মাস্ক পরিধান নিশ্চিত করতে ঢাকায় মোবাইল কোর্ট পরিচালনার নির্দেশ
নিজস্ব প্রতিনিধি।। রাজধানীতে মাস্ক পরা নিশ্চিত করতে মোবাইল কোর্ট পরিচালনাসহ কঠোর অবস্থানে যাওয়ার জন্য আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম। গতকাল সচিবালয়ে মন্ত্রিসভা বৈঠকের ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা জানান।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে ভার্চুয়াল মন্ত্রিসভার বৈঠক হয়। গণভবন প্রান্ত থেকে প্রধানমন্ত্রী ও সচিবালয়ের মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীরা ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে বৈঠকে যোগ দেন।
আলোচ্যসূচির বাইরে মন্ত্রিসভা বৈঠকে কোনো আলোচনা হয়েছে কি না, জানতে চাইলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘আজকে ডিজাস্টার নিয়ে একটু আলোচনা হয়েছে। কভিড নিয়ে বলা হয়েছে, আরেকটু শক্ত অবস্থানে যেতে হবে। সংক্রমণ একটু বেড়েও যাচ্ছে মনে হচ্ছে। সেজন্য আরেকটু সতর্কতা নেয়ার জন্য বলা হয়েছে।’
ঢাকায় করোনার বিষয়ে কোনো সেফটি মেজার্স দেখা যাচ্ছে না—এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘এরই মধ্যে আমরা বলে দিয়েছি যাতে ঢাকায়ও বিভিন্ন জায়গায় মোবাইল কোর্ট বা আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী আরেকটু শক্ত অবস্থান নেয়। আশা করি আগামী দুই-তিনদিনের মধ্যে দেখা যাবে।’
গতকালের বৈঠকে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য বৃদ্ধি, পণ্যের অবৈধ বাণিজ্য ও চোরাচালান প্রতিরোধে তথ্য আদান-প্রদানে তুরস্কের সঙ্গে ‘এগ্রিমেন্ট অন কো-অপারেশন অ্যান্ড মিউচুয়াল অ্যাসিস্ট্যান্স ইন কাস্টমস ম্যাটারস’ শীর্ষক চুক্তির খসড়া অনুসমর্থনের প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘চুক্তি হলে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য বাড়বে। দুদেশের মধ্যে প্রাতিষ্ঠানিক যোগাযোগ সুসংহত হবে। আর পণ্যের অবৈধ বাণিজ্য ও চোরাচালান প্রতিরোধে এক দেশ আরেক দেশকে তথ্য দিতে পারবে। দুদেশেরই অর্থনীতি, জনস্বার্থ ও অন্যান্য স্বার্থ কার্যকর হবে। কারণ যেগুলো আমাদের প্রয়োজন আমরা তুরস্ক থেকে আনতে পারব।’
তিনি বলেন, ‘তুরস্কের যে কমপ্লিমেন্টারি আইটেম আসবে সেগুলোকে আমরা অনেক বেনিফিট দিয়ে দেব। যেগুলো সাবস্টিটিউট আইটেম সেগুলোতে আমরা খুব একটা সুবিধা দিতে পারব না। তাই যতক্ষণ পর্যন্ত চুক্তি না হবে ততক্ষণ পর্যন্ত আমরা সেই বেনিফিট পাব না। তুরস্কে গত দুই-তিন বছরে আমাদের ১০০ মিলিয়ন ডলারের বেশি রফতানি কমে গেছে।’
বৈঠকে সরকারি সুবিধাভোগীদের অ্যাকাউন্টিং সিস্টেমে আনতে ‘জাতীয় আর্থিক অন্তর্ভুক্তি কৌশল’-এর বাংলা ও ইংরেজি সংস্করণের খসড়ায় অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, ‘অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন ও দারিদ্র্য বিমোচনের জন্য বিশেষ করে দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে সব ধরনের প্রাতিষ্ঠানিক আর্থিক সেবার আওতায় এনে তাদের জীবন ও জীবিকার মানোন্নয়নের সুযোগ সৃষ্টির লক্ষ্যে এটি প্রণয়ন করা হয়েছে। এর মূল বিষয় হচ্ছে ডিজিটাইজেশন ও ইনোভেশনের মাধ্যমে একটি টেকসই আর্থিক অন্তর্ভুক্তি।’
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ২০২১ থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত পাঁচ বছরের জন্য এ কৌশল প্রণয়ন করা হয়েছে। কৌশলপত্রে সাতটি উদ্দেশ্য ও ১২টি কৌশলগত অভীষ্ট এবং আর্থিক অন্তর্ভুক্তির বিষয়ে ৬৫টি লক্ষ্যমাত্রা সমন্বয় করা হয়েছে। এ কৌশলের পরিকল্পনা বাস্তবায়নে ৫ হাজার ৯৮৬ কোটি টাকা অর্থায়ন প্রাক্কলন করা হয়েছে। করোনাভাইরাসের কারণে আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ বাণিজ্য, পণ্য উৎপাদন ও সরবরাহ ব্যবস্থা বিপর্যস্ত হয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে বিভিন্ন খাতের উত্তরণে সরকার বিভিন্ন প্রণোদনা ও সামাজিক নিরাপত্তামূলক কর্মসূচি গ্রহণ করেছে, যা ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর মাধ্যমে দেয়া হচ্ছে। এতে ৪০ লাখের মতো নতুন অ্যাকাউন্ট হয়ে গেছে। ২০২০ সালের কর্মসূচিগুলো সম্পন্ন হলে আমাদের ফাইন্যান্সিয়াল কভারে পৌঁছবে ৭২-৭৩ শতাংশ। ২০২৫ সালের মধ্যে শতভাগ এ অ্যাকাউন্টিং সিস্টেমের মধ্যে আনার পরিকল্পনা রয়েছে। অ্যাকাউন্টিং সিস্টেমের মধ্যে এলে পরিকল্পনা গ্রহণে সুবিধা হবে।
এছাড়া গতকালের বৈঠকে পাবনার রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের জরুরি অবস্থায় প্রস্তুতি ও সাড়াদানের জন্য একটি নীতিমালার অনুমোদন দেয়া হয়েছে উল্লেখ করে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, রূপপুর পাওয়ার প্লান্টের সেফটি মেজারের জন্য এ পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। আন্তর্জাতিক অ্যাটমিক এনার্জি কমিশনের রিকোয়ারমেন্ট আছে যে এ ধরনের পাওয়ার প্লান্ট করার আগে সেফটি গাইডলাইন ও রেসপন্স প্ল্যান থাকতে হবে। না হলে তারা চালু করার সুযোগ দেবে না। সেজন্য আইএইএর গাইডলাইন-স্ট্রাকচার অনুযায়ী তৈরি করা হয়েছে।’
এ পরিকল্পনার দুটি উল্লেখযোগ্য দিক নিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, প্রস্তাবিত দলিলে পারমাণবিক ও তেজস্ক্রিয়াবিষয়ক জরুরি অবস্থার ধরন, মানে কী ধরনের দুর্যোগ হতে পারে তা আমাদের আসলে সে আইডিয়া নেই। এ গাইডলাইন আমাদের সে আইডিয়া দেবে। এটা মূলত বাংলাদেশে পারমাণবিক ও তেজস্ক্রিয়তাজনিত দুর্যোগ মোকাবেলার জন্য যথাযথভাবে একটা ব্যবস্থাপনার সৃষ্টি হবে।