রাঙাপ্রভাত ডেস্কঃ প্রাথমিক ব্যয় প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকা
উভয় পাশে থাকবে দুটি সার্ভিস লেন
৮ ফ্লাইওভার ৬৯ সেতু ২৯ ফুটওভারব্রিজ
বদলে যাবে ঢাকার সঙ্গে সিলেটের সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা। অনেক কাঠখড় পোড়ানোর পর অবশেষে সব জটিলতা কেটে বহুল আকাক্সিক্ষত ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক চার লেনে উন্নীতকরণের কাজ আলোর মুখ দেখার আশা জেগেছে। ৪ লেনের প্রকল্পের কথা বলা হলেও প্রকৃতপক্ষে দুইপাশের দুটি সার্ভিস রোডসহ এটি হবে ৬ লেনের প্রকল্প। আগামী বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে সরকারের অগ্রাধিকারভিত্তিক এই প্রকল্পের কাজ শুরু হবে বলে সড়ক বিভাগ সূত্রে জানা গেছে।
সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের জানিয়েছেন, দেশের সব মহাসড়ক উন্নয়নে বর্তমান সরকারের বহুমাত্রিক মহাপরিকল্পনা রয়েছে। এই পরিকল্পনার আওতায় সব মহাসড়ক পর্যায়ক্রমে ২ থেকে ৮ লেনে উন্নীতকরণ করা হবে। ইতোমধ্যেই অনেকগুলো গুরুত্বপূর্ণ মহাসড়ক ৪ লেনে উন্নীত করা হয়েছে। খুব শিগগিরই ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের কাজ শুরু হবে। এডিবির সঙ্গে অর্থায়নের ব্যাপারে চুক্তি হয়েছে। যেভাবে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কটি নির্মিত হচ্ছে- এটি আসলে এক্সপ্রেসওয়ে বলা চলে। সরকার এবার সিলেটবাসীর দীর্ঘদিনের দাবি পূরণ করবে।
মহাসড়ক বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের জুলাই মাসে ২১০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের কাজ শুরু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু করোনা মহামারির প্রভাব, ভূমি অধিগ্রহণ ও অর্থায়নের বিষয়ে কিছুটা জটিলতার কারণে এই প্রকল্পের কাজ শুরু করা সম্ভব হয়নি। তবে জটিলতা অনেকটাই কেটে গেছে। ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক ৪ লেনে উন্নীতকরণ কাজের জন্য প্রাথমিক ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকা। এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (এডিবি) এই প্রকল্পে সিংহভাগ অর্থায়ন করবে। বাকি টাকার জোগান দেবে সড়ক বিভাগ। ইতোমধ্যেই এ বিষয়ে এডিবির সঙ্গে একটি চুক্তি হয়েছে। কয়েক মাস আগে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে এডিবির কান্ট্রি ডিরেক্টর মি. মনমোহন প্রকাশ দেখা করে প্রকল্পের বিষয়ে ফলপ্রসূ আলোচনাও করেছেন। প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা আশা করছেন আগামী ডিসেম্বর অথবা জানুয়ারি মাসে প্রকল্পের অর্থায়নের ব্যাপারে সরকার ও এডিবির মধ্যে ঋণচুক্তি হবে। এর আগেই প্রকল্পটি একনেকে উঠবে।
সওজ সূত্রে জানা গেছে, প্রকল্পের চূড়ান্ত নকশা প্রণয়নের কাজ একেবারেই শেষ পর্যায়ে রয়েছে। খসড়া ডিপিপিও চূড়ান্ত হয়েছে। এসব এডিবিতে পাঠানো হয়েছে। এডিবির সবুজ সংকেত পেলেই সরকার অন্যান্য সব কাজ দ্রুত সম্পন্ন করে কাজ শুরু করবে। প্রকল্পটি সাতটি জেলার ওপর দিয়ে বাস্তবায়িত হবে। সড়ক ও জনপথ বিভাগ জমি অধিগ্রহণের কাজ বেশ জোরেশোরেই এগিয়ে নিচ্ছে। প্রকল্পের জমি অধিগ্রহণের কাজ বেশ এগিয়েছে। জমি অধিগ্রহণের ব্যাপারে সড়ক ও জনপথ বিভাগের সাতটি জোন প্রস্তাবনা তৈরি করেছে। কয়েকটি স্থানে জমি অধিগ্রহণের ক্ষেত্রে কিছু জটিলতা রয়েছে। তবে তা খুব তাড়াতাড়ি সুরাহা হবে। সব জটিলতা কাটলে ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে প্রকল্পের কাজ শুরু করা সম্ভব হবে। এডিবি এ ধরনের প্রকল্পে আগেও অর্থায়ন করেছে। জয়দেবপুর থেকে টাঙ্গাইল পর্যন্ত মহাসড়ক ৪ লেনে উন্নীতকরণ প্রকল্পে এডিবি অর্থায়ন করেছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক প্রকল্পের ৮টি স্থানে ফ্লাইওভার এবং ২২টি স্থানে ওভারপাস নির্মাণ করা হবে। নিরবচ্ছিন্নভাবে যানবাহন চলাচলের জন্য সড়কের বিভিন্ন স্থানে আরো ১০টি ও রেললাইনের ৫টি স্থানেও ওভারপাস নির্মাণ করা হবে। এছাড়া ঢাকা থেকে সিলেট পর্যন্ত সড়কে ৬৯টি ছোটবড় সেতু ও পথচারীদের রাস্তা পারাপারের জন্য ২৯ ফুটওভারব্রিজ নির্মাণ করা হবে। এই প্রকল্পের রিটেইল ডিজাইন ও ডিপিপি প্রণয়নের কাজ দ্রুততার সঙ্গে শেষ করতে প্রকৌশলীদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। বর্তমানে এই মহাসড়কটিতে এক পাশে সার্ভিস লেন রয়েছে। প্রকল্পের নতুন নকশায় সড়কের উভয় পাশের মূল দুই লেন করে ৪ লেনের পাশাপাশি দুটি সার্ভিস লেন রাখা হয়েছে। সড়কটি এমনভাবে নির্মাণ করা হবে যেন সার্ভিস লেন থেকে কোনো যানবাহন মূল সড়কে উঠতে না পারে। সার্ভিস রোডের ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা, বাজার এলাকার কাছে নির্দিষ্ট দূরত্বে ইউটার্ন থাকবে। এই ইউটার্ন ব্যবহার করে স্থানীয় পর্যায়ে চলাচলরত যানবাহন একপাশ থেকে অন্যপাশে যাওয়া-আশা করতে পারবে। এই সড়ক টেকসই করতে এবারই প্রথম পলিমার মোটিফাইড বিটুমিন ব্যবহার করা হবে।
জানা গেছে, সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের অধীনে ২১ হাজার ৩০২ কিলোমিটার জাতীয়, আঞ্চলিক ও জেলা সড়ক রয়েছে। দেশের সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থাকে বিশ্বমাসের সড়কে পরিণত করতে নানান প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। ২০৩০ সালের মধ্যে সব মহাসড়ক ৬ লেনে এবং ২০৪১ সালের মধ্যে এগুলো ৮ লেনে উন্নয়নের পরিকল্পনা রয়েছে। ইতোমধ্যেই ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-মাওয়া, ঢাকা-টাঙ্গাইলসহ মহাসড়কের উন্নয়ন কাজ শেষ হয়েছে। অন্যসব গুরুত্বপূর্ণ মহাসড়কের ৪ লেনে উন্নয়ন কাজ চলছে, এগুলো বাস্তবায়নের অপেক্ষায় রয়েছে। নতুন করে অনেক মহাসড়কের উন্নয়নে প্রকল্প নেয়া হয়েছে। ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক প্রকল্পের জন্য ২০১৩-১৪ সালের দিকে এডিবি প্রথম সমীক্ষা চালায়। কিন্তু নানান জটিলতার কারণে আর এগোয়নি। এরপর জিটুজি ভিত্তিতে চীনের অর্থায়নে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের চেষ্টা শুরু হয়। ২০১৭ সালের অক্টোবর মাসে চায়না হারবার ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানির সঙ্গে সরকারের একটি চুক্তিও হয়েছিল। ২০১৮ সালের প্রথম দিকেই প্রকল্পের কাজ শুরুর কথা ছিল। কিন্তু চায়না হারবার ইঞ্জিনিয়ারিং সওজ অধিদপ্তরের প্রাক্কলনের চেয়ে প্রায় ৪২ শতাংশ বেশি ব্যয় ধরে। এই প্রস্তাবে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় সম্মত হয়নি। ফলে প্রকল্পের ভবিষ্যৎ ঝুলে যায়। তখন সরকার নিজস্ব অর্থায়নে প্রকল্প বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত নেয়। ডিপিপি তৈরির পর পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হলেও কিছু সংশোধনী চেয়ে ফেরত পাঠানো হয়। সড়ক বিভাগ তা সংশোধন করে ডিপিপি আবার পরিকল্পনা কমিশনে পাঠায়। এরপর থেকেই প্রকল্প গতি পান।