
মোঃ আহাদুল্লাহ সানা, সাতক্ষীরা প্রতিনিধি।। সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য ধ্বংসের পাঁয়তারা চলছে নতুন কৌশলে। মাছ ও অন্যান্য জলজ প্রাণী ধ্বংসে জাল-জালিয়াতি কিংবা অবৈধ শিকারই নয়, এখন সুন্দরবন সংলগ্ন নদী ও খাল থেকে শামুক নিধনের ঘটনাও ব্যাপক আকারে ঘটছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, কিছু অসাধু ব্যবসায়ী অর্থের লোভ দেখিয়ে বনসংলগ্ন এলাকার মানুষকে কাজে লাগিয়ে ট্রলার ও নৌকায় ভরে শামুক সংগ্রহ করছেন। এরপর পাচারের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বিক্রি করা হচ্ছে এসব শামুক।
স্থানীয় সূত্র জানায়, চিংড়ি মাছ আহরণে ব্যবহৃত হচ্ছে বিষাক্ত পদার্থ। এতে নদী-খালের পানিতে থাকা ছোট মাছ, চিংড়ির রেণু, কাঁকড়া এবং অন্যান্য জলজ প্রাণীর মৃত্যু ঘটছে। ধীরে ধীরে জীববৈচিত্র্য ধ্বংসের মুখে পড়ছে সুন্দরবন ও উপকূলীয় এলাকা। শামুক সংগ্রহে নদীর তলদেশ খনন করায় প্রাকৃতিক ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন পরিবেশবিদরা।
নীলডুমুর এলাকার জেলে মোজাম্মেল হক বলেন, “অর্থের প্রলোভন দেখিয়ে অসাধু ব্যবসায়ীরা কিছু অসাধু জেলেদের এ কাজে লাগাচ্ছে ।পাচার চক্র দিনের পর দিন নদী খাল থেকে শামুক কুড়িয়ে ট্রাকে ভরে পাচার করছে। অথচ আমরা জেলেরা তিন মাস মাছ শিকার বন্ধ রেখে নদী রক্ষা করি, কিন্তু এভাবে শামুক নিধন আমাদের পরিশ্রমকেও ব্যর্থ করে দিচ্ছে।”
বন ও পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, শামুক নদী ও খালের পানির গুণগত মান বজায় রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। পাশাপাশি এটি মাছ ও অন্যান্য জলজ প্রাণীর খাদ্য হিসেবেও ব্যবহৃত হয়। কিন্তু নির্বিচারে শামুক নিধনের ফলে শুধু জীববৈচিত্র্যই নয়, জেলেদের ভবিষ্যৎ জীবিকাও মারাত্মক হুমকির মুখে পড়বে।
এ বিষয়ে সচেতন মহল দ্রুত কঠোর আইন প্রয়োগের দাবি জানিয়েছেন। তারা বলছেন, অবৈধভাবে শামুক নিধন ও পাচার বন্ধ না করলে অচিরেই সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য মারাত্মক বিপর্যয়ের মুখে পড়বে। স্থানীয়দের প্রশ্ন- “জলজ প্রাণীর আশ্রয়স্থল সুন্দরবন ধ্বংস হতে থাকলেও প্রশাসন এখনো নীরব কেন।
সুন্দরবনের অবৈধ চক্র সুন্দরবনের জীববৈচিত্র ধ্বংস করছে এ বিষয়ে কি পদক্ষেপ নিয়েছেন বনবিভাগ জানতে চাইলে বুড়িগোয়ালিনী স্টেশনের স্টেশন কর্মকর্তা জিয়াউর রহমান বলেন, বনবিভাগের সদস্যরা সুন্দরবনে নিয়মিত টহল দেওয়া কালে সুন্দরবন থেকে অবৈধ ভাবে সম্পদ আহরণ এবং অবৈধ কাজে ব্যবহৃত যন্তংশ উদ্ধার করে আইনের আওতায় নিয়ে আসাসহ প্রতিনিয়ত আমাদের স্মাটটহল টিমসহ কয়েকটি টহলদল সুন্দরবনের বিভিন্ন অংশে প্রতিনিয়ত টহল কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।
সুন্দরবন থেকে শামুক নিধন বিষয়ে পশ্চিমবনের সহকারীবন সংরক্ষক ফজলুল হকের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সুন্দরবন অথবা সুন্দরবন সংলগ্ন নদী খাল হতে অবৈধ উপায়ে শামুক নিধন বিষয়টি আমাদের নজরে নিয়েছি এবং প্রতিনিয়ত বন বিভাগের পক্ষ থেকে অভিযান অব্যাহত রয়েছে তাছাড়া আপনারা দেখেছেন মাঝেমধ্যে আমরা অভিযান চালিয়ে শামুক উদ্ধার করে নদীতে অবমুক্ত করছি, এমনকি আমাদের টহল জোরদার করা হয়েছে যাতে করে কোন অসাধুচক্র সুন্দরবন থেকে অবৈধ উপায়ে কোনভাবেই সুন্দরবনের সম্পদ আহরন করতে না পারে এবং পাচার করতে না পারে।

