদ্মাসেতুর পর ট্রেন চালু হলে যোগাযোগের আরেক দিগন্ত উন্মোচিত হবে। এই রেললাইন ঘিরে এই এলাকার মানুষ নতুন কর্মসংস্থানের স্বপ্ন দেখছে। তাছাড়া রেললাইন চালু হওয়ার পরেই ব্যবসা-বাণিজ্যের বেশ প্রসার ঘটবে।পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন স্থানে কম খরচে মালামাল পরিবহণ করা যাবে। এই এলাকার কৃষিজ পন্য সহজেই বিভিন্ন স্থানে পৌছে দেয়া যাবে। তাছাড়া স্বল্প আয়ের মানুষ, শ্রমজীবিরা রেল কেন্দ্রিক নতুন কাজের সন্ধান পাবে। জংশন এলাকায় ক্ষুদ্র ব্যবসা বা হকারি করেও জীবিকা নির্বাহ করতে পারবে। পদ্মার ঘাট বন্ধ হবার পর ঘাটের শতশত মানুষ তাদের দীর্ঘদিনের পেশা হারিয়েছে। অসংখ্য হকারশ্রেনির মানুষ আজ বেকার। তারাও রেলপথ নিয়ে আশায় বুক বেঁধে আছে। নতুন করে জীবিকা নির্বাহের ক্ষেত্র তৈরি হবে এই রেলপথ ঘিরে।
ভাঙ্গা স্টেশনমাস্টার মো. শাহজাহান জানান, মঙ্গলবার দুপুর ১২টায় ভাঙা স্টেশন থেকে একটি গ্যাংকার ট্রেন এবং সাত বগিবিশিষ্ট যাত্রীবাহী একটি স্পেশাল ট্রেন মাওয়ার উদ্দেশে ছেড়ে যাওয়ার সময় নির্ধারণ করা হয়েছে।
তবে রেলমন্ত্রী মহোদয় আসবেন, তিনি এখানে ব্রিফ করতে পারেন। সে ক্ষেত্রে ট্রেন ছাড়তে কিছুটা বিলম্ব হতে পারে। আগে গ্যাংকার ট্রেন ছাড়া হবে, তার পরে স্পেশাল ট্রেন যাত্রা করবে। যাত্রীবাহী হলেও এই স্পেশাল টেনে কোনো যাত্রী থাকবে না।
শুধু মন্ত্রী মহোদয়, রেল লিংক প্রকল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা, সেনাবাহিনীর কর্মকর্তা এবং বিশেষ অতিথিরা থাকবেন। মাওয়া পৌঁছানোর পর সেখান থেকে মন্ত্রী মহোদয়সহ অতিথিবৃন্দ সড়কপথে ঢাকায় ফিরে যাবেন। ভাঙ্গা থেকে পদ্মা সেতু হয়ে মাওয়া স্টেশনে পৌঁছাতে কত সময় লাগবে জানতে চাইলে ভাঙ্গা স্টেশনমাস্টার মো. শাহজাহান বলেন, কতটা গতিতে চালানো যাবে এবং চালক কতটা গতিতে ট্রেন চালাতে পারবেন; তার ওপর নির্ভর করছে ভাঙ্গা থেকে পদ্মা সেতু হয়ে মাওয়া স্টেশনে পৌঁছাতে কতটা সময় লাগবে।তবে আমাদের ধারণা, দুই ঘণ্টার মতো লাগতে পারে।’ তিনি আরও বলেন, ‘ট্রেন দুটি মাওয়া স্টেশনে পৌঁছানোর পর গ্যাংকার ট্রেন ওইখানেই থেকে যাবে; আর স্পেশাল ট্রেনটি মাওয়া থেকে পুনরায় ভাঙ্গা স্টেশনে আসবে।