মানিক ঘোষ, ঝিনাইদহ প্রতিনিধি।। বাঙালি হিন্দু সমাজের চিরন্তন ঐতিহ্য ভ্রাতৃদ্বিতীয়া বা ভাইফোঁটা এবারও পালিত হলো ভালোবাসা আর স্নেহের উষ্ণ আবহে। বৃহস্পতিবার (২৩ অক্টোবর) সন্ধ্যায় ঝিনাইদহ জেলার কালীগঞ্জে অপর্ণা বিশ্বাসের বাড়িতে অনুষ্ঠিত হয় এক মনোমুগ্ধকর ভাইফোঁটা উৎসব।
এই আয়োজনে অপর্ণা বিশ্বাসের কন্যা অনিন্দিতা বিশ্বাস তার মামা রিক বিশ্বাসের কপালে চন্দনের ফোঁটা দিয়ে ছড়া কেটে বলেনভাইয়ের কপালে দিলাম ফোঁটা,
যমের দুয়ারে পড়লো কাঁটা,
যমুনা দেয় যমকে ফোঁটা,
আমি দেই আমার ভাইকে ফোঁটা।”
বোনের হাতের ছোঁয়ায় মুখে হাসি ফুটে ওঠে ভাইয়ের। দু’জনের খুনসুটি, হাসি আর ভালোবাসায় ভরে ওঠে ঘর। ফোঁটা দেওয়ার পর ভাইবোন একে অপরকে মিষ্টি খাওয়ায় এবং উপহার বিনিময় করে।
শিক্ষক মিতালী দে বলেন—
“দীপাবলির পরদিনই পালিত হয় ভাইফোঁটা। এই দিনে বোন তার ভাইয়ের অমঙ্গল ও অশুভ শক্তিকে দূর করে দীর্ঘায়ু ও সৌভাগ্যের প্রার্থনা করে। চন্দন তিলক আর দুর্বা-ধান দিয়ে বোন ভাইয়ের জীবনে মঙ্গল কামনা করে।”
তিনি আরও বলেন, যমী (যমুনা) তার ভাই যমকে এই তিথিতে বাড়িতে এনে পূজা ও ভোজনে আপ্যায়িত করেছিলেন। সেই থেকেই ভাইফোঁটা উৎসবের সূচনা হয়।
ইতিহাস ঘেঁটে জানা যায়, ১৩৩৬ খ্রিস্টাব্দে আচার্য সবানন্দ সুবীর তাঁর পুঁথিতে লিখেছিলেন—“রাজা নন্দী বর্ধন বোনের শোক নিবারণের জন্য তাকে আপ্যায়ন করেছিলেন,” যা থেকেই বোন-ভাইয়ের এই পবিত্র সম্পর্কের নবায়ন উৎসবের প্রচলন।
আজও সেই ঐতিহ্য অক্ষুণ্ণ রেখে বাংলাদেশের সর্বত্র পালিত হচ্ছে ভাইফোঁটা উৎসব। পশ্চিমবঙ্গের মতোই এখানে বোনেরা ভাইদের কপালে ফোঁটা দিয়ে দীর্ঘায়ু কামনা করে, আর ভাইয়েরা বোনদের উপহার দিয়ে স্নেহ ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে।
ভাইফোঁটা শুধু একটি ধর্মীয় আচার নয়—এটি বোনের ভালোবাসা ও ভাইয়ের আশ্রয়ের প্রতীক। হেমন্তের শিশিরভেজা বিকেলে এই উৎসব যেন স্মরণ করিয়ে দেয়—
“ভাই-বোনের সম্পর্ক শুধু রক্তের নয়, এটি চিরন্তন ভালোবাসার প্রতিচ্ছবি।”