শাহজাহান সরকার,বিশেষ প্রতিনিধি।। পুরো সেতু দৃশ্যমান হওয়ায় পদ্মার দুই প্রান্তে উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করছে। স্বপ্নের সেতুর পূর্ণ অবয়ব একনজর দেখতে অনেকে ছুটে গেছেন পদ্মায়। পরিবারের সব সদস্য নিয়েও ছুটে এসেছেন কেউ কেউ। কনকনে শীতের মধ্যেও উৎফুল্ল জনতা সেখানে ক্যামেরাবন্দি করেন নিজেদের। কেউ কেউ সেলফি তুলতে ব্যস্ততম বিকাল অতিবাহিত করেন। আবার অনেকেই ট্রলারে করে পদ্মা নদীতে ঘুরে ঘুরে পুরো সেতু অবলোকন করেন। বেলুন উড়িয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন কেউ কেউ।
এদিকে গতকাল শুক্রবার ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়ের শিমুলিয়া মোড়ে আনন্দ মিছিল বের করে উপজেলা যুবলীগ। বেলা ১১টার দিকে ওই আনন্দ মিছিল শেষে সংক্ষিপ্ত পথসভায় যুবলীগ নেতারা পদ্মা সেতুর দৃশ্যমান হওয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন। নানা জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে বসে গেছে পদ্মা সেতুর শেষ স্প্যান (সুপার স্ট্রাকচার)। এর মধ্য দিয়েই পদ্মার বুকে দৃশ্যমান হলো সেতুর ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার অবকাঠামো। একটু একটু করে স্বপ্নের সিঁড়ি বেয়ে আরও একধাপ এগিয়ে গেল স্বপ্নের পদ্মা সেতু। বৃহস্পতিবার সর্বশেষ ৪১ নম্বর স্প্যান বসানো হয়। সংযোগ হয় জাজিরা-মাওয়া প্রান্ত।
এদিকে দৃশ্যমান পদ্মা সেতু দেখতে উল্লসিত জনতার ভিড় সামলাতে হিমশিম খেতে হয়েছে ট্রাফিক পুলিশকে। সাপ্তাহিক ছুটির দিনে পদ্মা পারে রীতিমতো ঢল নামে মানুষের। মাওয়া চৌরাস্তা থেকে পদ্মা পার পর্যন্ত এক কিলোমিটার এলাকাজুড়ে উৎসুক জনতার ভিড় লক্ষ করা গেছে। গতকাল রাত সাড়ে ৭টার দিকে এ রিপোর্ট লেখার সময় নারী-পুরুষ-শিশুর আনাগোনা অব্যাহত থাকে পদ্মা পারে।
পাঁচ বন্ধুকে সঙ্গে করে পদ্মা পারে ছুটে আসেন রাজধানীর উত্তরার ব্যবসায়ী মো. নয়ন। তিনি উত্তরায় জুমার নামাজ আদায় করেই মাওয়া প্রান্তের উদ্দেশে রওনা দেন। ছুটির দিন ও ঢাকা-মাওয়া সড়ক এক্সপ্রেসওয়ে হওয়াতে বিকাল তিনটার মধ্যেই পৌঁছে যান সেতুর কাছে। নয়ন বলেন, আমাদের সবার বাড়ি উত্তরবঙ্গে। আমাদের দেশে এত বড় সেতু হচ্ছে, তাই নিজের চোখে দেখতে চলে এলাম।
পৃথক দুই মোটরসাইকেলে চেপে তিন বন্ধুর সঙ্গে ঢাকার যাত্রাবাড়ী থেকে এসেছেন একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী মো. রবিন। এ শিক্ষার্থী অনুভূতি ব্যক্ত করেন এভাবে- পদ্মা সেতুর কথা এতদিন শুধু বন্ধুদের মুখে শুনেছি। ফেসবুক ও টিভিতে দেখেছি। এখন বাস্তবে দেখছি। বিশ্বাস করুন, আমার কাছে ঈদের খুশির চেয়েও বেশি মনে হচ্ছে। আমরা পারি, তাই-ই দেখিয়ে দিয়েছি।
পুলিশের এসবির মেহেদী হাসান মেহেদী স্ত্রী ও দুই মেয়েকে নিয়ে এসেছেন পদ্মা সেতু দেখতে। তিনি সেতুর পূর্ণাঙ্গ কাঠামো দেখে এতই আবেগাপ্লুত যে, কথা বলতে গিয়ে ভাষা খুঁজে পাচ্ছিলেন না। তবু দম নিয়ে বললেন, আমার বাড়ি পটুয়াখালীতে। ফেরি দিয়ে পারাপারে আর ভালো লাগে না। আজ সেতুর স্ট্রাকচার দেখে মন ভরে গেছে। বাংলাদেশি হিসেবে আমি গর্বিত।
এদিকে শুরু থেকেই স্বপ্নের পদ্মা সেতু নিয়ে অবহেলিত শরীয়তপুরবাসীর মধ্যে আনন্দ উচ্ছ্বাস একটু বেশিই লক্ষ করা গেছে। এখন পুরো পদ্মা সেতু দৃশ্যমান হওয়ায় উচ্ছ্বাসটা আরও বেড়ে গেল। তাই তারা এ পদ্মা সেতু দেখতে ভিড় করছে। দর্শনার্থীরা আগ্রহ নিয়ে বিভিন্ন নৌযানে করে নদীর বুকে ঘুরে ঘুরে তারা দেখছেন ছয় দশমিক ১৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে পদ্মা সেতু।
মাঝিরঘাট লঞ্চঘাটের ইজারাদার মনির খান বলেন, এ ঘাট দিয়ে নৌপথে প্রতিদিন ৬-৭ হাজার মানুষ ঢাকা-শরীয়তপুর যাতায়াত করে থাকেন। পদ্মা সেতুর পিলারের পাশ দিয়ে লঞ্চসহ অন্যান্য নৌযান চলাচল করে থাকে। এসব যাত্রীরা লঞ্চে বসেই পদ্মা সেতুর কাজ দেখেন, ছবি তোলেন। এর বাইরে ঘাট থেকে ট্রলার ও স্পিডবোট ভাড়া নিয়েও অনেকে দেখতে যাচ্ছেন স্বপ্নের পদ্মা সেতু।