রাঙা প্রভাত অনলাইন ডেস্কঃ ইতালি থেকে ফেরত পাঠানো ১৪৭ জনকে আশকোনা হজ ক্যাম্পে কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছিল।
করোনাভাইরাস মহামারির জন্য বেশ কয়েক মাস বিমান চলাচল বন্ধ এবং নিষেধাজ্ঞার কারণে বাংলাদেশে এসে আটকে পড়েন বহু ইতালি প্রবাসী বাংলাদেশী।
গত ১৪ই অক্টোবর শর্ত সাপেক্ষে বাংলাদেশিদের ইতালিতে প্রবেশের নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ শেষ হওয়ার পর দেশটিতে ফিরতে চাচ্ছেন এদের অনেকে।
তবে টিকেট না পাওয়া, বসবাসের বৈধ ঠিকানা না থাকা এবং অনুমোদনের মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়াসহ নানা কারণে ফিরতে পারছেন না ছুটিতে বাংলাদেশে আসা এই প্রবাসীরা।
এমনই একজন বরগুনার পাথরঘাটা এলাকার বাসিন্দা মাহবুব হোসেন। দীর্ঘ সাত বছর ধরে ইতালিতে থাকেন তিনি।
গত মার্চ মাসে এক মাস ২০ দিনের বার্ষিক ছুটিতে বাংলাদেশে এসেছিলেন। এরপর সাত মাস পেরিয়ে গেছে।
করোনাভাইরাস মহামারির কারণে বাংলাদেশে এসে আটকে পড়েন অনেক প্রবাসী।
কিন্তু করোনাভাইরাস মহামারি শুরু হওয়ার কারণে বিমান চলাচল বন্ধ হয়ে গেলে আর ফিরতে পারেননি মি. হোসেন।
মি. হোসেন জানান, এ পর্যন্ত তিনবার বিমানের টিকেট কাটলেও সেগুলো বাতিল হয়ে গেছে। গত ১৪ই অক্টোবর ইতালিতে বাংলাদেশের উপর থেকে নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ার পর আবার টিকেট নেয়ার চেষ্টা করছেন তিনি।
“এমিরেটসের ফ্লাইটে টিকেট পাচ্ছি নভেম্বরের ১৭ তারিখে। ওরা সপ্তাহে তিনটা ফ্লাইট দিচ্ছে যার কারণে টিকেট পেতে সমস্যা হচ্ছে।
গত জুলাই মাসে একশর বেশি বাংলাদেশিকে বিমানবন্দর থেকে ফেরত পাঠায় ইতালি সরকার।
মি. হোসেন জানান, তিনি জানতে পেরেছেন, যাদের রেসিডেন্স পারমিটের মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে কিন্তু কাজ করার অনুমোদন রয়েছে, তারা বিশেষ ফ্লাইটে করে ইতালিতে ফিরতে পারবেন।
সে কারণেই চার্টার্ড ফ্লাইটে টিকেট কাটার চেষ্টা করছেন। ২৮শে অক্টোবর বাংলাদেশ বিমানের একটি বিশেষ ফ্লাইট ইতালি পৌঁছানোর কথা রয়েছে। মি. হোসেন জানান, সেখানে টিকেটের দাম রাখা হচ্ছে অত্যন্ত বেশি।
আরেক ইতালি প্রবাসী মোহাম্মদ হোসেন যিনি প্রায় ১৩ বছর ধরে দেশটিতে বসবাস করছেন।
তিনি জানান, ২০১৯ সালের নভেম্বরে রেসিডেন্স কার্ডের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর সেটি বাড়ানোর জন্য আবেদন করেন মি. হোসেন। বেশ কয়েক বার গিয়ে খোঁজ-খবরও নিয়েছেন। কিন্তু সেটি পাস হওয়ার আগেই ছুটিতে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে বাংলাদেশে আসেন তিনি। এর পরে করোনাভাইরাস মহামারির কারণে আটকে পড়েন বাংলাদেশে।
মোহাম্মদ হোসেন বলেন, “রেসিডেন্স পারমিট ছাড়া ইতালির বাইরে সর্বোচ্চ ছয় মাস থাকার নিয়ম আছে। কিন্তু আমার তো বেশি হয়ে গেছে। আমি তো আর ইচ্ছা করে থাকছি না।”
গত জুন মাসে বাংলাদেশ থেকে যাওয়া একটি ফ্লাইটের ৩০ জনের বেশি যাত্রীর মধ্যে করোনাভাইরাস সনাক্ত হওয়ার পর বাংলাদেশিদের বহনকারী বিমান চলাচলে সাময়িক নিষেধাজ্ঞা দেয় ইতালি।
করোনাভাইরাসের মারাত্মক প্রকোপ ছড়িয়ে পড়া ঠেকাতে আন্তর্জাতিক বিমান চলাচল বন্ধের ঘোষণা দিয়েছিল ইতালি।
