গৌরনদী (বরিশাল) প্রতিনিধি।। বরিশালের গৌরনদীতে চিকিৎসক ও ক্লিনিক কর্তৃপক্ষের চরম অবহেলায় সাথি আক্তার পরী (২২) নামের এক প্রসূতি মায়ের মৃত্যুর ঘটনায় সিজারকারী চিকিৎসক সহ চারজনের নামোল্লেখ এবং ৭/৮ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামী করে থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। রোববার ( ২৩ নভেম্বর) নিহতের স্বামী ইমন আকন বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন। মামলার উল্লেখ যোগ্য আসামীরা হলেন- সিজারকারী ডা. সমিরণ হালদার, ডা. আকাশ, ক্লিনিক পরিচালক ডালিম ও সাব্বির।
নিহতের শশুর নজরুল আকন জানিয়েছেন, শনিবার সকাল ১১টার দিকে তার পুত্রবধুর প্রসব বেদনা শুরু হলে বাটাজোর মদিনা ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ভর্তি করা হয়। প্রথমে ক্লিনিকের চিকিৎসক রাজিব কর্মকার নরমাল ডেলিভারির কথা বলে ৫ হাজার টাকার বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করান। পরবর্তীতে সিজার করার সিদ্ধান্ত নেন। এসময় তিনি (নজরুল) সিজারে আপত্তি জানালে বরিশাল থেকে অভিজ্ঞ চিকিৎসক এনে অপারেশন করানোর আশ্বাস দেন ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ।
অভিযোগ করে নজরুল আকন বলেন, বিকেল সাড়ে চারটার দিকে সিজারের মাধ্যমে ছেলে বাচ্চার জন্ম দেয় পরী। সিজারের পরপরই সিজারকারী চিকিৎসক ক্লিনিক ত্যাগ করে চলে যায়। পরবর্তীতে আধা ঘন্টা পর পরীকে বেডে দেওয়া হলে তার শরীর সম্পূর্ন সাদা হয়ে যায় এবং শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। শাসকষ্টের বিষয়টি কর্তৃপক্ষকে জানালে তারা জানায় যে, ক্লিনিকে কোন অক্সিজেন নেই, বাইরে থেকে আনতে হবে। পরে একজন স্টাফ অক্সিজেন আনতে গিয়ে আর ফিরে আসেননি।
অভিযোগ করে নিহতের শশুর আরও বলেন, পরীর শারিরিক অবস্থা আরও খারাপ হলে আমরা চিৎকার-চেঁচামেচি শুরু করি। এসময় ক্লিনিকের চিকিৎস রাজিব কর্মকার এসে পরীক্ষা করে আমাদের কোন কিছু না জানিয়ে ক্লিনিক থেকে থেকে বের হয়ে যান। এর কিছুক্ষণের মধ্যেই ক্লিনিকের সব স্টাফরা পালিয়ে যায়। পরবর্তীতে পাশের একটি ক্লিনিক থেকে চিকিৎসক এনে পরীক্ষা করিয়ে জানতে পারি পরী মারা গেছে। কান্নাজড়িত কন্ঠে নজরুল আকন বলেন, তারা পালিয়ে না গিয়ে যদি চিকিৎসা দেওয়ার চেষ্টাও করতো তবু মনকে শান্তনা দিতে পারতাম। কিন্তু তারা চিকিৎসা না করে সবাই পালিয়ে গেছে।
গৌরনদী মডেল থানার ওসি মো. তরিকুল ইসলাম জানিয়েছেন, এঘটনায় নিহতের স্বামী বাদি হয়ে চিকিৎসক সহ চারজনের নামোল্লেখ করে থানায় মামলা দায়ের করেছেন। আসামীদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।
গৌরনদী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. শাহতা জারাব সালেহীন বলেন, এঘটনায় তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করে আগামী তিনদিনের মধ্যে রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, রেজিষ্ট্রেশন নবায়ন না করেই ক্লিনিকটি তাদের কার্যক্রম চালু রেখেছিলো। বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। এবিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।


