ডিমের পর এবার মুরগির বাচ্চা নিয়েও ব্যবসায়িক কারসাজির অভিযোগ উঠেছে বাংলাদেশের কর্পোরেট কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে।

খামারিদের অভিযোগ, কোম্পানিগুলো এক দিন বয়সী মুরগির বাচ্চার দাম ধাপে ধাপে প্রায় দ্বিগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে। এতে অচিরেই দেশের ব্রয়লার মুরগি আর ডিমের দাম আবারো বেড়ে যাবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

গত অগাস্ট মাসের মাঝামাঝি যে মুরগির বাচ্চার দাম ছিল ২৭ থেকে ৩৫ টাকার মধ্যে, সেই মুরগির বাচ্চা এখন বিক্রি হচ্ছে ৪২ থেকে ৫২ টাকায়।

এর কারণ হিসেবে কোম্পানিগুলো আগের ক্ষতি পুষিয়ে নেয়া কথা বললেও একে কোম্পানিগুলোর পরিকল্পিত সিন্ডিকেট কারসাজি বলে দাবি করছেন খামারিরা।

বাচ্চার দাম বেড়েছে, মুরগির দাম বাড়েনি
প্যারাগন হ্যাচারি লিমিটেডের পক্ষ থেকে প্রান্তিক খামারিদের পাঠানো ক্ষুদে-বার্তা পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, গত ২০ আগস্ট প্রতিটি ব্রয়লার মুরগির বাচ্চার বিক্রয়মূল্য ছিল গ্রেড ভেদে ২৭ থেকে ৩৫ টাকা।

লেয়ার বাচ্চার দাম ধরা হয়েছিল ৫৬ থেকে ৫৮ টাকায়। কক বাচ্চার দাম ছিল ১৩ থেকে ১৪ টাকা।প্যারাগন কালার ও সোনালি মুরগির বাচ্চা বিক্রি হয়েছে যথাক্রমে ৪৫ ও ২৩ টাকায়।

অথচ ১৮ই সেপ্টেম্বর প্যারাগনের এক দিন বয়সী ব্রয়লার বাচ্চার বিক্রয়মূল্য বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৪ থেকে ৫২ টাকায়। লেয়ার বাচ্চা ও কক বাচ্চা বিক্রি হয়েছে যথাক্রমে ৬৬ ও ২২ টাকা এবং কালার মুরগির বাচ্চার দাম ধরা হয়েছে ৫৬ টাকা।

নরসিংদীর খামারি অলি উল্লাহ বলেন, ‘গত মাসে মুরগির বাচ্চার কিনেছি ৩৬ টাকায়। তখন বাজারে রেডি ব্রয়লার মুরগির কেজি ছিল ১৩৮ থেকে ১৪০ টাকা। এখন বাচ্চার দাম ৫২ টাকা হয়ে গিয়েছে। বাড়তি দাম দিয়ে বাচ্চা কিনলেও বাজারে মুরগির দাম আগের মতোই। এভাবে লাভ করার তো অবস্থা নাই। খামারই চালাতে পারবো না।’

সাধারণত একটি ব্রয়লার বাচ্চা মুরগির পরিণত হতে বা দেড় কেজির মতো ওজনে আসতে ৩০ থেকে ৩২ দিনের মতো সময় লাগে। তাতে মুরগির বাচ্চা, ফিডসহ যাবতীয় খরচ মিলিয়ে ১৫৫ টাকা ছাড়িয়ে যায় বলে খামারিরা জানিয়েছেন।

কর্পোরেট কারসাজিতে মুরগির বাচ্চা
আগস্টে খাদ্য খাতে রেকর্ড ১২ দশমিক ৫৪ শতাংশ মূল্যস্ফীতি হয়েছে। এর জন্য মুরগি ও ডিমের দামকে দায়ী করেছেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান।

আর মুরগি ও ডিমের দাম বাড়ার পেছনে খামারিরা অভিযোগের তীর ছুড়ছে সংশ্লিষ্ট কর্পোরেট কোম্পানিগুলোর দিকে।

আগে বাংলাদেশের কর্পোরেট গ্রুপগুলো শুধুমাত্র ফিড ও বাচ্চা উৎপাদন করত। তখন বাজারে স্থিতিশীলতা ছিল বলে দাবি করেছেন খামারিরা।

কিন্তু ২০২০ সালের করোনা মহামারির পর থেকে কর্পোরেট গ্রুপগুলো ডিম-মুরগি উৎপাদন শুরু করে। এরপর থেকেই ইচ্ছামতো মুরগির ফিড নাহলে বাচ্চার দাম বাড়িয়ে বাজার নিয়ন্ত্রণে চেষ্টা করছে বলে খামারিরা জানাচ্ছেন।

সাম্প্রতিক সময়ে মুরগির বাচ্চার দাম বাড়িয়ে এই কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো দিনে সাড়ে ছয় কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন পোল্ট্রি অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (বিপিএ) সভাপতি মো. সুমন হাওলাদার।

তিনি জানান, বাংলাদেশে প্রতিদিন ২৪ লাখ ব্রয়লার মুরগির বাচ্চা এবং দুই লাখ লেয়ার বাচ্চা উৎপাদিত হয়। সব মিলিয়ে হয় মোট ২৬ লাখ।

তিনি বলেন, ‘সে হিসাবে একটি বাচ্চায় যদি গড়ে ২৫ টাকার বেশি নিলে দেখা যাচ্ছে, কর্পোরেট গ্রুপগুলো সিন্ডিকেট করে প্রতিদিন ৬ কোটি ৫০ লাখ টাকার বেশি হাতিয়ে নিচ্ছে।’

বাজারে কেমন প্রভাব পড়তে যাচ্ছে বাংলাদেশের বাজার পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে মুরগির বাচ্চার দাম নির্ধারণ করে থাকে বাংলাদেশ ব্রিডার্স এসোসিয়েশন। এই সংস্থার আওতায় থাকা শতাধিক কোম্পানি মুরগির বাচ্চা উৎপাদন করে থাকে।

Share.
Exit mobile version