
মোঃ আহাদুল্লাহ সানা, সাতক্ষীরা।। বছরে দশ হাজার উপকারভোগীর সেবা, বিদেশি শিক্ষার্থীদের শিক্ষা, স্বচ্ছ প্যাথলজি সেবা ও অপপ্রচারের বিরুদ্ধে সত্যের প্রতিরোধ : সাতক্ষীরার শহরের কেন্দ্রস্থলে পলাশপোল গ্রাম। শান্ত, নিভৃত, কিন্তু সম্ভাবনার আলো ছড়িয়ে থাকা এক মাটি।
ঠিক এই মাটিতেই জন্মেছিলেন শহিদ খান, যার আলোকিত জীবনের ছোঁয়ায় আজ পুরো সাতক্ষীরা এমনকি দেশের বাইরের মানুষও নতুন পথে হাঁটতে শিখেছে। তিনি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন নবজীবন (Nobo Jibon) একটি মানবিক প্রতিষ্ঠান, যা আজ বছরে দশ হাজারেরও বেশি শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষের জীবন স্পর্শ করে। নবজীবনের প্রতিষ্ঠাতা শহিদ খান আজ শুধু একজন ব্যক্তি নন তিনি এক চলমান ধারা, এক মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি, এক মুক্তচিন্তার শক্তিশালী প্রতীক।
শহিদ খানের আন্তর্জাতিক পরিবার কিন্তু হৃদয় সবসময় সাতক্ষীরায় শহিদ খান লন্ডনকে জীবিকার জন্য বেছে নিলেও তাঁর মন, মমতা ও সমাজচেতনা রয়ে গেছে সাতক্ষীরার মাটিতেই। তাঁর স্ত্রী তিউনেসিয়ার নাগরিক, শিক্ষিত, উন্মুক্তমনা এবং মানবিক মূল্যবোধের ধারক। তাদের দুই ছেলে, একজন লন্ডন, অন্যজন জার্মানিতে স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন।
বিদেশে থাকা সত্ত্বেও তারা নিজেদের শেকড়কে ভুলে যাননি, কারণ শহিদ খান ছোটবেলা থেকেই তাদের শিখিয়েছেন “মানুষের পাশে থাকলে জাতিগত বা জাতীয়তা দিয়ে পরিচয় খুঁজতে হয় না।” নবজীবনের জন্ম একটি বিশ্বাসকে কেন্দ্র করে শহিদ খানের স্বপ্ন ছিল একটি এমন প্রতিষ্ঠান, যেখানে কে কোন ধর্ম মানে, কোন মতবাদে বিশ্বাস করে, কোন সম্প্রদায়ের এসব কোনো বাধা হয়ে দাঁড়াবে না।
সেই স্বপ্ন থেকে সৃষ্টি নবজীবন। এখানে বিদেশি শিক্ষার্থীরাও পড়ালেখা করে। নবজীবন শুধু স্থানীয় শিক্ষার্থীদেরই নয় বিদেশ থেকেও শিক্ষার্থী আসে বিভিন্ন প্রশিক্ষণ, স্বাস্থ্যশিক্ষা ও সামাজিক উন্নয়নমূলক কোর্স করতে। এটি সাতক্ষীরায় বিদেশি শিক্ষার্থীদের আগমনের এক বিরল উদাহরণ। শুধু শিক্ষা নয় নবজীবনের আওতায় বিভিন্ন প্রকল্প, প্রশিক্ষণ, স্বাস্থ্যসেবা ও মানবিক সহায়তা গ্রহণ করে প্রায় ১০,০০০ মানুষ প্রতি বছর।
অপপ্রচারের বিরুদ্ধে সত্য নবজীবন কোনো রাজাকারের প্রতিষ্ঠান নয়, সামাজিক অগ্রযাত্রায় বাধা আসে এটাই নিয়ম। নবজীবনের বিরুদ্ধেও কিছু মহল অপপ্রচার ছড়িয়েছে “এটা নাকি রাজাকারের প্রতিষ্ঠান।” এই অভিযোগ শুধু ভিত্তিহীন নয় বরং উদ্দেশ্য প্রণোদিত। কারণ
প্রতিষ্ঠাতা শহিদ খান মুক্তচিন্তার মানুষ; ধর্মীয় গোড়ামি তাঁর চিন্তাকে কখনোই স্পর্শ করতে পারেনি।
শিক্ষা, স্বাস্থ্য, মানবসেবার ক্ষেত্রে যা করেছেন, তা কেবল মানবিকতার ভিত্তিতেই। এক ব্যক্তি যিনি বিদেশে থেকেও নিজের গ্রামের মানুষের স্বপ্ন পূরণের জন্য আজীবন পরিশ্রম করেন। যিনি ধর্ম নয়, দেখেন মানুষকে যার পুরো জীবন মানবসেবায় উৎসর্গ তাঁর বিরুদ্ধে এমন অপবাদ সমাজের বিভক্ত মানসিকতারই প্রকাশ।
