বরিশাল অফিস:- বরিশালে কমপক্ষে একডজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক করোনাভাইরাস আতঙ্কে ব্যক্তিগত চেম্বারে রোগী দেখা বন্ধ করে দিয়েছেন। গত তিনদিন থেকে চেম্বারে আসা বন্ধ রেখেছেন তারা । তাদের ব্যবহৃত মোবাইল ফোনও বন্ধ রয়েছে। ফলে চরম ভোগান্তিতে পরেছেন ঋতু পরিবর্তনের ফলে জ্বর ও কাশিতে আক্রান্ত রোগী ও তাদের স্বজনরা। হাসপাতালের বহির্বিভাগে গিয়েও এসব রোগীরা বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের দেখা পাচ্ছেন না।
বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা এতোদিন যেসব ডায়াগনস্টিক সেন্টার কিংবা ক্লিনিকে চেম্বার করেছেন সেখানকার দায়িত্বশীল সূত্রগুলো জানিয়েছে, করোনাভাইরাস আতঙ্কে চিকিৎকরা চেম্বারে আসা বন্ধ করে দিয়েছেন। তারা দাবি করেছেন, এসব চিকিৎসকদের বেশিরভাগের বয়স ষাটোর্ধ্ব। তাদের মধ্যে কয়েকজন নিজেরাই হৃদরোগী। বাইপাস অপারেশনও হয়েছে ২/১ জনের। করেনাভাইরাস নিয়ে জীবনের ঝুঁকি এড়াতে তারা আপাতত চেম্বারে রোগী দেখা বন্ধ করে দিয়েছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত শনিবার থেকে নগরীর ল্যাব এইড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে রোগী দেখা বন্ধ করে দিয়েছেন গাইনি বিশেষজ্ঞ প্রফেসর ডাঃ শিখা সাহা এবং মেডিসিন, লিভার ও পরিপাকতন্ত্র রোগ বিশেষজ্ঞ ডাঃ স্বপন কুমার সরকার। নগরীর আলেকান্দা কাজীপাড়া এলাকার বাসিন্দা আরিফুর রহমান জানান, তার ছয় বছর বয়সের এক ভাগ্নে অসুস্থ হওয়ার পর শনিবার রাতে শিশু রোগ বিশেষজ্ঞ ডাঃ হামিদ শেখের ব্যক্তিগত চেম্বারে দেখানো হয়। ডায়াগনস্টিক পরীক্ষার রিপোর্ট নিয়ে ব্যবস্থাপত্র করার জন্য রবিবার সকালে চিকিৎসকের চেম্বারে গিয়ে তিনি জানতে পারেন, ওই চিকিৎসক আর চেম্বারে আসবেন না। আরিফুর রহমান জানান, ডাঃ হামিদ শেখের ব্যক্তিগত কর্মচারীরা চিকিৎসকের সঠিক অবস্থান জানাতেও অস্বীকার করেন। ফলে আরিফুর রহমানের ভাগ্নে চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
নগরীর ইসলামী ব্যাংক হাসপাতাল, অ্যাপোলো ডায়গনস্টিক সেন্টার, বেলভিউ ডায়গনস্টিক সেন্টারসহ বিভিন্ন ক্লিনিক ও ডায়গনস্টিক সেন্টারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডাঃ গোলাম মাহমুদ সেলিম ও ডাঃ মজিবুর রহমান, গ্যাস্ট্রোলজি বিশেষজ্ঞ ডাঃ আবুল কালাম আজাদ, গাইনি বিভাগের ডাঃ তানিয়া আফরোজ ও প্রফেসর শিখা সাহা, হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ প্রফেসর ডাঃ রনজিৎ খা, নিউরোলজি বিশেষজ্ঞ প্রফেসর ডাঃ আনোয়ার হোসেন বাবলু, লিভার ও পরিপাকতন্ত্র রোগ বিশেষজ্ঞ ডাঃ স্বপন কুমার সরকার, নিউরোলজিস্ট ডাঃ মোঃ জাকির হোসেন গত কয়েকদিন পর্যন্ত করোনাভাইরাস আতঙ্কে ব্যক্তিগত চেম্বারে রোগী দেখা বন্ধ করে দিয়েছেন।
অ্যাপোলো ডায়গনস্টিক সেন্টারের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, তাদের প্রতিষ্ঠানের কয়েকজন চিকিৎসক মৌখিকভাবে বলে গেছেন তারা কয়েকদিন চেম্বারে আসবেন না। তবে চিকিৎসকরা এর সঠিক কোন কারণ জানাননি। একই কথা জানিয়ে ইসলামী ব্যাংক হাসপাতালের এক কর্মকর্তা বলেন, সেখানকার কয়েকজন চিকিৎসক তাদের নিরাপত্তার কথা জানিয়ে শনিবার হাসপাতালের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলে রবিবার থেকে তারা চেম্বার না করার কথা জানিয়েছেন।
বিষয়টি নিয়ে বরিশালের সিভিল সার্জন ডাঃ মনোয়ার হোসেন চরম উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তিনি জরুরি রোগীদের সরকারি হাসপাতালে ভর্তি এবং প্রয়োজনে হটলাইন নম্বরে যোগাযোগ করার জন্য পরমর্শ দিয়েছেন।