বরিশালে সরিষার বাম্পার ফলন
খোকন আহম্মেদ হীরা:- ভোরের আলোর আলোক রশ্মি মসুর, ভুট্টা, তিল তিষির পাতায় জমে থাকা শিশির কণার উপর পরে যেমন অপরূপ শোভার সৃষ্টি করে তেমনি বিকেলের গোধূলী লগ্নে সরিষা ক্ষেত যেন প্রকৃতিকে করে তোলে অপরূপ। হলুদে হলুদে সেজেছে বরিশালের বিস্তৃত ফসলের মাঠ। বিরুপ আবহাওয়ার মধ্যেও এবার জেলার বিভিন্ন উপজেলায় সরিষা চাষে বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। আরও কিছুদিন আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে কৃষকরা ক্ষেতের সরিষা ঘরে তুলতে পারবেন।
বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, কৃষকের ফসলের ক্ষেতে উত্তরা হিমেল হাওয়ায় মাঝে মধ্যেই দোল খাচ্ছে সরিষার ফুল। ফুলে ফুলে ভরে গেছে প্রতিটি সরিষার ক্ষেত। মাঠের পর মাঠজুড়ে সরিষা ফুলের নয়নাভিরাম দৃশ্য ও মনোমুদ্ধকর সৌন্দর্য উপভোগ করে সরিষা ফুলের সাথে সেলফি তুলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দিচ্ছেন প্রকৃতি প্রেমীরা। বর্তমানে অধিকাংশ ক্ষেতেই সরিষার বীজ আসতে শুরু করেছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এবছর সরিষা চাষে ভাল ফলনের আশা করছেন কৃষকরা। ফলে কম খরচে অধিক লাভের আশায় কৃষকের মুখে এখন তৃপ্তির হাসি ফুটে উঠেছে।
সরেজমিনে বিভিন্ন উপজেলায় দেখা গেছে, অধিকাংশ এলাকায় কৃষকরা সরিষার পাশাপাশি রকমারি রবি ফসল চাষ করেছেন। বিশেষ করে খন্ড খন্ড জমিতে সরিষার হলুদ ফুলের অপরূপ দৃশ্য মাঠে-প্রান্তরে শোভা পাচ্ছে। চাষিরা জানান, প্রতিবিঘা জমিতে সরিষা চাষের শুরু থেকে ঘরে ওঠানো পর্যন্ত আড়াই থেকে তিন হাজার টাকা খরচ হয়। মোটামোটি ভালো ফলন হলে উৎপাদন খরচ বাদে সাত থেকে আট হাজার টাকা পর্যন্ত লাভ হয়ে থাকে। তবে বাজার ভালো থাকলে সরিষায় আরও বেশি লাভবান হওয়া যায়। জেলার একমাত্র কৃষক বন্ধু অবসরপ্রাপ্ত উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তা মোঃ সিরাজুল ইসলাম বলেন, এবার গম চাষের বদলে চাষিরা অন্যান্য রবি ফসল আবাদ বেশি করছেন। গত বছর এসব ফসলের ন্যায্যমুল্য পাওয়ার কারণেই চাষিরা রবি শষ্যের দিকে বেশি ঝুঁকেছেন। চলতি মৌসুমে জেলায় মসুরী, তিল, সরিষার যে পরিমান আবাদ হয়েছে তা গত বছরের তুলনায় কিছুটা কম। এরমধ্যে মসুর ও সরিষার আবাদ বেড়েছে বেশী।
গৌরনদী উপজেলার পিঙ্গলাকাঠী গ্রামের কৃষক আলাউদ্দিন হাওলাদার জানান, এবছর তিনি ৬২ শতক জমিতে সরিষা আবাদ করেছেন। গত বছর নিজস্ব পদ্ধতিতে চাষ করলেও এবার কৃষি অফিসের পরামর্শ ও সহযোগিতায় বারি-১৫ জাতের সরিষা আবাদ করেছেন। যার অধিকাংশ ক্ষেতেই সরিষার বীজ আসতে শুরু করেছে। তিনি আরও জানান, মৌসুমে প্রতি মণ সরিষার দাম ১৮’শ থেকে দুই হাজার টাকায় বিক্রি করা যায়। যা অন্যান্য ফসলের তুলনায় অধিক লাভবান। কম খরচে বেশি লাভবান হওয়ায় তারমতো অনেক কৃষক সরিষা চাষের দিকে ঝুঁকছেন বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
গৌরনদী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মামুনুর রহমান জানান, গত বছর এ উপজেলায় ৩৫০ হেক্টর জমিতে সরিষা আবাদ হয়েছিলো। এ বছর ৩৭৫ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষ হয়েছে। সরিষা চাষে কৃষকরা লাভবান হওয়ায় এবছর সরিষা চাষ বৃদ্ধি পেয়েছে। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক হরিদাস শিকারী জানান, চলতি মৌসুমে বরিশাল জেলায় ৬ হাজার ৯৬৫ হেক্টর জমিতে সরিষা আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিলো। কিন্তু সরিষা আবাদের সঠিক সময়ে ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের প্রভাব থাকায় ৩ হাজার ২৯৫ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষ হয়েছে। এরমধ্যে বাবুগঞ্জ, মুলাদী, উজিরপুর ও গৌরনদী উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়নে সবচেয়ে বেশি সরিষার চাষ করা হয়েছে। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে আবাদ কম হওয়া সত্বেও শেষপর্যন্ত আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে সরিষার বাম্পার ফলন হবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।