রিপন হোসেন সাজু, মনিরামপুর (যশোর)।। যশোরের ভবদহ জলাবদ্ধতা নিরষণে নদীর নাব্য ফিরিয়ে আনতে শুরু হয়েছে ভবদহ অঞ্চলের পাঁচটি নদীর ৮১.৫ কিলোমিটার খনন কাজ।
শুক্রবার ( ২৪ অক্টোবর) ভবদহের ২১ ভেল্ট ভবদহ সুইট গেট থেকে ১৪০ কোটি টাকা ব্যয়ে কাজে শুভ উদ্বোধন করেছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ২৪ ইঞ্জিনিয়ার কনস্ট্রাকশন ব্রিগেড। এ সময় উপস্থিত ছিলেন খনন কর্মসূচির উদ্বোধন করেন পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়, জেলা প্রশাসন ও সেনাবাহিনীর কর্মকর্তারা।
প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন মোঃ আজাহারুল ইসলাম, মাননীয় জেলা প্রশাসক যশোর। লেঃ কর্ণেল মামুন উর রশিদ, প্রকল্প পরিচালক বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। বিঃএমঃ আব্দুল মোমেন, প্রকল্প পরিচালক বাপাউবো। মেজর গাজী নাজমুল হাসান, প্রকল্প কর্মকর্তা। পলাশ কুমার ব্যানার্জী, নির্বাহী প্রকোশলী, পাবাউবো যশোর। নিশাত তামান্না, উপজেলা নির্বাহী অফিসার মনিরামপুর। শেখ সালাউদ্দীন দিপু, উপজেলা নির্বাহী অফিসার, অভয়নগর, রেক্সনা খাতুন, উপজেলা নির্বাহী অফিসার, কেশবপুর। এছাড়াও অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, যশোর জেলা জামায়াতের কর্মপরিষদের সদস্য এ্যাড. গাজী এনামুল হক, যশোর প্রেসক্লাবের সভাপতি জাহিদ আহম্মেদ টুকুন, সাধারণ সম্পাদক তৌহিদুর রহমান, মনিরামপুর জামায়াতের আমীর অধ্যাপক ফজলুর রহমান, মনিরামপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি এস এম মজনুর রহমান, মনোহরপুর ইউপি চেয়ারম্যান আক্তার ফারুক মিন্টু, পায়রা ইউনিয়ন সাবেক চেয়ারম্যান ফিরোজ আহম্মেদ সহ প্রমুখ। এই কাজের আগে ভবদহের আমডাঙ্গা খাল খনন ও বেড়িবাঁধ নির্মাণের ৪৯ কোটি টাকার অনুমোদন দেয় সরকার, তবে সে কাজ এখনো শুরু করা সম্ভব হয়নি। রাজনীতিক পটপরিবর্তনের পর অন্তবর্তী সরকারের পানিসম্পদ উপদেষ্টা রিজওয়ান হাসান সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলো কর্মকর্তাদের নিয়ে দু’দফা পরিদর্শন করেন ভবদহ অঞ্চল। এসে প্রতিশ্রুতি দিয়ে জান স্থায়ী সমাধানের। তারই ধারা বাহিকতায় জলাবদ্ধতার স্থায়ী সংকটের এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে চলতি বছরের ২৩ সেপ্টেম্বর যশোর ও খুলনার ভবদহ অঞ্চলের দীর্ঘদিনের জলাবদ্ধতা নিরসনে বাপাউবো এবং সেনাবাহিনীর ২৪ ইঞ্জিনিয়ার কনস্ট্রাকশন ব্রিগেডের মধ্যে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়। ১৪০ কোটি টাকা ব্যায়ে প্রকল্পের আওতায় যশোর ও খুলনা অঞ্চলের হরিহর নদী (৩৫ কিমি), হরি-তেলিগাতি নদী (২০ কি.মি.), আপারভদ্রা নদী (১৮.