গ্যাসের ব্যথা-না হার্টের, বুঝবেন যেভাবে
হঠাৎ বুকে ব্যথা অনুভব অনেকেই করেন। কিন্তু সেটি কি হার্টের সমস্যা, নাকি গ্যাসের কারণে? তা বুঝতে পারে না অনেকেই। এমন হলে প্রথমে ব্যথার ধরন বুঝতে এবং সতর্কতার সঙ্গে চিকিৎসা নিতে হবে।
এ বিষয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের হৃদরোগ বিভাগ অধ্যাপক এস এম মোস্তফা জামান গণমাধ্যমে বিস্তারিত জানিয়েছেন। তার নির্দেশনা নিচে দেয়া হলো:
হা’র্টের ব্যথার লক্ষণ : কিছু উপসর্গ আছে, যা হলে মনে করতে হবে হার্টের কোনো সমস্যার কারণে তা হচ্ছে এবং রোগী হা’র্ট অ্যাটাকের দিকে যাচ্ছে। যেমন—
# হার্টের সমস্যার কারণে ব্যথা হলে তা বুকের একেবারে মাঝখানে চাপ ধরা ব্যথা বা বুকের মধ্যে কিছু চেপে আছে এমনটি মনে হবে।# হাঁটলে বা সিঁড়ি ভাঙলে বুকের এই চাপ ধরা ভাব বেড়ে যাবে।
# ব্য’থা ধীরে ধীরে চোয়াল, ঘাড় বা পিঠের দিকে চলে যেতে পারে। একে বলে অ্যানজাইনাল পেইন।# শ’রীর প্রচণ্ড ঘেমে যাবে।# কোনো ক্ষেত্রে শ্বাসক’ষ্ট হতে পারে।
# মুখের রং ফ্যাকাসে বা কালচে হয়ে যেতে পারে।# ক্রমান্বয়ে হাত-পা ঠাণ্ডা হয়ে আসবে।# এ ধরনের ব্যথা ২০ থেকে ২৫ মিনিটের মতো স্থায়ী হতে পারে।
করণীয় :
# এ রকম মনে হলে সঙ্গে সঙ্গে চারটি ডিসপ্রিন ট্যাবলেট পানিতে গুলে বা চিবিয়ে খেয়ে ফেলুন। এতে হা’র্ট অ্যা’টাক থেকে মৃত্যুর আশঙ্কা ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ কমে যাবে।
# পাশাপাশি জিবের নিচে নাইট্রেট স্প্রে বা ট্যাবলেট দিয়ে রো’গীকে দ্রুত হৃদরোগের চিকিৎসা আছে এমন হাসপাতালে নিন।# হা’র্ট অ্যাটাক হলে দু-তিন ঘণ্টার মধ্যে হাসপাতালে নিয়ে সঠিক চিকিৎসা দিলে রোগী ভালো হয়ে যায়। এর আগে ইসিজি, ইকোকার্ডিওগ্রাম ও ট্রপটি-টি পরীক্ষা করালে সমস্যাগুলো জানা যাবে।
সতর্কতা :
ডায়াবেটিস রোগীরা অ্যানজাইনাল পেইন বুঝতে পারে না। যে নার্ভটি মস্তিষ্ক থেকে এই ধরনের ব্যথার অনুভূতি বহন করে, ডায়াবেটিস রোগীদের ক্ষেত্রে সেই নার্ভটি কাজ করে না। তবে আজকাল নন-ডায়াবেটিস রোগীরাও অনেক সময় অ্যানজাইনাল পেইন টের পায় না।
ব্যথাটি গ্যাসের ব্যথার সঙ্গে গু’লিয়ে ফেলে এবং সেই ধরনের ও’ষুধ সেবন করে। এতে সাময়িক স্বস্তি মিললেও হার্টের সমস্যা হলে পরে তা বড় আকারের বিপদ ডেকে আনতে পারে। আসলে ৮০ শতাংশ ক্ষেত্রে এ ধরনের সমস্যা হার্টের জন্য না হলেও ২০ শতাংশ ক্ষেত্রে কিন্তু হা’র্টের।
চিকিৎসা :
# রক্তনালির ভেতরের কোনো জায়গায় ব্লক তৈরি হয়ে রক্ত চলাচল বন্ধ হয়ে গেলে সেটি হার্ট অ্যা’টাক। তখন প্রাইমারি এনজিওপ্লাস্টি (বেলুন) করে ব্লক খুলে স্টেন্ট বসিয়ে দেওয়া হয়।
# হার্টের তিনটি প্রধান ধমনি থাকে। এগুলোতে সমস্যা হলে তাকে থ্রি ভেসেলস ডিজিজ বলে। এগুলোর মধ্যে এলএডি আর্টারিটি (বাঁ দিকের) সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।
হা’র্টের ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ রক্ত এটিই সরবরাহ করে। যদি দেখা যায় কারো এই আর্টারিগুলো ব্লকড হয়ে হার্টে রক্ত চলাচল আ’টকে গেছে, সেই মুহূর্তে এনজিওপ্লাস্টি করালে রোগী ভালো হয়ে যায়, যাকে বলে প্রাইমারি এনজিওপ্লাস্টি।
# যদি ট্রিপল ভেসেলস ডিজিজ হয় অর্থাৎ তিনটি আর্টারিই ক্ষ’তিগ্রস্ত হয়, পাশাপাশি হা’র্টের পাম্প করার ক্ষমতা কমে যায়, তখন বাইপাস সার্জারি করতে হবে।
বাঁচতে হলে :
# রোজ জোরে জোরে হাঁটুন অন্তত চার কিলোমিটার।# ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ থাকলে সেটি নিয়ন্ত্রণে রাখুন।# ভাত, রুটি, আলুর মতো কার্বোহাইড্রেটজাতীয় খাবারের পরিমাণ কমিয়ে দিন।
# রোজকার খাবারে তেলের পরিমাণ ১৫ থেকে ২০ মিলিলিটার করুন। মাসে তিন-চার দিন নিয়মের ব্যতিক্রম হলে অসুবিধা নেই। কিন্তু বাকি দিনগুলো এভাবেই চলতে হবে।# ধূমপান একেবারেই নয়।
তথ্যসংগ্রহঃশাহজাহান সরকার।