জুলাই মাসে ইতালির কয়েকটি গণমাধ্যমের খবরে বাংলাদেশে করোনাভাইরাস পরীক্ষায় দুর্নীতির বিষয়টি তুলে ধরা হলে এই নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ আরো বাড়ে। যা গত ১৪ই অক্টোবর শেষ হওয়ার পর আবার ইতালিতে ফেরার উদ্যোগ নেন প্রবাসীরা।
তবে নিষেধাজ্ঞা তুলে দিলেও ইতালি সরকার জানিয়েছে, যেসব প্রবাসীর রেসিডেন্স কার্ড বা থাকার কোন স্থায়ী ঠিকানা নেই-তারা আপাতত যেতে পারবে না। ফলে আবার আটকে পড়েন অনেক প্রবাসী।
ইতালি থাকা অভিবাসন কনসালটেন্ট আক্তারুজ্জামান বলেন, ছোট একটা কনফিউশন আছে প্রবাসী বাংলাদেশিদের ইতালিতে ফেরার বিষয়ে। আর সেটি হচ্ছে কারো ইতালিতে অবস্থানের অনুমতির পাশাপাশি সেখানে বসবাসের জন্য একটি আবাসস্থল থাকতে হবে।
আগে যেকোন প্রবাসী এটা নিজে নিজে ঘোষণা দিতে পারতো যে তার আবাস্থল রয়েছে। কিন্তু এখন সেটা শুধু ঘোষণা দিলে হবে না, বরং সেটি প্রমাণ করে দেখাতে হবে।
“প্রবাসীরা এটা প্রমাণ করতে ব্যর্থ হলে ইতালি কর্তৃপক্ষ তাদেরকে দেশে ফেরত পাঠাতে পারবে,” বলেন মি. আক্তারুজ্জামান।
তিনি বলেন, অনেক বাংলাদেশি ইতালিতে বসবাস এবং কাজ করলেও নির্দিষ্ট কোন ঠিকানা তারা সরকারিভাবে ব্যবহার করে না।
যাদের অফিসিয়াল এ ধরণের কোন ঠিকানা নেই তারা এই মুহূর্তে যেতে পারবে না বলে জানান অভিবাসন বিষয়ক পরামর্শকরা।
করোনাভাইরাস সংক্রমণ ঠেকাতে বিশ্বের প্রায় সব দেশেই বিমানবন্দরে স্বাস্থ্য পরীক্ষার ব্যবস্থা করা হয়।
তারা বলেন, “ইতালি সরকার বিষয়টিকে যেভাবে দেখছে তা হলো, যাদের নির্দিষ্ট ঠিকানা নেই, তার মানে হচ্ছে তাদের এখানে থাকার দরকার নেই। তাই আসারও দরকার নেই।”
ইতালি প্রবাসী অভিবাসন বিষয়ক পরামর্শক আক্তারুজ্জামান বলেন, ইতালিতে অনেক বাংলাদেশি একসাথে কয়েক জন মিলে বসবাস করেন। সেক্ষেত্রে সবার অফিসিয়াল ঠিকানা থাকে না।
উদাহরণ হিসেবে তিনি বলেন, এক বাসায় হয়তো ছয় মিলে থাকে কিন্তু সেখানে থাকার অনুমতি আছে হয়তো দুই জনের। সেক্ষেত্রে ওই বাসস্থানের ঠিকানা দুই জন অফিসিয়ালি ব্যবহার করতে পারলেও বাকিরা পারে না। ফলে তাদের কোন ঠিকানাও থাকে না।
ইতালিতে ফিরতে হলে দেশটির সরকার যেসব শর্ত বেঁধে দিয়েছে সেগুলোর মধ্যে রয়েছে, দেশটির নির্ধারিত সংস্থাগুলো থেকে করোনা নেগেটিভ সার্টিফিকেট থাকতে হবে, ইতালিতে পৌঁছানোর পর ১৪ দিন কোয়ারেন্টিনে থাকতে হবে এবং ইতালিতে বাসস্থানের অনুমতি থাকতে হবে।
অভিবাসন পরামর্শকরা বলছেন, অনেকে সেলফ ডিক্লারেশন দিচ্ছেন যে তারা ইতালিতে পৌঁছে হয়তো কোন একটি বাসায় কোয়ারেন্টিনে থাকবে। তাদের ছেড়ে দেয়া হচ্ছে।
যাদের রেসিডেন্স কার্ডের মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে তাদেরকে নতুন করে ভিসা নিয়ে ইতালিতে ফিরতে হবে। এক্ষেত্রে তারা দেশে ফেরার আগে কার্ডের মেয়াদ বাড়ানোর আবেদন করে থাকলে সহজেই ভিসা পাওয়া যাবে। তারা যেকোন ফ্লাইটে ফিরতে পারবে বলেও জানান তিনি।
এদিকে, যাদের ইতালিতে কোন স্থায়ী ঠিকানা বা বাসস্থানের ঠিকানা নেই তারা চার্টার্ড ফ্লাইটে ফেরার প্রস্তুতি নিলেও, তাদের ফেরার অনুমতি দেয়া নিয়ে ইতালি সরকারের আনুষ্ঠানিক কোন ঘোষণা নেই বলেও জানান অভিবাসন বিষয়ক পরামর্শকরা।