জেষ্ঠ্য প্রতিবেদক:- বাবুগঞ্জে সালিশের রায় বিপক্ষে যাওয়ায় ৪ নারীসহ ৭ জনকে কুপিয়ে জখমের পরে এবার পাল্টা মামলা দিয়ে সবাইকে বাড়িছাড়া করে অতঃপর রাতের আঁধারে বসতঘরের চিহ্ন নিশ্চিহ্ন করে সেখানে ইটের রাস্তা বানিয়েছে প্রভাবশালীরা। প্রতিপক্ষের টিনের বসতঘর গায়েব করে দিয়ে রাতারাতি সেখানে নির্মাণ করা হয়েছে প্রায় ৪০ ফুট দৈর্ঘ্যরে পারিবারিক ইট সলিং রাস্তা! বসতঘরের ওপর দিয়ে জোরপূর্বক রাস্তা নির্মাণের জন্য এমন তুঘলকি ঘটনা ঘটেছে উপজেলার রামপট্টি গ্রামের বড়ঢালী বাড়িতে।

 

বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, বাবুগঞ্জ উপজেলার রহমতপুর ইউনিয়নের রামপট্টি গ্রামের বড়ঢালী বাড়িতে পারিবারিক রাস্তা নির্মাণ নিয়ে কাঞ্চন ঢালী ও সিদ্দিক ঢালী গংদের মধ্যে দীর্ঘদিন বিরোধ চলে আসছিল। সিদ্দিক ঢালী তার বসতঘরের উত্তর-পূর্ব পাশ দিয়ে ৬ ফুট প্রস্থের ওই রাস্তা দিতে চাইলেও কাঞ্চন ঢালী জোরপূর্বক সিদ্দিক ঢালীর বাড়ির উঠানসহ একটি বসতঘরের ওপর দিয়েই ওই রাস্তা নির্মাণের জেদ ধরেন। রাস্তা নিয়ে সৃষ্ট বিরোধ নিষ্পত্তিতে স্থানীয় ইউপি সদস্য সাদেক খানসহ ৭ জন সালিশদার মনোনীত করে উভয়পক্ষ। তবে গ্রাম্য ওই সালিশের বিচারে হেরে যান কাঞ্চন ঢালী। গত ৩১ জানুয়ারি সালিশদাররা সিদ্দিক ঢালীর পক্ষে রায়ের রোয়েদাদনামা দিলে ক্ষিপ্ত হয়ে কাঞ্চন ঢালী, কামাল ঢালী, জসিম ঢালী ও রাসেল ঢালীর নেতৃত্বে তাদের ভাড়াটে ১০-১২ জন সন্ত্রাসী দেশিয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে সিদ্দিক ঢালীসহ তার পরিবারের ৭ জনকে উপুর্যুপরি কুপিয়ে ও পিটিয়ে জখম করে। আহতদের মধ্যে গুরুতর অবস্থায় রহিমা বেগম (৫০), সুমনা আক্তার (৩২), রাশিদা বেগম (৪০), জেসমিন আক্তার (৪৫) ও সিদ্দিক ঢালীকে (৪০) উদ্ধার করে বরিশাল শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে স্থানীয়রা। এ ঘটনায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন সিদ্দিক ঢালী বাদী হয়ে এয়ারপোর্ট থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। তবে ওই মামলা দায়েরের পরে প্রভাবশালী আসামী কাঞ্চন ঢালী ও তার সহযোগীরা আরো বেপরোয়া হয়ে ওঠে বলে অভিযোগ করে সিদ্দিক ঢালী জানান, মামলা দায়েরের পরেও পুলিশ কাউকে গ্রেফতার না করায় ওই মামলার ২ নম্বর আসামী কামাল ঢালী তার স্ত্রীকে দিয়ে মারপিট ও কথিত শ্লীলতাহানির মিথ্যা নাটক সাজিয়ে ক্ষমতার জোরে মহিলাসহ তাদের পরিবারের ৭ জনের নামে এয়ারপোর্ট থানায় একটি পাল্টা মামলা দায়ের করেন।

 

ওই সাজানো মামলায় গ্রেফতারের ভয়ে আসামীরা বাড়িছাড়া হওয়ার সুযোগে সোমবার রাতের আঁধারে তাদের টিনশেড ঘর ভেঙে সরিয়ে ফেলে সেখানে ইটসলিং করে রাস্তা নির্মাণ করেছেন কাঞ্চন ঢালী গংরা। দিনের বেলা কাজ করলে স্থানীয়দের চোখে পড়বে বিধায় রাত ১২টার পর থেকে সারারাত ধরে বসতঘর চিহ্ন নিশ্চিহ্ন করে ঘর এবং উঠানের ওপর দিয়ে রাতারাতি প্রায় ৪০ ফুট দৈর্ঘ্যের ওই ইটের রাস্তা নির্মাণ করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন সিদ্দিক ঢালী। ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে স্থানীয় সালিশদার আওয়ামী লীগ নেতা কাজী দেলোয়ার হোসেন ও হারুন অর রশিদ প্রধান বলেন, ‘সিদ্দিক ঢালীকে দুর্বল পেয়ে রীতিমতো অন্যায়-অত্যাচার করছেন লোকবলে বলীয়ান কাঞ্চন ঢালী গংরা।

 

বাড়ি থেকে বের হওয়ার বিকল্প রাস্তা থাকতেও ক্ষমতার জোরে আমাদের সালিশের বিচার উপেক্ষা করে প্রতিপক্ষের বসতঘর ও উঠানের ওপর দিয়ে রাতারাতি ইটের রাস্তার নির্মাণ করেছেন তারা।’ এদিকে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে অভিযুক্ত কাঞ্চন ঢালী বলেন, ‘যেখান থেকে রাস্তা নির্মাণ করার কথা ছিল সেখান থেকেই আমরা রাস্তা নির্মাণ করেছি।’ তাহলে আপনাদের মানিত সালিশের রায় না মেনে উল্টো হামলা-মামলা করলেন কেন এবং প্রতিপক্ষকে বাড়িছাড়া করে রাতের আঁধারে কেন রাস্তা নির্মাণ করলেন-এমন প্রশ্নের সদুত্তর দিতে পারেননি কাঞ্চন ঢালী। এয়ারপোর্ট থানার ওসি জাহিদ বিন আলম জানান, ৫ জনকে কুপিয়ে জখমের অভিযোগে সিদ্দিক ঢালী মামলা দায়ের করার পরে প্রতিপক্ষের কামাল ঢালীর স্ত্রী ইসরাত জাহান নুপুর বাদী হয়ে প্রতিপক্ষের ৭ জনকে আসামী করে একটি পাল্টা মামলা দায়ের করেছেন। তবে পাল্টাপাল্টি দুটি মামলারই তদন্তভার এসআই রায়হানুর রহমান ওপর ন্যাস্ত করা হয়েছে। তিনি সরেজমিনে তদন্ত ও সত্য-মিথ্যা যাচাই করে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা নেবেন বলে জানান ওসি।

Share.
Exit mobile version