নিজস্ব প্রতিবেদক:- সরকারি ভাতা প্রদানের বিনিময়ে অর্থ আদায়সহ সব ধরনের ভাতাবাণিজ্য বন্ধে মাইকিং করে উন্মুক্ত পদ্ধতিতে জেলার বাবুগঞ্জ উপজেলার ১নং বীরশ্রেষ্ঠ জাহাঙ্গীর নগর ইউনিয়নের ভাতাপ্রার্থী বাছাই করা হয়েছে।
বুধবার জাহাঙ্গীর নগর ইউনিয়ন পরিষদের সামনে উপস্থিত সহ¯্রাধিক ভাতাপ্রার্থীর মধ্য থেকে বয়স্ক, বিধবা ও প্রতিবন্ধী ভাতার জন্য সর্বাপেক্ষা উপযুক্ত ২ শতাধিক নতুন ভাতাভোগী উন্মুক্ত প্রক্রিয়ায় নির্বাচন করা হয়েছে।
উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তার সহায়তায় বাবুগঞ্জে এ অনন্য উদ্যোগ নিয়েছে বাবুগঞ্জ উপজেলা পরিষদ। বুধবার সকালে উপজেলার জাহাঙ্গীর নগর ইউনিয়নে উন্মুক্ত পদ্ধতিতে ওই ভাতাভোগী বাছাই কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন উপজেলা চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ সভাপতি কাজী ইমদাদুল হক দুলাল।
এসময় সেখানে অনুষ্ঠিত সমাবেশে জাহাঙ্গীর নগর ইউপি চেয়ারম্যান সরদার মোঃ তারিকুল ইসলাম তারেকের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান ইকবাল আহমেদ আজাদ, উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) নুসরাত জাহান খান, সমাজসেবা কর্মকর্তা মাহমুল হাসিব, বরিশাল বিমান বন্দর প্রেসক্লাব সভাপতি আরিফ আহমেদ মুন্না ও আগরপুর পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ মানবেন্দ্র বালো।
উল্লেখ্য, গত ২০ ফেব্রæয়ারি দেহেরগতি ইউনিয়নে বাছাইয়ের মাধ্যমে বাবুগঞ্জ উপজেলায় প্রথমবারের মতো ওই উন্মুক্ত যাচাই-বাছাই কার্যক্রমের শুভ সূচনা করেন উপজেলা চেয়ারম্যান কাজী ইমদাদুল হক দুলাল। আগে বিভিন্ন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান-মেম্বার তাদের মনোনীত লোকদের তালিকা করে সমাজসেবা অধিদপ্তরে পাঠিয়ে তাদের নামেই ভাতা চালু করতে বাধ্য করতেন। ফলে অনেক চেয়ারম্যান-মেম্বারদের বিরুদ্ধেই বয়স্ক, বিধবা ও প্রতিবন্ধী ভাতাভোগী নির্বাচনে সরাসরি ৩ থেকে ৫ হাজার টাকা ঘুষ গ্রহণ করা ছাড়াও স্বজনপ্রীতির অভিযোগ ছিল দীর্ঘদিনের। এসব অনিয়ম দূর করতেই বাবুগঞ্জে মাইকিং করে প্রকাশ্য জনসম্মুখে ওই স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় উন্মুক্ত যাচাই-বাছাইয়ের উদ্যোগ নেয় বাবুগঞ্জ উপজেলা পরিষদ ও সমাজসেবা অধিদপ্তর।
এ প্রসঙ্গে উপজেলা চেয়ারম্যান কাজী ইমদাদুল হক দুলাল বলেন, ‘দুর্নীতিমুক্ত বাবুগঞ্জ গড়ার অঙ্গীকার নিয়ে আমি উপজেলা চেয়ারম্যান হয়েছি। অসহায়-দুঃস্থ মানুষের জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দেয়া বিনামূল্যের সরকারি বিভিন্ন ভাতা যাতে বিত্তশালীরা কিনে নিতে না পারে এবং যাতে প্রকৃত হকদার মানুষের হাতে পৌঁছানো যায় সেজন্যই উন্মুক্ত প্রক্রিয়ায় বাছাইয়ের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তার সৎচিন্তা ও আন্তরিক প্রচেষ্টায় এই উদ্যোগ বাস্তবায়ন সম্ভব হয়েছে। চলমান প্রক্রিয়ায় বাবুগঞ্জ উপজেলায় মোট ১ হাজার ৩৯০ জন নতুন বয়স্ক, বিধবা ও প্রতিবন্ধী বাছাই করে তাদের ভাতা প্রদান করা হবে।’ উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মাহমুল হাসিব বলেন, ‘উন্মুক্তভাবে বাছাইয়ের জন্য আগে থেকেই সমাজসেবা অধিদপ্তরের দিকনির্দেশনা ছিল। তবে মাঠপর্যায়ে সংশ্লিষ্টদের অসহযোগিতার কারণে অনেক উপজেলাতেই এই স্বচ্ছ প্রক্রিয়াটি বাস্তবায়ন করা সম্ভব হচ্ছিল না। তবে বাবুগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যানের সততা ও নীতিগত অবস্থানের পাশাপাশি উপজেলা প্রশাসন এবং উপজেলা পরিষদের ২ ভাইস চেয়ারম্যান, ৬ ইউপি চেয়ারম্যান ও সাংবাদিকদের আন্তরিক সহযোগিতার কারণে এবার এই উদ্যোগ বাস্তবায়ন সম্ভব হয়েছে।’ বুধবার উপজেলার জাহাঙ্গীর নগর ইউনিয়নে ওই উন্মুক্ত বাছাই কার্যক্রম উদ্বোধনকালে ইউনিয়ন পরিষদের সকল সদস্যরা ছাড়াও উপজেলা যুবলীগ নেতা আনিসুর রহমান মোল্লা, ছাত্রলীগ নেতা খন্দকার রাজু আহমেদ, সাংবাদিক আল-আমিন হাওলাদার প্রমুখসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশা ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। এদিকে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও সমাজসেবা কর্মকর্তার এ মহতী উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন উপজেলার সর্বস্তরের মানুষ। যাচাই-বাছাইয়ে আগত ভাতাপ্রার্থীরাও স্বচ্ছ প্রক্রিয়ার এ উন্মুক্ত বাছাই কার্যক্রম প্রত্যক্ষ করে সন্তুষ্টি এবং আয়োজকদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন।