বরিশাল অফিস:- “করোনায় মৃত্যুর ভয়, করিব জয়” শ্লোগানকে সামনে রেখে বৈশ্বিক মহামারি করোনা আক্রান্তর মৃত্যু ভয়ে যখন আপন জনের লাশ ফেলে দূরে সরে যায়, ঠিক তখন মৃত্যু ভয়কে দূরে ঠেলে দিয়ে করোনায় মৃত্যুবরণকারী লাশের জানাজা ও দাফনে সামনের সারিতে থেকে কাজ করে চলেছে আগৈলঝাড়ার স্বেচ্ছাসেবি সংগঠন ‘আল মদিনা যুব ফাউন্ডেশন’। স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের প্রসংশিত এই সামাজিক মহৎ কাজের জন্য কৃতজ্ঞচিত্তে তাদের স্মরণ করছে মৃতর পরিবারসহ আগৈলঝাড়ার সর্বস্তরের জনগন।
উপজেলার রতœপুর ইউনিয়নের বারপাইকা গ্রামের স্থানীয় যুবকদের সমন্বয়ে প্রতিষ্ঠিত আল মদিনা যুব ফাউন্ডেশনের সভাপতি মো. নাসির উদ্দিন শাহ জানান, ২০১৯ সালের ১জানুয়ারি নিপিড়ীত মানুষের পাশে দাড়িয়ে সেবা প্রদানের অঙ্গিকার নিয়ে তাদের সংগঠন আত্মপ্রকাশ করে। যার সদস্য সংখ্যা ১৩৫জন। বর্তমানে বিশ্বব্যাপি মহামারি করোনা ভাইরাসের ছোঁয়াছে রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া লাশের দাফনেও অনেক ক্ষেত্রে তার পরিবার স্বজনেরা এগিয়ে আসে না। এমন দৃশ্য দেখে তাকে ব্যাথিত করায় করোনা আক্রান্ত ব্যক্তির লাশ দাফনের চিন্তা মাথায় আসে তাদের। “করোনা মৃত্যু ভয়, করিব জয়” এই শ্লোগানকে সামনে রেখে মৃত্যু ভয়কে উপেক্ষা করে নিজ বংশের যুবকসহ গ্রামের যুবকেরা একত্রিত হয়ে গঠন করেন লাশ দাফনের জন্য একটি সমন্বিত বাহিনী। এই বাহিনীর সদস্যরা হলেন মো. শামীম শাহ, মো. বশির শাহ, মো. কালাম শাহ, মো. আমিন শাহ ও মো. কাইয়ুম শাহ প্রমুখ।
সদস্যদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ি করোনা আক্রান্ত হয়ে কোন ব্যক্তি মারা গেলে স্বাস্থ্যবিধি মেনে তাদের জানাজা ও দাফনের সকল আনুষ্ঠানিকতার কাজ শুরু করেন তারা। দাফনের পূর্ব অভিজ্ঞতা না থাকলেও প্রথমে দু’তিনটি লাশ দাফনের পরে ইসলামী ফাউন্ডেশনের সহযোগীতায় একটি বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে সংগঠনের ২০জন সদস্য এক দিনের প্রশিক্ষন গ্রহন করেন। এর পর থেকেই মৃত্যু ভয়কে উপেক্ষা করে লাশ দাফন করে চলেছে সংগঠনের সদস্যরা।
সংগঠন সূত্রে জানা গেছে, ১৪জুলাই উপজেলার পয়সা গ্রামের বাসিন্দা ও পয়সারহাটের ব্যবসায়ি হাসান মিয়া (৫২) করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু বরণ করলে ওই দিনই তার দাফন সম্পন্ন করে তারা। এছাড়াও ৯জুলাই বারপাইকা গ্রামের মমতাজ বেগম (৫৫), ৬জুলাই আমবৌলা গ্রামের গোলাম সরোয়ার (৬০), ৭জুন ছয়গ্রামের মনিরুল ইসলাম (৪৬), ৮জুন মোল্লাপাড়া গ্রামের নুর আলম (৭০), ৬জুন বাগধা গ্রামের শাহজাহান ভাট্টি (৬৫), ১৬মে বেলুহার গ্রামের রোমান কাজী (৩২) করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা যান। মৃত ব্যক্তিরা দেশের বিভিন্ন স্থানে মৃত্যু বরন করলে তাদের স্বজনরা লাশ নিয়ে নিজ বাড়িতে আসেন। স্বজনদের সম্মতিতে স্ব-স্ব বাড়ির গোরস্থানেই তাদের প্রিয়জনের লাশগুলো দাফন করেন সংগঠনের সদস্যরা। এলাকায় করোনা আক্রান্ত হয়ে কোন মুসলিম ব্যক্তির মৃত্যু হলে লাশ দাফনে এখন ডাক পড় তাদের। প্রশাসনের লোকজনও লাশ দাফনে শরনাপন্ন হচ্ছেন তাদের।
মো. নাসির উদ্দিন শাহ জানান, সদস্যদের চাঁদায় প্রথমে তারা লাশ দাফনের জন্য স্বাস্থ্য সুরক্ষার পোষাক কিনলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। কারণ, একটি লাশ দাফনের পরে তাদের ব্যবহৃত স্বাস্থ্য সুরক্ষার পোষাক পুড়ে ফেলতে হয়। তবে এপর্যন্ত তাদের ৮পিচ ও ৫পিচ পিপিই পোষাক সরবরাহ করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবু সালেহ মো. লিটন ও বাগধা ইউপি চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম বাবুল ভাট্টি।
লাশ দাফন ছাড়াও বারপাইকা আল মদিনা যুব ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে করোনায় কর্মহীন হয়ে পড়া অসহায় ও দুঃস্থ ৬৫পরিবারের মধ্যে খাদ্য সহায়তা প্রদান করছে। করোনায় জনসচেতনতায় প্রচারণার পাশাপাশি বিনা মূল্যে স্বেচ্ছায় রক্ত দান, স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসায় বৃক্ষ রোপনসহ বিভিন্ন সামাজিক কাজে অংশ গ্রহন করে আসছে আল মদিনা যুব ফাউন্ডেশন।
বারপাইকা আল মদিনা যুব ফাউন্ডেশনের কার্যক্রম সম্পর্কে বাগধা ইউপি চেয়ারম্যান, উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতা, করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণকারী শাহজাহান ভাট্টির চাচাতো ভাই আমিনুল ইসলাম বাবুল ভাট্টি বলেন, বৈশ্বিক মহামারি করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণকারী স্বজনেরা লাশ দাফন তো দূরের কথা লাশ দেখতেও যায় না। এই সংগঠনের লোকজন না থাকলে আক্রান্ত ব্যক্তির লাশ দাফনে চরম অসুবিধায় পরতে হতো। তখন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের লোকজন এনে লাশ দাফন করতে হতো। তারা সমাজের জন্য নিঃসন্দেহে মহৎ কাজ করে চলেছে। সংগঠনের সাফল্য কামনা করে তাদের পাশে থেকে সকল প্রকার সাহায্য-সহযোগীতা করার আশ্বাসও প্রদান করেন তিনি।
থানা অফিসার ইন চার্জ মো. আফজাল হোসেন সংগঠন সম্পর্কে বলেন, তারা সমাজের জন্য ভাল, প্রসংশনীয় কাজ করছে। সামাজিক কাজের জন্য তাদের স্বাগত জানিয়ে সংগঠনের ভবিষ্যত সফলতাও কামনা করেন তিনি।