রাঙা প্রভাত ডেস্কঃ বিশ্বের যেখানেই করোনাভাইরাসের টিকা আবিষ্কার হোক না কেন সেটা বাংলাদেশের মানুষের জন্য সংগ্রহ করা হবে বলে ঘোষণা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদের নবম অধিবেশনের সমাপনী ভাষণে তিনি একথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “ভ্যাকসিন যেটা আবিষ্কার হল আমরা তো আশাবাদী হয়েছিলাম অক্সফোর্ডেরটা নিয়ে। সেটা পরীক্ষা করতে গিয়েই যখন অসুস্থ হয়ে পড়ল আমরা আবার একটু দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়ে গেছি।
“তারপরও আমাদের প্রচেষ্টা আছে যে, পৃথিবীর যেখানেই আবিষ্কার হোক বাংলাদেশ, আমার দেশের মানুষের জন্য আমরা সেটা সংগ্রহ করতে পারব। সেই বিষয়টায় আমরা যথাযথ সচেতন।”
করোনাভাইরাস মহামারী থেকে বিশ্ববাসীকে মুক্তি দিতে টিকা আবিষ্কারের চেষ্টা করছে বিভিন্ন দেশে। এরমধ্যে বেশি কয়েকটি টিকার তৃতীয় ধাপের পরীক্ষা চলছে, যার মধ্যে যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় ও ওষুধ কোম্পানি অস্ট্রাজেনেকার উদ্ভাবিত টিকা অন্যতম। এই টিকা চূড়ান্ত হলে তার উৎপাদনে যাবে ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউটও, সে লক্ষ্যে প্রস্তুতিও নেওয়া হয়েছে।
এই টিকা এলে প্রথম দিকেই বাংলাদেশ তা পাবে বলে গত মাসেই ঢাকা সফরে এসে আশ্বাস দিয়েছিলেন ভারতের পররাষ্ট্র সচিব হর্ষ বর্ধন শ্রিংলা।
তবে এই টিকার চূড়ান্ত পর্যায়ের পরীক্ষায় যুক্তরাজ্যে একজন অংশগ্রহণকারীর মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দেওয়ায় এর ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল স্থগিত রাখা হয়েছে বলে বুধবারই খবর প্রকাশ হয়েছে।
এ নিয়ে বিচলিত না হওয়ার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “ভ্যাকসিনের ব্যাপারে বিভিন্ন দেশ তারা গবেষণা করছে। অনেক দেশের কাছে আমরা শুনছি। সব দেশেই আমাদের আবেদন দিয়ে রেখেছি। তার জন্য টাকাও বরাদ্দ করে রেখেছি। যেখান থেকে আগে পাওয়া যায় আমরা সেটা নেব এবং আমাদের দেশের মানুষকে এই করোনামুক্ত করার জন্য তা ব্যবহার করব। সেই ব্যবস্থাও আমরা নিয়েছি।”
করোনাভাইরাস মহামারীর এই দুঃসময়ে সরকার জনগণের পাশে আছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, “আমাদের সাধ্যমতো আমরা মানুষের পাশে আছি। আমরা মানুষের পাশে থেকে কাজ করে যাচ্ছি। আর এই করোনাভাইরাসের সময়ে আমি মনে করি যে, সবাইকে এক হয়ে কাজ করতে হবে। এই দুঃসময়টা যেন আমরা পার করতে পারি। ইনশাল্লাহ, এটা আমরা পার করতে পারব।”
সংসদে বিরোধী দলের সরব উপস্থিতির জন্য তাদের ধন্যবাদ জানিয়ে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা বলেন, “এই পার্লামেন্টে সেশনে যে বিল পাস হল এখানে কিন্তু আমাদের সরকার দলীয় কেউ কথা বলার সুযোগই পায়নি। একমাত্র বিরোধী দলেরই এই পার্লামেন্ট ছিল এবং তারাই কথা বলে গেছে।
“গত পাঁচ দিন তাদের উপস্থিতিটা প্রতি মুহূর্তে আমরা টের পেয়েছি। শুধু একদিন আমরা যেহেতু আমাদের দুইজন সংসদ সদস্য মারা গেছেন সেজন্য আমরা সেদিন আর পার্লামেন্ট চলেনি। কিন্তু তারপরে বিল পাসের সময় একমাত্র বিরোধী দলের দখলে পার্লামেন্ট- এবার এটাই বলতে হবে।”
করোনাভাইরাস: অংশগ্রহণকারী অসুস্থ, অক্সফোর্ডের টিকার ট্রায়াল স্থগিত
প্রবাসী কর্মীদের পুনর্বাসনে সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমরা কিন্তু বসে নেই। যাদের আনার কথা আমরা স্পেশাল প্লেন পাঠিয়েও তাদের নিয়ে এসেছি এবং লাশ কিন্তু সব সময় আনা হয়। আর এখন তো প্লেনে যাতায়াতই বন্ধ। সব দেশেই বন্ধ। কোনো দেশে তো প্লেন ল্যান্ড করতেও দেবে না। কাজেই সেখান থেকে আমরা আনব কী করে? সেটাও তো দেখতে হবে।”
বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড দেশে কারা শুরু করেছিল, সে প্রশ্ন তুলে শেখ হাসিনা বলেন, “এটা তো জিয়াউর রহমানের আমল থেকেই শুরু। আমাদের বহু নেতাকর্মীর লাশও পাওয়া যায়নি। কিছু দিন আগেও আমি পার্লামেন্টে বলেছি। আমরা চেষ্টা করেছি কীভাবে আমরা এগুলো নিয়ন্ত্রণ করব। কিন্তু পাশাপাশি এটাও আমাদের দেখতে হবে যে, আমাদের মাদক নিয়ন্ত্রণ করতে হবে, সন্ত্রাস নিয়ন্ত্রণ করতে হবে, জঙ্গিবাদ নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।
“সেগুলো নিয়ন্ত্রণ করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থা যথাযথ কাজ করে যাচ্ছে এবং যথেষ্ট তারা সাফল্য অর্জন করেছে এবং তারা নিজেদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে করছে। কিন্তু সেইগুলো করতে গিয়ে যদি কিছু দুর্ঘটনা ঘটে এটা ঘটাটা খুব অস্বাভাবিক না। আমরা কিন্তু কাউকে ছেড়ে দিচ্ছি না। তাদের বিরুদ্ধেও যথাযথ ব্যবস্থা নিচ্ছি। এটা বলতে পারবে না কেউ অন্যায় করলে কাউকে আমরা ছেড়ে দিচ্ছি।”
এক্ষেত্রে সমালোচনার ক্ষেত্রে কিছু বিষয় বিবেচনার পরামর্শ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “যাদের দিয়ে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে, যাদের মানুষ বিপদে পড়ে ডাকে…পুলিশকেই আগে ডাকে। এমন কিছু না করা যাতে তারা যেন আবার ভয়ে ভীত হয়ে তাদের কাজের যে উৎসাহটা সেটা যেন নষ্ট না হয়- সেদিকেও দৃষ্টি দিতে হবে। সমালোচনা ভালো কিন্তু এটাও মাথায় রাখতে হবে।”
সংকটে হাল ছেড়ে না দিয়ে তা মোকাবেলা করতে হবে।