৫ কি.মি.), টেকা নদী (৭ কি.মি.) ও শ্রী নদী (১ কি.মি.) সহ মোট ৫টি নদীর ৮১.৫ কি.মি পুনঃখনন করার অনুমোদন দেয়া হয়। যশোরের মনিরামপুর ও অভয়নগর ও কেশবপুর উপজেলার খুলনার ডুমুরিয়া ও ফুলতলা উপজেলার মধ্য পলি পড়ে এই অঞ্চলের পানিনিস্কাশনের একমাত্র মাধ্যম মুক্তেশ্বরী, টেকা, শ্রী ও হরি নদ নাব্যতা হারিয়েছে। এতে নদী দিয়ে পানি নিস্কাশিত হয় না। দীর্ঘ চার দশক ধরে স্থায়ী জলাবদ্ধতার শিকার। অবর্ণনীয় দুঃখের মধ্যে চলে ওই অঞ্চলের মানুষের জীবন। যে কারণে ভবদহকে ‘যশোরের দুঃখ’ হিসেবে অভিহিত করা হয়। ভবদহ পানি নিস্কাশন সংগ্রাম কমিটি ও স্থানীয়দের অভিযোগ, দীর্ঘ ৪৪ বছর দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের এই জনপদের মানুষ স্থায়ী জলাবদ্ধতার শিকার। ভবদহ স্লুইস গেট প্রস্তাবসহ নদী পানি ব্যবস্থাপনার প্রাকৃতিক ব্যবস্থার ওপর হস্তক্ষেপ এর কারণ।
এই জনপদে ভবদহ স্লুইস গেট একটি মরণফাঁদ। এর কোনো কার্যকারিতা এবং তার পানি নিস্কাশনের ক্ষমতাও নেই। পাম্পের মাধ্যমে সেচ প্রকল্প তার উৎকৃষ্ট প্রমাণ। ২০০-৩০০ ফুট প্রশস্ত ও সুগভীর নদী হত্যা করা হয়েছে। ৪৪ বছরে সংস্কারের নামে প্রায় এক হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় পানি উন্নয়ন বোর্ড ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক ও ঠিকাদার চক্রের সিন্ডিকেট লুটপাটের সুবিধার্থেই তা করা হয়েছে বলে প্রমাণিত হয়েছে। ভবদহ পানি নিস্কাশন সংগ্রাম কমিটির প্রধান উপদেষ্টা ইকবাল কবির জাহিদ বলেন ‘জলাবদ্ধতা দূরীকরণে জনগণ উদ্ভাবিত টিআরএম প্রকল্প গণআন্দোলনে গৃহীত হলেও বিগত সরকার ২০১২ সালে ‘সরকারি কর্মকর্তাদের ওপর হামলার’ অজুহাতে বাতিল করে দেয়। নদী খনন, টিআরএম চালু, স্লুইসগেট খোলা, আমডাঙ্গা খাল খনন করা এই চারটি দাবি ছিলো। ইতোমধ্যে এই চারটি দাবি মেনে নিয়েছে পানি সম্পদ উপদেষ্টা। জমি অধিগ্রহণের প্রক্রিয়া চলছে। স্লুইসগেটের ২১ ভেল্টের ১২ টা খুলে দিয়েছে। প্রবল বেগে পানি নিস্কাশন হচ্ছে। সেনাবাহিনীর মাধ্যমে নদী খননের কাজ শুরু হয়েছে। তবে খননের সাথে টিআরএম চালু না হলে খনন প্রকল্প ব্যর্থ হবে। আমরা আশা করছি, উজানে নদী সংযোগ ও টিআরএম বাস্তবায়ন হবে। ভবদহ পানি নিস্কাশন সংগ্রাম কমিটি আহ্বায়ক রণজিত বাওয়ালী বলেন, এবার যেহেতু সেনাবাহিনীর অধীনে নদী খনন বাস্তবায়ন হবে, এই কারণে একটু আশার আলো দেখছেন জলাবদ্ধবাসী। পাউবো যশোরের নির্বাহী প্রকৌশলী পলাশ কুমার ব্যানার্জী জানান, ‘শুক্রবার থেকে ভবদহ এলাকায় নদী পুনঃখনের কাজ শুরু হয়েছে। টেকা হরিহর নদীর কাজ শুরু হলে ভবদহের দুর্ভোগ লাঘব হবে। খননের পর পলি অপসারণের একটি প্রকল্প গ্রহণ করা হচ্ছে।


