রফিকুল ইসলাম রনি।। বরিশালের বাবুগঞ্জ উপজেলার মানবিক ইউএনও মোঃ ফারুক আহমেদ বদলিজনিত কারণে বিদায় নিচ্ছেন। বাবুগঞ্জে দায়িত্বভার গ্রহণের পর থেকেই তার মানবিকতা, সেবার উদারতা এবং জনসাধারণের পাশে দাড়ানোর অদম্য প্রবণতা বাবুগঞ্জ বাসীর হৃদয়ে অমলিন ছাপ রেখে গেছে। সাধারণ মানুষের সমস্যা, নদী ভাঙ্গন ক্ষতিগ্রস্ত ও অসহায়দের পাশে দাঁড়ানো—এসবকে তার দায়িত্বে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে তিনি আদর্শ তৈরি করেছেন। বাবুগঞ্জের সিংহভাগ রাস্তা ঘাট, পুল- কালভাট স্কুল কলেজ, মসজিদ- মাদ্রাসা ও মন্দিরের উন্নয়ন কাজ সংস্করণ করেছেন তিনি।
বিদায়ের পাঁচ দিন আগে সর্বশেষ নজরকাড়া উদাহরণ দৃষ্টি স্থাপন করেছেন তিনি। উপজেলার জাহাঙ্গীর নগর ইউনিয়নের ইসলামপুর গ্রামের শারীরিক প্রতিবন্ধী মোঃ নুরে আলম মৃধার ১পুত্র শারীরিক প্রতিবন্ধী এবং তার স্ত্রী দৃষ্টি প্রতিবন্ধী। একই পরিবারে ৩ জন প্রতিবন্ধী ব্যক্তির মানবেতর বসবাসের কথা ও তাদের অবস্থা ইউএনও ফারুক আহমেদ শুনে তাদেরকে তৈরি করে দিয়েছেন পাকা ঘর। তাদের দিয়েছেন হুইল চেয়ার। এরকম আরো ঘরহীন লোকদের তৈরি করে দিয়েছেন পাকা ঘর।
মোঃ নুরে আলম মৃধা জানিয়েছেন, ইউএনওর আন্তরিক উদ্যোগের কারণে আজ স্থায়ীভাবে বসবাসের জন্য ঘর পেয়েছি। তিনি আমাদের কাছে চীর স্মরণীয় হয়ে থাকবেন। তার জন্য রইলো দোয়া ও ভালোবাসা।
ফারুক আহমেদ ফেসবুকে এই মানবিক অভিজ্ঞতা শেয়ার করেছেন, যা স্থানীয় মানুষের মনে দারুণ অনুপ্রেরণা যুগিয়েছে। তিনি নিজে অসহায় পরিবারটির পাশে দাঁড়িয়ে সাহস দিয়েছেন—যা মানবিকতার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হয়ে দাঁড়িয়েছে।
যদিও মোঃ ফারুক আহমেদ এর বদলির আদেশ এসেছে, স্থানীয়রা আশা প্রকাশ করছেন, তার মানবিক ও সেবামূলক প্রচেষ্টা প্রশাসনের অন্যান্য কর্মকর্তাদের মধ্যেও ধারাবাহিকভাবে অব্যাহত থাকবে।
এই বিদায় শুধুই একজন কর্মকর্তা ছাড়ার ঘটনা নয়, এটি বাবুগঞ্জের মানুষের মনে মানবিকতা, সহমর্মিতা এবং সেবার শক্তিশালী বার্তা হিসেবে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে।
ইউএনও ফারুক আহমেদ এর এই মানবিক অবদান বাবুগঞ্জের মানুষের জন্য অনুপ্রেরণার বাতিঘর, যা বহু বছর ধরে উদ্ভাসিত থাকবে।
বিদায়ী বাবুগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ ফারুক আহমেদ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তার নিজের মনের কথা ব্যক্ত করে সালাম জানিয়ে লিখেছেন- অমিত সম্ভাবনার আধার বাবুগঞ্জ উপজেলা থেকে অবশেষে বিদায়ের বেলা চলে এসেছে।
সমাপ্ত হলো ০১/১২/২০২৪ থেকে ০৩/১২/২০২৫ তারিখ অর্থাৎ ১ বছরের এই পথচলা। আপনাদের সকলের দোয়া ও ভালোবাসায় সিক্ত হয়েই বিদায় নিচ্ছি।
আইন কানুনের মধ্য থেকে সবাইকে সেবা দিতে সর্বদা সচেষ্ট ছিলাম। বিভিন্ন সীমাবদ্ধতার কারণে অনেকের ছোট ছোট কিছু দাবী হয়তো পূরণ করতে পারি নি, কিন্তু তাতে আন্তরিকতার কোন ঘাটতি ছিলো না। বিষয়গুলো ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখার জন্য অনুরোধ করছি।
চাকরিকালীন শ্রদ্ধেয় বিভাগীয় কমিশনার স্যারবৃন্দ, শ্রদ্ধেয় জেলা প্রশাসক স্যারগণ ও অন্যান্য সিনিয়র স্যারবৃন্দ যে সহযোগিতা করেছেন তার জন্য কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি। বিশেষকরে সহকারী কমিশনার(ভূমি) জনাব কামরুন্নাহার তামান্না উপজেলার ভূমিসহ সার্বিক বিষয়ে সহযোগিতা করেছেন। তার প্রতি বিশেষভাবে কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি।
উপজেলায় কাজ করতে গিয়ে বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা- কর্মচারীবৃন্দ, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, বীর মুক্তিযোদ্ধাবৃন্দ, সাংবাদিকবৃন্দ, শিক্ষকমণ্ডলি, জনপ্রতিনিধি ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের যে সহযোগিতা ও ভালোবাসা পেয়েছি তা আজীবন মনে থাকবে। চলারপথে আমার আচরণ, কথা ও কাজের মাধ্যমে কেউ কষ্ট পেয়ে থাকলে আমাকে ক্ষমা করে দিবেন।
বাবুগঞ্জ উপজেলা থেকে পরিপূর্ণ তৃপ্তি নিয়েই বিদায় নিচ্ছি। বাবুগঞ্জ কে বিভিন্ন কারণেই মনে পরবে। এই জনপদের মানুষের যে ভালোবাসা আমি পেয়েছি তা কখনোই ভুলবার নয়। পরিবারের সদস্যদের নিয়ে এখানের সময় আসলেই মিস করবো। সবাই আমার ও আমার পরিবারের জন্য দোয়া করবেন।
আমার পরবর্তী কর্মস্থল উপপরিচালক হিসেবে বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ ঢাকায়।
আপনাদের কাছে অনুরোধ, আমাকে যেমন আপনাদের পরিবারের সদস্য হিসেবে সহযোগিতা করেছেন, ঠিক তেমনি নবাগত উপজেলা নির্বাহী অফিসারকেও একইভাবে সহযোগিতা করবেন। সকলের মঙ্গল কামনা করছি। ভালো থেকো প্রিয় বাবুগঞ্জ।



