কামরুল হাসান সোহাগ
দুনিয়ায় অন্য কোনো জাতির ইতিহাসে আমাদের মতো শোকাবহ আগস্ট আছে কিনা জানা নেই। আমাদের জাতীয় জীবনে আগস্ট দুর্বিষহ ও গভীরতম শোকের মাস।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বাঙালির প্রিয় নেতা, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তাঁর সহধর্মিণীসহ পরিবারের প্রায় সকলকেই ঘাতক চক্র নৃশংসভাবে হত্যা করেছিল। নরপিশাচরা বাঁচতে দেয়নি নিষ্পাপ শিশু রাসেলকেও। আমি শুরুতেই বঙ্গবন্ধু এবং তার পরিবারের সদস্যদের ঘৃন্য হত্যাকান্ডের নিন্দা জানাই, ঘৃণা জানাই। একই সঙ্গে গভীর শ্রদ্ধা ও বিনম্রচিত্তে স্মরণ করি বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারের সকল শহীদদের।
এ মাসটি আমাদের জন্য দুঃখের, লজ্জা এবং অসহনীয় কষ্টের। যত দিন যাচ্ছে গবেষক, রাজনীতি বিশ্লেষক, ইতিহাসবিদগণ এই হত্যাকাণ্ডের পেছনের উদ্দেশ্যকে তত্ত্ব-উপাত্ত সংগ্রহের মাধ্যমে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে তুলে ধরবার চেষ্টা করছেন, যথেষ্ট না হলেও সময় লাগবে প্রকৃত সত্য উদঘাটনের। তবে আমি মনে করি বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মধ্য দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাশ্রিত রাজনৈতিক প্রবাহ বা ধারাকে আমূল দিক পরিবর্তনের একটি কুপ্রচেষ্টা ছিল। শুধু দিক পরিবর্তন বলি কেন বরং বলা যায়, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও দর্শনাশ্রিত গতিধারা চিরতরে রুদ্ধ করে বাংলা ও বাঙালির চিরায়ত রাজনীতি, সংস্কৃতি, ইতিহাস ও ঐতিহ্য বিরোধী একটি উদ্ভট দর্শন এবং প্রক্রিয়া চালু করবার অপচেষ্টা হয়েছে।
হাজার বছরের শৃঙ্খল ভেঙে বাঙালি জাতিকে স্বাধীনতা এনে দিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু। পদ্মা-মেঘনা-যমুনা এবং বঙ্গোপসাগরের কূলে কূলে যে জনপদের বাস সেই জনপদের সংস্কৃতিতে সর্বত্রভাবে অনুধাবন এবং আত্মস্থ করেছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব। তাঁর রাজনৈতিক চর্চায় তিনি এই জনপদের মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তিকে জীবন দর্শন হিসাবে গ্রহণ করেছিলেন। হয়েছিলেন ইতিহাসের মহানায়ক।
মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারী রাজাকার আলবদর, তাদের আশ্রয় দানকারী দোষর এবং কিছু বিপথগামী সেনা সদস্য দেশীয় ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রকারীদের এজেণ্ডা হিসাবে এই মহানায়ককে নিষ্ঠুর, বর্বরভাবে হত্যা করেছিল। এ শুধু বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা নয়, বাংলাদেশের হূদয়কে কেটে-ছিঁড়ে রক্তাক্ত করা।
পনের আগস্ট পঁচাত্তর সালের সকাল ছিল রাতের চেয়েও অন্ধকার। জাতির সৌভাগ্য সেদিনের সেই নৃশংসতার শিকার থেকে সৌভাগ্যক্রমে বেঁচে গিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধুর জ্যেষ্ঠ সন্তান শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা। এটা বাঙালি জাতির জন্য ছিল মহান আল্লাহর বিশেষ রহমত। শেখ হাসিনা তার পিতার অসমাপ্ত কাজগুলো করতে পারছেন বলেই আজ আমরা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, দর্শন, আদর্শকে আঁকড়ে ধরে বাঙালি জাতীয়তাবাদের পথে চলতে পারছি। তিনি বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার করেছেন এবং বিচার কার্যকরও করেছেন। তিনি মুক্তিযুদ্ধ ও মানবাধিকারের শত্রুদের দৃষ্টান্তমূলক বিচারও সম্পন্ন করে চলেছেন এবং তা কার্যকরীও করছেন। এটা কিছু স্বাধীনতা বিরোধী ও তাদের দোশর ছাড়া দেশের সকল মানুষের কাঙ্খিত ছিল।
পঁচাত্তরের পনেরই আগস্টের পর থেকে শোককে শক্তিতে পরিণত করার যে প্রক্রিয়া চলছে সেই শক্তিতেই আজ আমরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বিশ্বমঞ্চে বাঙালি জাতি হিসাবে শির উঁচু করে দাঁরিয়েছি। শেখ হাসিনার নেতৃত্বেই বাংলাদেশ নিকট ভবিষ্যতে উন্নত দেশের তালিকায় নাম লেখাবে।
লেখক- সহ সম্পাদক, ডেইলি রাঙা প্রভাত