রাঙা প্রভাত ডেস্কঃ যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নির্বাচনে পরাজয় স্বীকার না করে যখন গণতান্ত্রিক কাঠামো ও রীতিনীতির ধ্বংসলীলায় মেতেছেন, তখন এর জবাব দেওয়া কিংবা নিজের বাকচাতুর্য দেখানোর পরিবর্তে আরো শান্ত আচরণ করছেন বিজয়ী জো বাইডেন। খুব অল্প কথায় তিনি জানিয়েছেন, ট্রাম্পের আচরণ ‘বিব্রতকর’, তবে তাতে তাঁর নিজের অগ্রগতি ব্যাহত হবে না।
নির্বাচনের আগে দিয়ে রাখা হুমকি সত্যি করে ট্রাম্প নিজের অবস্থানে অনড় রয়েছেন। পরাজয় মানতে অস্বীকার করার পাশাপাশি তিনি ক্ষমতা হস্তান্তরের অনানুষ্ঠানিক প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত করছেন। গত সোমবার বরখাস্ত করেছেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী মার্ক এসপারকে। এর ২৪ ঘণ্টার মধ্যে প্রতিরক্ষা দপ্তরের আরো তিন শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তা হয় বরখাস্ত হয়েছেন অথবা পদত্যাগ করেছেন। এসবের পাশাপাশি চলছে ভোট কারচুপির অভিযোগে ট্রাম্পের মামলার কার্যক্রম। তাঁর এসব কর্মকাণ্ডে দমে যাওয়ার পাত্র নন আত্মবিশ্বাসী বাইডেন।
ডেলাওয়ার অঙ্গরাজ্যের উইলমিংটনে সংবাদমাধ্যমকে হবু প্রেসিডেন্ট বাইডেন বলেছেন, ‘আমরা এমন কিছুই দেখতে পাচ্ছি না যা আমাদের গতি শিথিল করে দিতে পারে, খোলাখুলি বলছি।’ নির্বাচনে পরাজয় মানতে ট্রাম্পের অস্বীকৃতির বিষয়টি উল্লেখ করে বাইডেন আরো বলেন, ‘আমি স্রেফ মনে করি বিষয়টা বিব্রতকর, একদম নিঃসংকোচে বলছি।’ ট্রাম্পের মুখোমুখি হলে কী বলবেন—সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘মি. প্রেসিডেন্ট, আপনার সঙ্গে কথা বলতে চাচ্ছিলাম।’
প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ গ্রহণের অপেক্ষায় রয়েছেন—এমন ইঙ্গিত দিয়ে বাইডেন বলেন, ‘তারা (রিপাবলিকান) যে এখনো আমাদের জয় স্বীকার করতে চাচ্ছে না, তাতে আমাদের পরিকল্পনায় খুব একটা প্রভাব পড়বে না।’ তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি, দিন শেষে ২০ জানুয়ারির ফলই বাস্তবতা বাতলে দেবে এবং এখনকার আর তখনকার মাঝখানে আমার আশা-প্রত্যাশা হলো ক্ষমতার পালাবদলের বিষয়টা আমেরিকান জনগণ অবশ্যই জানবে ও বুঝবে।’
নির্বাচনের আনুষ্ঠানিক ফলের ঘোষণা আসতে আসতে আগামী জানুয়ারি। তবে অনানুষ্ঠানিক ফলেই নিশ্চিত হয়ে গেছে বাইডেনের প্রেসিডেন্সি। কারণ ইলেক্টোরাল কলেজের ভোটের হিসাবে সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিশ্চিত করে ফেলেছেন তিনি। এরই মধ্যে তাঁর পক্ষে পড়েছে ২৯০ ভোট। সংখ্যাগরিষ্ঠতার জন্য ৫৩৮টি ইলেক্টোরাল ভোটের মধ্যে প্রয়োজন হয় ২৭০টি।
অথচ ট্রাম্প নাছোড়বান্দা। তিনি মামলা করে ভোটের ফল উল্টে দেওয়ার প্রতীক্ষায় বসে আছেন। তাঁর সঙ্গে সুর মিলিয়েছেন সিনেটর লিন্ডসে গ্রাহামসহ বেশ কয়েকজন রিপাবলিকান নেতা। এমনকি পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও বলেছেন, ‘দ্বিতীয় ট্রাম্প প্রশাসন গঠনের পথে স্বচ্ছন্দ উত্তরণ ঘটবে।’
অন্যতম শীর্ষ রিপাবলিকান নেতা সিনেটর মিচ ম্যাককনেল অবশ্য কৌশলী কথাবার্তা বলছেন। গত মঙ্গলবার তিনি বলেন, অভিযোগ তোলা এবং সেই অভিযোগের পক্ষে লড়াই করার অধিকার ট্রাম্পের আছে। এটাকে এত অস্বাভাবিক হিসেবে নেওয়ার কিছু নেই, এমন মন্তব্যও করেন তিনি। কারো নাম উল্লেখ না করে তিনি বরাবরের মতোই বেশ জোর দিয়ে বলেন, ‘আমরা এসব পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাব এবং ২০২১ সালের ২০ জানুয়ারি আমরা বিজয়ী প্রার্থীকে ক্ষমতায় বসাব, যেমনটা আমরা ১৯৭৩ সাল থেকে প্রতি চার বছরে করে আসছি।’ সূত্র : এএফপি, সিএনএন।