খোকন আহম্মেদ হীরা, বরিশাল:- আট একর জমির ওপর দীর্ঘ ছয় বছর ধরে নির্মান কাজ শেষে অতিসম্প্রতি কারিগরী শিক্ষা মন্ত্রণালয় অধিদপ্তরের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে বরিশাল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ ভবন, মাল্টিপারপাস ভবন, ইঞ্জিনিয়ারিং টিসার্স কোয়াটার ভবন, ছাত্র-ছাত্রী নিবাসসহ ১৮টি ভবন।

 

বরিশাল-ভোলা মহাসড়কের পাশ্ববর্তী বরিশাল সদর উপজেলার দূর্গাপুর নামকস্থানে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর সফলতার সাথে এসব ভবনের নির্মান কাজ সম্পন্ন করেছে। এখন শুধু আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধনের অপেক্ষায় রয়েছে সুরম্য ও দৃষ্টিনন্দন করা বরিশাল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ ভবন।

 

বরিশাল শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, সদর উপজেলার দূর্গাপুর নামকস্থানে সড়ক থেকে প্রায় আট ফুট নিচুস্থানের আট একর জমি অধিগ্রহন করে ২০১৩ সালের ১৯ ডিসেম্বর কাজের ভিত্তিপ্রস্থর স্থাপন করা হয়। পরবর্তীতে ওই জমিতে নতুন করে বালু ও মাটি ফেলে জমি ভরাট করার মাধ্যমে ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ প্রকল্পের কাজ শুরু করে বরিশাল শিক্ষা অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী ও সহকারী প্রকৌশলী কর্মকর্তাগণ। নির্ধারিত সময় ধরে দেয়ার পূর্বে ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজসহ কমপোন্ডেটের কাজ দ্রæততার সাথে শেষ করার মাধ্যমে এক বিরাট সফলতা দেখাতে সক্ষম হয়েছে বরিশাল শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা।

 

বরিশাল শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের সহকারী প্রকৌশল মোঃ কামরুল ইসলাম বলেন, সদর উপজেলার দূর্গাপুরে সরকারীভাবে যে জমি অধিগ্রহন করার হয় সেখানে একসময় সড়ক থেকে প্রায় আট ফুট নিটু ধানের জমি ছিলো। একইতো নিচু জমি তার মধ্যে চারদিকে পানিতে ডুবে থাকা অধিগ্রহনকৃত জমিতে নতুন করে বালু ও মাটি ফেলে বরিশাল-ভোলা মহাসড়কের সাথে মিল রেখে সয়েল বয়ালিং নিয়ন্ত্রন করা হয়। পরে জমি ভরাট করে প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ শুরু করা হয়। শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের দরপত্র সিডিউল অনুযায়ী ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে আমাদের দেয়া কাজ বুঝে নিয়ে টানা ছয় বছর কঠোরভাবে কাজের তদারকি করা হয়েছে।

 

ইতোমধ্যে চারদিকে প্রাচীর দেয়াল নির্মাণসহ আট একর জমির উপর ৫৮ কোটি টাকা ব্যয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ ভবনসহ কলেজ ক্যাম্পাসের অভ্যন্তরে আরও যেসব প্রতিষ্ঠান ভবন থাকা দরকার তা সবই সম্পূর্ন করা হয়েছে। একইসাথে ২০১৯ সালের ৩০ ডিসেম্বর বরিশাল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ প্রকল্পের সকল ভবন নির্মান সম্পন্ন করে কারিগরি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

 

সহকারী প্রকৌশলী কামরুল ইসলাম আরও বলেন, পুরো কাজের মান ঠিক রাখতে সার্বক্ষনিক তাদের মাঠে থাকতে হয়েছে। ফলশ্রæতিতে দ্রæততার সাথে বিশাল এ প্রকল্পের কাজ শেষ করতে পেরেছে বরিশাল শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী সমীর কুমার রজক দাস। তিনি বলেন, এতো দ্রæততার সাথে বরিশালে আর কোন প্রকল্পের কাজ শেষ হয়েছে বলে আমাদের জানা নেই।

