*নির্বাচনী মাঠ গোছাচ্ছে বিরোধীপক্ষ
খোকন আহম্মেদ হীরা, বরিশাল :- করোনার এই মহামারীতে প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে সরকারী কর্মকর্তা, চিকিৎসক, পুলিশ, মিডিয়াকর্মীসহ তৃনমূল পর্যায়ের জনপ্রতিনিধিরা করোনা মোকাবেলায় ব্যস্ত সময় পার করছেন। দেশব্যাপী লকডাউন শুরু হওয়ার পর কর্মহীনদের পাশে দাঁড়িয়েছে বর্তমান সরকার।
তারই ধারাবাহিকতায় করোনা ঝুঁকি নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কঠোর নির্দেশে তৃনমূল পর্যায়ে নিরলস পরিশ্রমের মাধ্যমে মানবিকতার গল্পের চরিত্র হয়ে উঠেছেন বরিশালের তৃণমূল পর্যায়ের কয়েকজন জনপ্রতিনিধি। তারা গ্রামাঞ্চলে লকডাউনকে সফল করা থেকে শুরু করে সরকারের নির্দেশে ঘরে থাকা কর্মহীন পরিবারের দ্বারে দ্বারে কখনও নিজস্ব অর্থায়নে মানবিক সহায়তা কার্যক্রম, সরকারের ভিজিএফ, ভিজিডি ও প্রধানমন্ত্রীর উপহার সামগ্রীসহ বিভিন্ন খাদ্যসামগ্রী অত্যন্ত নিষ্ঠার সাথে পৌঁছে দিচ্ছেন। ইতোমধ্যে সত্যিকার অভাবী মানুষের কাছে সরকারীভাবে বরাদ্দকৃত এবং ব্যক্তিগত অর্থায়নে এসব খাদ্যসামগ্রী পৌঁছে দিয়ে তারা (জনপ্রতিনিধি) এলাকায় সত্যিকার মানবপ্রেমিক জনপ্রতিনিধির মর্যাদা পেয়েছেন। এলাকার সাধারণ জনগন তাদের প্রশংসা করছেন।
এরইমধ্যে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের বিতর্কিত করতে বিরোধী পক্ষের লোকজনে আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে নিজেদের মাঠ গোছাতে বিভিন্ন সময় চাল চোরের আখ্যাদিয়ে নামসর্বস্ত্র অনলাইনে সংবাদ প্রকাশ করিয়ে এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের ফেক আইডিতে জনপ্রতিনিধিদের সম্মানহানি করার অসংখ্য অভিযোগ পাওয়া গেছে। প্রকৃত সত্য না জেনে এসব গুজব ছড়ানোর ফলে অনেকটা বিব্রত হয়ে জনপ্রতিনিধিরা তাদের কাজের আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন।
মানবপ্রেমিক খেতাবে প্রশংসিত ইউনিয়ন পরিষদের উল্লেখযোগ্য চেয়ারম্যানরা হলেন-প্রধানমন্ত্রীর জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত গৌরনদীর মাহিলাড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সৈকত গুহ পিকলু, নদী বেষ্টিত মুলাদী উপজেলার সফিপুর ইউনিয়ন চেয়ারম্যান আবু মুসা হিমু মুন্সী, গৌরনদীর নলচিড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান গোলাম হাফিজ মৃধা, সরিকল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোঃ ফারুক হোসেন মোল্লা, বার্থী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোঃ শাহজাহান প্যাদা ও চাঁদশী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান কৃষ্ণ কান্ত দে চিত্ত।
