সাব্বির ফকির, খুলনা থেকেঃ দেশের বৃহত্তম রাষ্ট্রায়ত্ব পাটকল খুলনা শিল্পনগরীর ক্রিসেন্ট ও প্লাটিনাম জুটমিল লীজ নেয়ার জন্য প্রাথমিকভাবে আগ্রহ দেখিয়েছে চীন। ইতিমধ্যে সেদেশের প্রতিনিধি দল জুটমিল ২টি পরিদর্শন করেছেন। শ্রমিকদের বেকারত্ব নিরসনের জন্য সরকারের আমন্ত্রণে সাড়া দিয়ে তারা আগ্রহ দেখিয়েছে। মোংলা বন্দর কাছে হওয়ায় তারা এটাকে পজিটিভ হিসেবে দেখছে। সম্প্রতি সরকার লোকসানে কারনে দেশের ২৫টি পাটকলের উৎপাদন বন্ধ ঘ্ষোনা করে শ্রমিকদের পাওনা বুঝিয়ে দেয়ার কার্যক্রম শুরু হয়েছে। ২৫টি পাটকলের উৎপাদন বন্ধের লোকসানী হিসেবে চিহ্নিত তালিকায় শীর্ষে ক্রিসেন্ট ও প্লাটিনাম জুটমিল।
ক্রমাগত লোকসানের কারণে পাট ও বস্ত্র মন্ত্রণালয় খুলনার ক্রিসেন্ট ও প্লাটিনামসহ ৯টি পাটকল বন্ধ ঘোষণা করে। আদমজী জুট মিলের পর দেশের বৃহত্তম পাটকল ক্রিসেন্ট। তৃতীয় অবস্থানে আছে প্লাটিনাম জুবলী জুট মিল। রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন পাটকলগুলো বন্ধ হওয়ার পর খালিশপুর শিল্পাঞ্চলে তীব্র আন্দোলন গড়ে উঠে। পাট মন্ত্রণালয় গোল্ডেন হ্যান্ডশেকের আওতায় পাওনা পরিশোধের প্রক্রিয়া শুরু করে। কলোনীগুলো থেকে শ্রমিকরা অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছে।
শ্রম অধিদপ্তর, খুলনার পরিচালক মোঃ মিজানুর রহমান জানান, শ্রমিকদের বেকারত্ব নিরসনের জন্য লীজ নেয়ার জন্য সরকার বিভিন্ন দেশের সাথে আলোচনা করে। টার্কি ও চীন আগ্রহ দেখিয়েছে। ইতিমধ্যেই চীন প্লাটিনাম ও ক্রিসেন্ট জুট মিল পরিদর্শন করেছে। তাদের মতামত জানা যায়নি। বন্ধ মিলগুলো চালু করার জন্য সরকার দু’টি বিষয় নিয়ে ভাবছে। প্রথমত পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশীপ ও দ্বিতীয়ত লীজ।
সূত্র জানায়, ক্রিসেন্ট জুট মিলে আবাসনকৃত দুই হাজার ৭৭১ জন শ্রমিকের মধ্যে দুই হাজার ২৩০ জন ও অবসরপ্রাপ্ত এক হাজার ৫৯৩ জনের মধ্যে ৯১৮ জনের এবং প্লাটিনাম জুবলী জুট মিলের আবাসনকৃত দুই হাজার ৭৭৩ শ্রমিকের মধ্যে দুই হাজার ৬৩০ জন এবং অবসরপ্রাপ্ত এক হাজার শ্রমিকের মধ্যে ৬৬২ জন গোল্ডেন হ্যান্ডশেকের অর্থ পেয়েছেন। প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী কোন মিলের শ্রমিকরা এখনও সঞ্চয়পত্র পায়নি।
উল্লেখ্য, খালিশপুর এলাকায় ১১৩ একর জমির ওপর ১৯৫২ সালে ক্রিসেন্ট জুট মিলের যাত্রা শুরু হয়। মিলের মালিকানা ছিল আগাখান গ্রুপ অব ইন্ডাষ্ট্রিজ, মেসার্স র্যালী ব্রাদার্স ও জেমস মেকলি এন্ড সন্স লিঃ। যাত্রার শুরুতে আট হাজার ৩১৩ জন শ্রমিক কর্মরত ছিল। এক হাজার ৩৩৬ টি তাঁত চালু ছিল। অপর দিকে ১৯৫৮ সালে একই এলাকায় ৭৯ একর জমির উপর প্লাটিনাম জুবলী জুট মিলের উৎপাদন শুরু হয়। ইপিআইডিসি ও আগাখান গ্রুপ অব ইন্ডাষ্ট্রিজ যৌথভাবে মিলের সূচনা লগ্নে মালিক ছিলেন। পরবর্তীতে ইপিআইডিসি একক মালিকানা লাভ করে। ৯৫৭টি তাঁতে বার্ষিক ৮০ মেট্রিক টন উৎপাদন হত। বঙ্গবন্ধু সরকার ১৯৭২ সালে ২৬ মার্চ মিলগুলো জাতীয়করণ করেন।