তবু ভুলে যেওনা  
স্নিগ্ধ নীলিমা  
পৃথিবীর এত কোলাহল এত আলোর বন্যা
আমাকে ছোঁয়না কোন সুর কোন প্রদীপ শিখা।
এইযে নক্ষত্র, চাঁদের আলো,  ফুরফুরে দখিনা হাওয়া,
পাখির কলতান, নীল সমুদ্র, রূপালি জোৎস্না।
সবকিছু পিছনে ফেলে চলে যাব অনন্ত আহবানে।
আমার অস্তিত্ব, দেয়ালের সেই ছায়াটি
বিলীন হবে তোমাদের জমকালো আসর থেকে।
পুরোনো এলবামের ধুলো ঝেড়ে কালেভদ্রে
যদি উঁকি দেয় সখের বসে তোলা তৈলচিত্র,
কবিতার পান্ডুলিপি, অগোছালো দিনলিপি।
মনে রেখো, আমিও লালন করেছি সুন্দরের স্বপ্ন,
ফোঁটাতে চেয়েছি ধুতরা, সোনালু,  ভাঁট আর ঘাসফুল।
দলিত, পীড়িত, নিষ্পেষিত,  আর্ত, মানবতার জন্য ঝরিয়েছি নিঃশব্দ অশ্রুজল।
বোবাকান্নার নোনাজল নদী হয়ে মিলেনি সাগরে।
গোলাপকে ঘিরে রাখা অজস্র কাঁটা রচেছে দেয়াল,
আমি ছুঁতে পারিনি নির্ঝরিণীর স্বচ্ছ জল। গ্রহনে গ্রহনে চাঁদ সূর্য পরেছে ঢাকা অসীমে,
আমি হেঁটেছি ছায়াপথ ধরে একা, নিঃসঙ্গ।
ফনাতোলা কাল নাগিনীর বিষাক্ত নিঃশ্বাস
আমায় পুড়িয়েছে নিয়ত, বারবার মরেছি মরমে।
পায়ে বাঁধা শিকল আর হাতের হাতকড়া
তুলতে দেয়নি তর্জনী, শিরদাঁড়া, অবনত মস্তক।
তবু ক্ষমা করো, কালের খেরোখাতায় লিখে দিও হৃদয়ের রক্তে রাঙানো ব্যার্থতার
জবানবন্দী।
শুভ জন্মদিন
স্নিগ্ধ নীলিমা
হাজার বছরের শ্রেষ্ট বাঙালি!  জাতির পিতা!
জন্মক্ষণের সুতীব্র চিৎকার
ছুঁয়ে যায় এক বিধ্বস্ত  জনপদ।
গর্ভধারিণী  ইংরেজ বেনিয়ার কারাগারে,
যেখানে নিষ্পেষিত ফুল পাখি আর গান।
যৌবনের সোনালি  ক্যানভাসে শোষণের ছবি,
শুভ্র জলে অক্টোপাস, হাঙ্গর আর কুমিরের বাস,
ছিল ডুবে যাওয়া স্বপ্নরা, বিষন্ন শ্মশানঘাট,
রক্তবর্ণ চোখ, বিষাদের কুয়াশাঘেরা হাহাকার।
মায়ের জঠরে আলোকিত দেবদূত  শিশু
পৃথিবীকে ডেকে বলে, ‘ সত্য সুন্দরের আহবানে
কে আছ আমার সহযাত্রী, মিছিলের সহযোদ্ধা।
গাইবে শিকল ভাঙার গান,
পাথরের বুকে ফলাবে ফসল,
বইয়ে দিবে উচ্ছল  ঝর্ণাধারা ‘।
লাল নীল প্রজাপতিরা উড়ল ঘোর অমানিশায়,
আগুনের লেলিহান শিখায় আচ্ছন্ন সবুজ জমিন।
অবশেষে এল পাখিডাকা  বসন্ত,
নীল আকাশে রুপালি  চাঁদ,
তোমার স্বপ্নের হিরকোজ্জ্বল বর্ণালী সোনার বাংলা।
দিয়াশলাই বাক্সে বন্দী আগুন 
স্নিগ্ধ নীলিমা 
ঘোর অমানিশায় কালঘুমে ডুবে আছে  তারারা
কালো ছায়ারা বীরদর্পে কড়া নাড়ে বদ্ধ জানালায়
নিয়ন আলোর নীচে জেগে আছে চাঁদ ডোবা রাত
সুনীল সাগর তলে বিছানো মৃত্যুফাঁদ চোরাবালি।
মস্তিস্কের অস্থির শব্দরা ছুটতে চায় চোরাগলি পথে
কেউ এসে কন্ঠ রোধ করে দাঁড়ায় রক্তচক্ষু মেলে
স্তব্দ, মূক, বধির এক  তেলাপোকা জীবনকে
নিয়তি মেনে  শীত চাদরে ঢাকি বিষন্ন অবয়ব।
এখন ফুলের বাগানে চাষ হয়না রক্ত গোলাপের
নীলপদ্ম ঘিরে পাহারায় বিষাক্ত কাল নাগিনী
সাগরের অতল গভীরে ডুবে গেছে সুখস্বপ্নরা
সাঁতরে চলেছি ঠাঁইহীন উত্তাল জলরাশিতে।
কোন একদিন সহস্র উর্মিমালা তীরে আছড়ে পড়ে
ভিজিয়ে দিবে আমাদের ক্লান্ত অবসন্ন পা দুটি
দিয়াশলাই বাক্সে বন্দী আগুন সদর্পে জ্বলে উঠে
আলোয় আলোয় ভাসিয়ে দিবে এইসব অন্ধকার।
Share.
Exit mobile version