বরিশাল অফিস:- জেলার হিজলা উপজেলার পূর্ব পত্তণীভাঙ্গা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্রী ১২ বছর বয়সের মুক্তামনির দুটি হাত না থাকার পরেও অদম্য ইচ্ছাশক্তি আর চেষ্টায় পা দিয়ে লিখেই প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে জিপিএ-৫ অর্জন করেছে। শুধু পরিবার নয়; বিদ্যালয়ের শিক্ষকরাও মুক্তামনিকে নিয়ে এ বিজয়ের স্বপ্ন দেখেছিলেন।
মুক্তামনির বিদ্যালয়ের প্রধানশিক্ষক নাছিমা খানম বুধবার সকালে বলেন, অবশেষে আমাদের সকল শিক্ষকের স্বপ্ন বাস্তবে রূপ নিয়েছে। মুক্তামনি পিএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়েছে। আমরা আশাকরি সামনের দিনগুলো তার আরও ভালোভাবে কাটবে এবং ভবিষ্যত তার উজ্জল হবে। ১৪ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে মুক্তা একাই জিপিএ-৫ পেয়েছে।
রেজাল্ট ভালো করায় বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা আনন্দিত তেমনি মুক্তামনির পরিবারও খুশি। মুক্তামনি এখন বৃত্তি পাওয়ার আশা করছে। । মায়ের কর্মস্থল সাভারের একটি স্কুলেও ভর্তি হয়েছে মুক্তামনি।
সূত্রমতে, শুরুতে মুক্তামনি গ্রামেই থাকতো। তার মা ঝুমুর বেগম জীবিকার তাগিদে সাভারে বসবাস করে গার্মেন্টসে চাকরি করেন। দুই বছর আগে তৃতীয় শ্রেণিতে পড়াকালীন সময় মুক্তামনি ঢাকার সাভারে যায়। সেখানেই বৈদ্যুতিক তারে জড়িয়ে মুক্তামনি তার দুই হাত হারিয়েছে। চিকিৎসার প্রয়োজনে প্রথমে কনুই থেকে দুটি হাত কেটে ফেলা হলেও ক্ষত ঠিক না হওয়ার একপর্যায়ে পুরোপুরি দুটো হাতই শরীর থেকে কেটে ফেলা হয়েছে। পরবর্তীতে পত্তনীভাঙ্গা গ্রামে দাদী জাহানারা বেগমের কাছে থেকে ধীরে ধীরে সুস্থ্য হয়ে উঠলে পুনরায় পড়াশোনা করতে চায় মুক্তামনি। তার ইচ্ছেতেই ২০১৮ সালে বাবা সেন্টু মিয়া ও মা ঝুমুর বেগম পূর্ব পত্তণীভাঙ্গা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চতুর্থ শ্রেণিতে ভর্তি করে মুক্তামনিকে।
সূত্রে আরও জানা গেছে, দুই হাত হারিয়ে নতুন স্কুল জীবনের শুরু থেকেই ডান পায়ের আঙ্গুলের ফাঁকে কলম দিয়ে লেখার অভ্যাস করতে থাকে মুক্তামনি। আর এখন হাতে লেখা যে কারো মতো স্বাভাবিক গতিতেই পা দিয়ে অনায়াসে সে লিখে যেতে পারে। মুক্তার চিকিৎসাসহ আরও এক বোনের পড়াশোনার খরচ চালিয়ে যেতে হিমশিম খাচ্ছে তার হতদরিদ্র পরিবার। তবুও মেয়েদের উচ্চশিক্ষিত করতে চান তার মা। মুক্তামনির স্বপ্ন একদিন সে শিক্ষক হবে।