এ্যাডঃ জহিরুল ইসলাম মৃধা
ওকালতি আর প্রেমপ্রীতি কখনো জোর করে করা যায় না এবং একা একা করাও সম্ভব হয় না। অবশ্যই দুটি পক্ষ থাকতে হবে এছাড়া সম্ভব নয়। কে কাকে ভালোবাসবে! পছন্দ – অপছন্দ, ভালোবাসা – ঘৃনা যেমন একজন মানুষের হৃদয়ের অন্তস্তল থেকে তিলে তিলে সৃষ্টি হয় ঠিক তেমনি একজন ক্লায়েন্ট তার আইনি অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য কেমন আইনজীবী নিয়োগ করবেন তাও ক্লায়েন্ট তার বসতগৃহ থেকে মনে মনে নির্ধারন করেই বের হন।
একজন ক্লায়েন্ট আর একজন এ্যাডভোকেটের মধ্যে সম্পর্ক হতে হবে অকৃত্রিম এবং শ্রদ্ধাপূর্ন আর এটা যতদিন বলবত থাকবে ততদিন নিয়োজিত আইনজীবী, ক্লায়েন্টের মামলা পরিচালনা সুন্দর ভাবে পরিচালনা করতে পারবেন আর এই অকৃত্রিম সম্পর্কে যখন কৃত্রিমতার বীজ (যে কোন পক্ষ ক্লায়েন্ট অথবা আইনজীবী) বপন করবেন আর সেই বীজ যখন মনের অজান্তেই অংকুরিত হবে তখন আর সেই ক্লায়েন্টের মামলা সুন্দর মতো পরিচালনা করা একজন আদর্শবান আইনজীবীর পক্ষে সত্যিই খুব কঠিন হয়ে পরে। মামলা আইনজীবীর প্রান আর ক্লায়েন্ট মামলার প্রান ।
একটি মামলা একজন আইনজীবীরকে তার সন্তানের মতো ভালোবাসতে হয় যেমনটা ভালোবাসে পিতা মাতা তাদের সন্তানকে। আমি গ্রামের ছেলে। গ্রামে জন্মগ্রহণ করেছি । গ্রামের মায়েরা মাটির চুলায় ভাত রান্না করে। আমার মাকে ও মাটির চুলায় ভাত রান্না করতে দেখছি। একটি মাটির চুলায় তিনটি ঝিক থাকে তার মধ্যে যদি একটি ঝিক ভেঙে যায় তাহলে ঔ ভাতের পাত্রটি আর চুলার উপরে স্থির থাকতে পারে না পাত্রটি কাত হয়ে মাটিতে পরে যায়। ঠিক তেমনি ওকালতি নামক পাত্রটিও চুলার ঝিকের মতোই তিনটি ঝিকের উপরে দাড়িয়ে থাকে আর সেই ঝিক তিনটি হলো ১. পর্যাপ্ত সময় ২. প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট ৩. নুন্যতম খরচ। একটি মামলা পরিচালনা করতে গেলে যে সময় প্রয়োজন সেই সময়টা একজন আইনজীবীকে দিতে হবে। মামলায় জয়লাভ করার জন্য যে ডকুমেন্টস প্রয়োজন তা যথাসময়ে সরবরাহ করতে হবে এবং মামলা পরিচালনা করতে গিয়ে যে নির্ধারিত খরচ গুলো আছে তা বহন করতে হবে। এই তিনটি বিষয়ের মধ্যে যেকোনো একটিতে ঘাটতি থাকলে মামলায় জয়লাভ করা একজন আইনজীবীর পক্ষে সত্যিই খুব কঠিন। একটি মামলায় পরাজিত হলে পক্ষ পরাজিত হয় না, পরাজিত হয় একজন আইনজীবী।
আর বিজয়ী হলেও পক্ষ বিজয়ী হয় না বিজয়ী হয় ঔ মামলা পরিচালনাকারী নিয়োজিত আইনজীবী এবং বিজয়ী হয় একজন আইনজীবীর বহুদিনের লালিত স্বপ্ন। একটি বিবাহিত দম্পতির বিবাহের বহুদিন পরে তারা যখন সন্তানের পিতা মাতা হওয়ার তৃপ্তিময় আনন্দ অনুভব করে ঠিক তেমনি একজন আইনজীবী তার একটি মামলায় বিজয়ী হলে সেরকমই তৃপ্তিদায়ক আনন্দ অনুভব করে। পৃথিবীতে যদি পাচটি কঠিন ও কষ্টের পেশা থেকে থাকে তার মধ্যে আইন পেশা একটি। বলা যায় ক্লায়েন্টর মামলা নিয়ে ২৪ ঘন্টাই টেনশনে থাকতে হয়। আগামী কাল যে মামলায় পদক্ষেপ নিতে হবে সেই মামলার টেনশনে রাতের সুমধুর ঘুম হারাম হয়ে যায়। এ কষ্ট পেশাজীবির বাহিরে কেউ বুঝবে না। বুজবার কথাও নয়। একজন আইনজীবীর গায়ে সাদা শার্ট থাকে, শার্টের নিচে গেঞ্জি থাকে, শার্টের উপরে কালো কোর্ট থাকে তার উপরে গাউন থাকে এরসাথে থাকে মমলায় জয় পরাজয়ের পাহাড় সমান টেনশন। প্রচন্ড গরমে শিরি বেয়ে কখনো ৫ তলায় কখনো ১০ তলায় মামলা শুনানি করতে যেতে হয় আর তখন পরনের শার্ট গায়ের লবনাক্ত ঘামে ভিজে যায় ।
আর সেই শার্ট আবার শরীরের তাপেই শুকায়। তারপর কোর্টের কাজ শেষ করে বাসায় আসার পরে বাসার লোকজন শার্টের পকেটের খবর নেয় কিন্তু শার্টটি যার শরীরের ঘামে ভিজে গিয়ে আবার শুকিয়েছে তার খবর খুব কম লোকেই নেয়। এই হলো আইন পেশা আর এ হলো নির্মম বাস্তবতা!! সকলের জন্য শুভকামনা । ভালোবাসা অবিরত ভালো থাকুক সকল আইনজীবী, ভালো থাকুক ক্লায়েন্ট এবং ভালো থাকুক আইন পেশার সাথে জড়িত বিচারক, আইনজীবী, ক্লায়েন্ট, ক্লার্ক এবং পরিবারের সকলে।।
লেখক।।
মোঃ জহিরুল ইসলাম মৃধা
এ্যাডভোকেট
জজকোর্ট, বরিশাল।
মোবাঃ 01710021841