বিশেষ প্রতিনিধি।। সিলেট বিভাগের সকল হাওরজুড়ে এখন সোনালি ধান। মৌ মৌ গন্ধে ভরে উঠেছে চারদিক। যেন হাওরের বুকে কৃষকের স্বপ্নের ইরি-বোরো ধান ঢেউ খেলছে। নতুন ধান ঘরে তোলার স্বপ্নে বিভোর কৃষকরা। হাওরপারের গ্রামসমূহে চলছে বৈশাখি তোলার প্রস্তুতি। এক সপ্তাহের মধ্যেই সকল হাওরে কাটা-মাড়াইয়ের ধুম পড়বে। এবার সিলেট বিভাগের ৪ জেলার ছোট-বড় ৪২৪টি হাওরে ৪ লাখ ৮৩ হাজার ৭০৫ হেক্টর জমিতে চাষাবাদ করা হয়েছে। আবাদকৃত জমি থেকে ১৯ লাখ ৩৭ হাজার ৯৭৮ মেট্রিক টন চাল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে কৃষি বিভাগ। কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, চলতি ইরি-বোরো মৌসুমে সিলেট বিভাগের সকল হাওরে ৪ লাখ ৮৪ হাজার ৩২৮ হেক্টর জমিতে আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। তবে, আবাদ হয়েছে ৪ লাখ ৮৩ হাজার ৭০৫ হেক্টর জমি। আবাদকৃত জমির মধ্যে রয়েছে হাইব্রিড ১ লাখ ২৬ হাজার ৪১০ হেক্টর। উচ্চফলনশীল ৩ লাখ ৪৯ হাজার ২৮২ হেক্টর ও স্থানীয় জাতের ধান ৮ হাজার ১৩ হেক্টর।
সিলেট বিভাগের মধ্যে সর্বোচ্চ আবাদ হয়েছে সুনামগঞ্জ জেলায়। এ জেলায় মোট আবাদকৃত জমির পরিমাণ ২ লাখ ২৩ হাজার ৩৩০ হেক্টর। শুধু সুনামগঞ্জ জেলা থেকেই ৮ লাখ ৮৫ হাজার ২৯৯ মেট্রিক টন চাল উৎপাদনের টার্গেট করেছে কৃষি বিভাগ। কৃষি বিভাগ সূত্র জানায়, সুনামগঞ্জ জেলার ৪২টি বড় ও ১০৯টি ছোট হাওরসহ মোট ১৫১টি হাওরে আবাদকৃত জমির মধ্যে ৫৭ হাজার ২১০ হেক্টর জমিতে হাইব্রিড, ১ লাখ ৬৩ হাজার ১২৯ হেক্টর জমিতে উচ্চফলনশীল ও ২ হাজার ৯৯১ হেক্টর জমিতে স্থানীয় জাতের ধান আবাদ করা হয়েছে। হবিগঞ্জ জেলার ২৯টি বড় ও ২৫টি ছোট হাওরসহ মোট ৫৪ হাওরে আবাদ হয়েছে ১ লাখ ২২ হাজার ১৩০ হেক্টর জমি। এর মধ্যে ৪৮ হাজার ৩৬০ হেক্টর হাইব্রিড, ৭৩ হাজার ৬৮০ হেক্টর উচ্চ ফলনশীল ও ৯০ হেক্টর স্থানীয় জাতের ধান। হবিগঞ্জ জেলার হাওর থেকে ৫ লাখ ১৮ হাজার ১৫১ মেট্রিক টন চাল উৎপাদনের টার্গেট রয়েছে। সিলেট জেলার ৩৯টি বড় ও ১৭৪টি ছোট হাওরসহ মোট ২১৩ হাওরে আবাদ করা হয়েছে ৮১ হাজার ৯০০ হেক্টর। এর মধ্যে রয়েছে ১২ হাজার ৭০০ হেক্টর হাইব্রিড, ৬৪ হাজার ৬৩০ হেক্টর উচ্চ ফলনশীল ও ৪ হাজার ৫৭০ হেক্টর জমিতে স্থানীয় জাতের ধান আবাদ করা হয়।
সিলেট জেলার হাওর থেকে ৩ লাখ ১৬ হাজার ৫০৬ মেট্রিক টন চাল উৎপাদনের টার্গেট করেছে কৃষি বিভাগ। মৌলভীবাজার জেলার শুধুমাত্র ৬টি বড় হাওরে আবাদ করা হয়েছে ৫৬ হাজার ৩৪৫ হেক্টর জমি। আবাদকরা জমির মধ্যে রয়েছে ৮ হাজার ১৪০ হেক্টর হাইব্রিড, ৪৭ হাজার ৮৪৩ হেক্টর উচ্চ ফলনশীল ও ৩৬২ হেক্টর জমিতে স্থানীয় জাতের ধান আবাদ করা হয়েছে। মৌলভীবাজার জেলা থেকে ২ লাখ ১৮ হাজার ২২ মেট্রিক টন চাল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। সিলেট বিভাগের ৩৯ উপজেলায় বড় হাওর ১১৬টি ও ৩০৮টি ছোট হাওরসহ মোট হাওরের সংখ্যা ৪২৪টি। সুনামগঞ্জ ও সিলেট জেলার বিভিন্ন হাওর ঘুরে সোনালি ধানের চিত্র লক্ষ্য করা গেছে। এবার ইরি-বোরো মৌসুমের মধ্যে মাঘ মাসেই বৃষ্টির দেখা মিলে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সিলেট বিভাগের অতিরিক্ত পরিচালক দিলীপ কুমার অধিকারী জানিয়েছেন, বিচ্ছিন্ন ভাবে ২/৩ দিন আগেই ধান কাটা শুরু হয়েছে। আগামি ১৫ এপ্রিল থেকে সকল হাওরে পুরোদমে কাটা-মাড়াই শুরু হবে। ধান কাটা শেষ করতে পুরো এপ্রিল মাস লেগে যাবে। তিনি বলেন, এবার বাম্পার ফলন হয়েছে। গরম বাতাসে কয়েকটি হাওরে সামান্য চিটা হলেও লক্ষ্যমাত্রা উৎপাদনে তেমন প্রভাব ফেলবেনা।