 

সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা গেছে, আওয়ামী লীগ সমর্থিত মহাজোট সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর বরিশাল ইঞ্জনিয়ারিং কলেজ প্রকল্পটির স্থান নির্বাচনসহ ডিপিপি অনুমোদন লাভ করে। পরবর্তীতে প্রকল্প ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় সংশোধিত ডিপিপি একনেক’র অনুমোদ লাভ করে। শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতর প্রকল্পটির অবকাঠামো নির্মান কাজ সম্পন্ন করেছে।

 

অধিদফতরের বরিশাল জোনের নির্বাহী প্রকৌশলীরা জানান, প্রকল্প এলাকার অবকাঠামোর মধ্যে প্রশাসনিক ভবন, সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং ভবন, কম্পিউটার ভবন, নেভাল আর্কিটেক্ট ভবন, লাইব্রেরী, ক্যাফেটেরিয়াসহ দুইটি ছাত্রাবাস ও একটি ছাত্রী নিবাস, প্রিন্সিপালের বাসভবনসহ সীমানা প্রাচীর নির্মান করা হয়েছে।

 

সূত্রমতে, বরিশাল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজটিতে নেভাল আর্কিটেক্ট ছাড়াও প্রাথমিকভাবে সিভিল ও কম্পিউটার সায়েন্স বিষয়ে ছাত্র-ছাত্রী ভর্তি করা হবে। তবে ভবিষ্যতে অবকাঠামো সুবিধাসহ শিক্ষক নিয়োগের মাধ্যমে আরও কয়েকটি বিষয়ে এখানে ছাত্র-ছাত্রী ভর্তির ক্ষেত্রে কলেজ কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন। এতোদিন দেশের দক্ষিণাঞ্চলে কারিগরি শিক্ষার ক্ষেত্রে আন্ডার গ্রাজুয়েট পর্যায়ের কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছিলোনা। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শিক্ষা ক্ষেত্রে অগ্রগতি করতে বরিশাল টেক্সটাইল ইনস্টিটিউটটিকে পূর্ণাঙ্গ টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে রূপান্তর করেন। পরবর্তীতে বরিশাল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে নির্মানের উদ্যোগ গ্রহণ করেন। বরিশাল ইঞ্জনিয়ারিং কলেজ দেশের দক্ষিণাঞ্চলে কারিগরি শিক্ষার ক্ষেত্রে এক নতুন মাইল ফলক হবে বলে মনে করছেন স্থানীয় শিক্ষাবীদসহ অভিভাবক মহল।

 

বরিশাল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজটি বাংলাদেশের চতুর্থ প্রকৌশল কলেজ। এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশল ও প্রযুক্তি অনুষদের অধিভুক্ত। এটি চার বছর মেয়াদী বিএসসি ইন ইঞ্জিনিয়ারিং ডিগ্রি প্রদান করা হবে। এসএসসি এবং এইচএসসি পরীক্ষায় বিজ্ঞান বিভাগ থেকে উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীরা মোট জিপিএর ভিত্তিতে এ কলেজে পড়ার জন্য আবেদন করতে পারবে। ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীরা এখানে পড়ার সুযোগ পেয়ে থাকে। একাডেমিক কার্যক্রম বছরে দুইটি সেমিস্টারে ক্রেডিট পদ্ধতিতে সম্পন্ন হবে। বরিশাল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে ২০১৯-২০২০ শিক্ষাবর্ষের বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং প্রথম বর্ষ প্রথম সেমিস্টার স্নাতক (সম্মান) শ্রেনীর ক্লাস চলতি বছরের ২২ জানুয়ারি থেকে শুরু হয়েছে।

Share.
Exit mobile version