এসব ইউপি চেয়ারম্যানরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তাদের রাজনৈতিক অভিভাবক মন্ত্রী আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ এমপি’র কঠোর নির্দেশনা পালন করতে গিয়ে সুবিধাভোগী কতিপয় ব্যক্তির কাছে খাদ্য সামগ্রীর দায়িত্ব না দিয়ে নিজ নিজ হাতে কর্মহীনদের দ্বারে দ্বারে খাদ্য সামগ্রী পৌঁছে দেয়ায় কতিপয় চেয়ারম্যানরা রোষানলে পরছেন।
এনিয়ে বিশেষ অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে নানা চাঞ্চল্যকর তথ্য। সূত্রমতে, করোনার ক্লান্তি লগ্নে বর্তমানে করোনার চেয়েও টাটকা খবর হচ্ছে জনপ্রতিনিধিদের বিরুদ্ধে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মনগড়াভাবে উত্থাপিত সরকারীভাবে বরাদ্দকৃত জেলেদের চাল চুরির খবর। বরিশাল জেলা প্রবেশদ্বার গৌরনদী উপজেলার মৎস্য কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার খাঞ্জাপুর ইউনিয়নে নিবন্ধিত ৪৫৭ জন জেলের মধ্যে সরকারীভাবে ১১১ জন জেলের নামে ৮০ কেজি করে চাল বরাদ্দ হয়েছে। একইভাবে বার্থী ইউনিয়নের নিবন্ধিত ৩১১ জেলের মধ্যে ৮০ জন, চাঁদশী ইউনিয়নের ৮৯ জেলের বিপরিতে ৮০ জন, মাহিলাড়ার ১৮১ জেলের বিপরিতে ১১৭ জন, বাটাজোরের ২০৮ জেলের বিপরিতে ৯০ জন, নলচিড়ার ৭০৫ জেলের মধ্যে ১৭৭ জন, সরিকল ইউনিয়নের ৬৮৯ জেলের মধ্যে ১৭৭ জন ও পৌরসভার নিবন্ধিত ১৯৬ জন জেলের বিপরিতে ১০৪ জন জেলের প্রত্যেকের নামে ৮০ কেজি করে চাল বরাদ্দ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে বরাদ্দকৃত চাল জেলেদের মধ্যে বিতরণ করা হয়েছে।
নলচিড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক গোলাম হাফিজ মৃধা জানান, তার ইউনিয়নের নিবন্ধিত ৭০৫ জন জেলের মধ্যে সরকারীভাবে বরাদ্দকৃত ১৭৭ জন জেলের মধ্যে ৮০ কেজি করে চাল বিতরণ করা হয়েছে। বরাদ্দ না থাকায় বাকি নিবন্ধিত ৫২৮ জন জেলের মধ্যে চাল বিতরণ করা সম্ভব হয়নি। সরিকল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ ফারুক হোসেন মোল্লা জানান, তার ইউনিয়নের নিবন্ধিত ৬৮৯ জন জেলের মধ্যে যখন ১৭৭ জন জেলেকে ৮০ কেজি করে চাল বিতরণ করা হয়েছে তখন কিন্তু ৫১২ জন নিবন্ধিত জেলেকে বরাদ্দ না থাকায় চাল দেয়া সম্ভব হয়নি।
এ সুযোগে ওইসব জনপ্রতিধিদের সাথে বিগত নির্বাচনের সময় প্রতিদ্বন্ধিতা করে পরাজিত হওয়া কতিপয় ব্যক্তিরা এবং রাজনৈতিক বিরোধী পক্ষের লোকজনে তাদের ফায়দা হাসিলের জন্য ও আগামী নির্বাচনে সম্ভাব্য প্রার্থীরা নিজেদের রাজনৈতিক মাঠ গোছাতে জনপ্রতিনিধিদের হয়রানী শুরু করেছে। ওইসব ব্যক্তিরা বরাদ্দ না থাকায় চাল না পাওয়া জেলেদের চাল চেয়ারম্যানরা আত্মসাত করেছে বলে নানা অপপ্রচার শুরু করেছে। অনুসন্ধানে আরও জানা গেছে, নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা আগেও যখন এভাবে ঘাটতি বরাদ্দ আসতো তখন সকল নিবন্ধিত জেলেদের মধ্যে সমবন্টন করে সরকারি বরাদ্দকৃত চাল বিতরণ করতো। এ কারণেই অনেক চেয়ারম্যানের ভাগ্যে চাল চুরির অপবাদ জুটেছে।
