কবিতা, তোমাকে বলছি
– বিজয় বিক্রম
কবিতা, ভালো আছো নিশ্চয়।
তবে, যেভাবেই থাকো, জানার আগ্রহ নেই খুব একটা।
তোমার ভালো থাকা বা না থাকায় কি-ই বা করতে পারি?
তুমি ভালো থাকলেই কেবল ভিতরে অনুভব করি- এক অজানা নির্মল প্রশান্তি।
এখনো তোমায় সেই আগের মতোই ভালবাসি,
হয়তোবা এমনি করেই ভালোবেসে যাব অনন্তকাল।
তোমার অবহেলা, এড়িয়ে চলা, ঘৃণা – সীমাহীন কষ্টের উদ্রেক ঘটায়।
এখনো চোখের সামনে জ্বলজ্বল করছে,
তোমাকে প্রথম দেখার, ভালবাসার মুহুর্ত।
কৈশোর পেরুনো এক তরতাজা যুবক,
কোন এক চৈত্রের তাপদাহ গোধুলী বেলায়
ধুলোয় রাংগা ধুসোর রঙের কেশ –
দোলাতে দোলাতে তোমাকে চোখের সামনে উড়তে দেখলাম।
চারিদিকে বেজে উঠল এক বাঁধভাঙ্গা প্রেমের দামামা।
ওই দিনের কথাও ভুলে যাও নি তো?
উষ্ণ শীতের এক ভোরে, তুমি যখন সরশে ফুলে মুখ লুকিয়ে,
আমার চোখে ছুড়েছিলে এক চিলতে মনকাড়া হাসি।
পাল তোলা নৌকায় যখন
পালের ঢেউয়ে দোল খেতে খেতে –
নীল আকাশের সাথে হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খাচ্ছিলে,
আমি নি:ষ্পলক তোমাকেই দেখে যাচ্ছিলাম।
সেদিনের সেই বসন্ত বেলায়,
কোকিলের পাগল করা গানে,
তোমার আলতা রাংগা পায়ের নুপুর দোলা নৃত্য – আমাকে মোহিত করে রাখল সারাটিক্ষণ।
ওবারের বর্ষা বেলায় তোমাকে দেখেছিলাম,
একটি হাস্নাহেনার ডালে কতগুলো প্রজাপতির সাথে ভিজে জুবুজুবু হতে।
সেভাবেই তোমাকে ভালো লেগেছিল আরো বেশি।
তোমাকে প্রথম দেখেছিলাম মাইকেল,রবি, নজরুল, জীবনানন্দের সাথে।
তারপর -কামিনী ,সুকুমার, সামসুর রহমান,সুফিয়া কামালের সাথে,
নির্মলেন্দু গুণ, সুনীলবাবু, সামসুল হক –
আরো কত জন যে তোমাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখত!
খুব হিংসে হত।
যখন তোমাকে কাছ থেকে দেখলাম,
নিজেকে খুব ভাগ্যবান মনে হল।
কবিতা, সেই তুমি বড় আচেনা হয়ে গেলে।
বেমালুম ভুলে গেলে আমাকে।
তারপরেও ভালো লাগে, যখন –
তোমাকে দেখি ভীষ্মদেবের সাথে একান্তে মধুর ক্ষণ রচণা করতে।
এখনো তোমাকে দেখতে ভালো লাগে,
যখন কবিতা-আশ্রমের কবি মুহাম্মদ সাঈদের হাত ধরে কাশবনে গড়াগড়ি যাও।
কবিতা, ভালো থেক তোমার সত্যিকার ভালোবাসার সাথে।
এ ভালোলাগা টুকু কেড়ে নিও নাকো।