তারেকুজ্জামান খান নবজীবনের মেরুদণ্ড, এক স্বচ্ছতার প্রতীক শহিদ খানের ভাতিজা তারেকুজ্জামান খান, বর্তমানে নবজীবনের নির্বাহী পরিচালক। তিনি শুধু প্রশাসনিক দায়িত্বই পালন করেন না তিনি পুরো প্রতিষ্ঠানটিকে আধুনিক, স্বচ্ছ, সাশ্রয়ী ও মানববান্ধব করতে নিরলস কাজ করছেন। স্বাস্থ্যসেবায় এক বিপ্লব ডাক্তারের জন্য কোনো কমিশন নয়, নবজীবন (এনজে) হাসপাতালের প্যাথলজিতে একটি নীতি কঠোরভাবে মেনে চলা হয় “কোনো ডাক্তারকে কমিশন দেওয়া হবে না।”
বাংলাদেশে চিকিৎসা ব্যবস্থার বড় দুর্নীতির উৎস—কমিশন বা রেফারেল বোনাস—বন্ধ করে তারেকুজ্জামান খান প্রমাণ করেছেন, মানবসেবা লাভের জায়গা নয়। এই নীতির কারণে টেস্টের খরচ অত্যন্ত কম, সাধারণ মানুষ অল্প টাকায় সঠিক পরীক্ষা করাতে পারছে সাতক্ষীরায় একটি স্বাস্থ্যখাতে স্বচ্ছতার দৃষ্টান্ত তৈরি হয়েছে। এ কারণে নবজীবন প্যাথলজি দ্রুতই মানুষের আস্থার জায়গা হয়ে উঠেছে।
সাংবাদিকতায় নতুন অধ্যায় দৈনিক “সাতক্ষীরা সকাল” ২০২২ সালের ৫ সেপ্টেম্বর তারেকুজ্জামান খান প্রতিষ্ঠা করেন দৈনিক “সাতক্ষীরা সকাল”। যেখানে কর্মরত, নির্বাহী সম্পাদক ও যাবতীয় দেখভাল করেন, আমিরুজ্জামান বাবু। সহ-বার্তা সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন-আলতাফ হোসেন বাবু সাহিত্য সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন, শেখ সিদ্দিকুর রহমান গ্রাফিক্সে আছেন- আবু সাঈদ। এই পত্রিকা দ্রুতই সাতক্ষীরার জনমানুষের কণ্ঠস্বর হয়ে ওঠে।
মানবতার নিরব সৈনিক: শহিদ খান অসংখ্য মানুষের কাছেই শহিদ খান এক অদৃশ্য অভিভাবকের মতো। দরিদ্র মেধাবীদের বিদেশে পড়ার সুযোগ করে দিয়েছেন, অসুস্থ মানুষের পাশে দাড়িয়েছেন, দুর্যোগে সহায়তা পাঠিয়েছেন, স্কুলশিক্ষক, অনাথ, বিধবা ও অসহায় পরিবারের দায়িত্ব নিয়েছেন, সমাজে ধর্মীয় সহিষ্ণুতা ও মুক্তচিন্তার বার্তা ছড়িয়েছেন। তাঁর কাছে মানবসেবা ধর্মের চেয়েও বড়, প্রার্থনার চেয়েও বিশুদ্ধ। এক সৎ মানুষের সবচেয়ে বড় শক্তি লোকচক্ষুর আড়ালে নীরব কাজ তাঁর কোনো ছবি নেই বড় ব্যানারে, নেই প্রচারণার সমাবেশ, নেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচণ্ড উপস্থিতি।
তিনি নীরবে কাজ করেন মানুষের জন্য মানুষের স্বপ্নের জন্য মানুষের বেঁচে থাকার জন্য। আর তাই সাতক্ষীরার মানুষ একবাক্যে বলেন, “নবজীবন আমাদের গর্ব। শহিদ খান আমাদের অভিভাবক।” একজন মানুষ যখন নিজের জীবনকে সমাজের কাছে উৎসর্গ করেন, যখন তাঁর প্রতিষ্ঠিত একটি সংগঠন বছরে দশ হাজার মানুষের জীবন স্পর্শ করে, যখন তাঁর ভাবনা বিদেশি শিক্ষার্থীদেরও টেনে আনে সাতক্ষীরায়, যখন তাঁর পরিবারের প্রগতিশীলতা মানুষের জন্য আশীর্বাদ হয়ে ওঠে তখন সেই মানুষ কেবল একজন নাম থাকে না।
তিনি হয়ে ওঠেন একটি যুগের নির্মাতা। শহিদ খান ঠিক তেমনই একজন। নবজীবন তাঁর স্বপ্ন, মানবকল্যাণ তাঁর জীবন, আর সত্য ও মুক্তচিন্তা তাঁর সবচেয়ে বড় পরিচয়।