খাঞ্জাপুর ইউনিয়নের পরিষদের ১নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মোহাম্মদ আলী জানান, ইউপি চেয়ারম্যান, মৎস্য কর্মকর্তা ও ট্যাগ অফিসারের উপস্থিতিতে তার ওয়ার্ডের নিবন্ধিত ২৪ জন জেলের মধ্যে বরাদ্দ অনুযায়ী মাত্র আটজন জেলেকে ৮০ কেজি করে চাল বিতরণ করা হয়েছে। চাল পাওয়া আট জেলে পরবর্তীতে গ্রামে গিয়ে মানবিক কারনে নিবন্ধিত ২৪ জেলেদের মধ্যে সমভাগে চাল ভাগ করে নিয়েছেন। যা প্রথমে তিনি অবগত ছিলেন না। তিনি আরও জানান, এরমধ্যে এক জেলের নাম ইদ্রিস মাতুব্বর। সে (ইদ্রিস মাতুব্বর) তার নির্বাচনী প্রতিদ্বন্ধী কুদ্দুস মাতুব্বরের ছোট ভাই। ওই ওয়ার্ডের জেলে কালাম হাওলাদার, উত্তম শিকদার, পূন্য হালদারসহ সাতজন জেলে বলেন, ইউনিয়ন পরিষদ থেকে ৮০ কেজি করে চাল পাওয়ার পর আমরা চাল নিয়ে গ্রামে আসি। একপর্যায়ে অন্যান্য নিবন্ধিত জেলেরা জানান, তাদের ঘরে খাবার নেই। বিষয়টি শোনার পর আমরা আটজন জেলে নিজের ইচ্ছায় ২৪ জন জেলের মধ্যে সমভাবে চাল ভাগ করে নিয়েছি।
জেলে কালাম হাওলাদার অভিযোগ করে বলেন, ইউনিয়ন পরিষদ থেকে ৮০ কেজি চাল পাওয়ার পর ইদ্রিস মাতুব্বর নামের ওই ব্যক্তি তাদেরকে আরও চাল পাইয়ে দেয়ার কথা বলে একটি সাদা কাগজে স্বাক্ষর নেয়। পরবর্তীতে তারা (কালাম মোল্লাসহ অন্যান্য জেলে) জানতে পারেন স্বাক্ষর নেয়া ওই সাদা কাগজে স্থানীয় ইউপি সদস্য মোহাম্মদ আলীর বিরুদ্ধে চাল আত্মসাতের অভিযোগ এনে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছে ইদ্রিস মাতুব্বর। চাল বিতরণে অনিয়ম না হওয়া সত্বেও শুধুমাত্র নির্বাচনী প্রতিদ্বন্ধী হওয়ায় ইউপি সদস্য মোহাম্মদ আলীর বিরুদ্ধে চাল আত্মসাতের অভিযোগ করা হয়েছে।
একইভাবে অন্যান্য ইউনিয়নে জেলেদের চাহিদার তুলনায় সরকারী বরাদ্দ কম থাকায় বিপাকে পরতে হচ্ছে ইউপি চেয়ারম্যান কিংবা সদস্য-সদস্যাদের।
সাবেক ইউপি সদস্যর ষড়যন্ত্র \ একই নামে দুইজনের ভাতার বই থাকায় একজনের বই অপরজনের সাথে বদল হওয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে সাবেক ইউপি সদস্যর রোষানলে পরেছেন বর্তমান ইউপি সদস্য। ঘটনাটি গৌরনদী উপজেলার শাহাজিরা গ্রামের। ওই গ্রামের মৃত বসু মীরের পুত্র কালাম মীর জানান, তার মা আনোয়ারা বেগম কয়েক বছর যাবত বিধবা ভাতা পেয়ে আসছেন। কয়েকমাস আগে টাকা উত্তোলণ করতে গিয়ে আরেক আনোয়ারার সাথে তার মায়ের ভাতা বই বদল হয়ে যায়। যা ইউপি সদস্য ফারুক সরদারের মাধ্যমে তারা ফিরে পেয়েছেন। অথচ বিষয়টি নিয়ে একটি মহল সরিকল ইউনিয়ন পরিষদের ১নং ওয়ার্ডের জনপ্রিয় ইউপি সদস্য ফারুক সরদারকে সমাজে হেয় প্রতিপন্ন করতে উঠেপরে লেগেছে। ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি ও ইউপি সদস্য ফারুক সরদার জানান, তার গ্রামে আনোয়ারা বেগম নামের একজনের ভাতার বইয়ের সাথে অপর আনোয়ারা বেগমের ভাতার বই পরিবর্তন হয়ে যায়। এ ঘটনাকে পূঁজি করে সাবেক ইউপি সদস্য বাদশা মীর তাকে (ফারুক) বিভিন্ন ধরনের হয়রানি শুরু করেছে। এমনকি তার (ফারুক) বিরুদ্ধে মিথ্যে অভিযোগ দায়ের করতে বিধবা আনোয়ারা বেগমের পরিবারকে চাঁপ প্রয়োগও করা হচ্ছে। তিনি আরও জানান, আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে তার বিরুদ্ধে গভীর ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে।
সূত্রমতে, ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে সামনে রেখে করোনার এই দূর্যোগে প্রতিপক্ষ নির্বাচনী প্রতিদ্বন্ধীরা তাদের মাঠ গোছাতে জনপ্রতিনিধিদের বিরুদ্ধে একের পর এক ষড়যন্ত্র করে বিভিন্ন মাধ্যমে গুজব ছড়াচ্ছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গুজব ছড়ানোর ফলে জনপ্রতিনিধিদের বিরুদ্ধে এলাকায় ও দলের কাছে দূর্নাম ছড়িয়ে পরছে। যে কারণে অনেকটা বিব্রত হয়ে সরকারী নির্দেশনা পালনে জনপ্রতিনিধিরা তাদের কাজের আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন।
সর্বপ্রথম এনজিও’র খাদ্য সামগ্রী বিতরণ \ করোনার প্রায় দুইমাস পর প্রায় দুই শতাধিক সদস্যদের সহায়তার জন্য বরিশালে সর্বপ্রথম গত ১০ মে বিভিন্ন খাদ্য সামগ্রী ও নগদ অর্থ বিতরণ করা হয়েছে। গ্রামীন ব্যাংকের উজিরপুর উপজেলার ধামুরা শাখার আয়োজনে এসব খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করেছেন ব্যাংকের বরিশাল জোনের জোনাল ম্যানেজার মোঃ সাইদুর রহমান ভূঁইয়া, প্রশাসনিক কর্মকর্তা আব্দুল হালিম, প্রোগ্রাম অফিসার ইমাদুল ইসলাম ও শাখা ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ কামাল হোসেন।
প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে \ দেশরত্ম প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে এবার পরিবারের সদস্যদের ঈদের খরচের টাকায় করোনায় কর্মহীন ১৫শ’ পরিবারের মাঝে বিভিন্ন খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করেছেন মুলাদী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সহসভাপতি আলহাজ্ব মোঃ মোয়াজ্জেম হোসেন। গত ১২ মে দিনভর তিনি ও তার পরিবারের সদস্যরা বাটামারা ইউনিয়নের নয়টি ওয়ার্ডের বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে এসব খাদ্য সামগ্রী পৌঁছে দিয়েছেন। মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, প্রধানমন্ত্রী নির্দেশে ঈদের আগে আরও যথাসাধ্য চেস্টা করবো অসহায়দের পাশে দাঁড়ানোর জন্য।