শাহজাহান সরকার,বিশেষ প্রতিনিধি।।বাংলাদেশের অন্যতম পর্যটন স্পট পটুয়াখালীর কুয়াকাটা। বাংলাদের একমাত্র জায়গা সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের অপরূপ দৃশ্য অবলোকনের জন্য পর্যটকরা ছুটে যান এখানে। ১৮ কিলোমিটার দীর্ঘ এই সমুদ্র সৈকতে ভ্রমণপিপাসুদের ভিড় থাকে প্রায় সারা বছর। বিশেষ করে শীতে পর্যটকদের পদচারণায় মুখর থাকে এখানকার স্পটগুলো। কিন্তু করোনা ভাইরাস পাল্টে দিয়েছে দৃশ্যপট। এই মহামারীর প্রভাবে কুয়াকাটার হোটেল, মোটেল ও রিসোর্ট ব্যবসায়ীদের পর্যটন মৌসুমের শেষ দিকেও লোকসান গুনতে হচ্ছে। তাদের দাবি, প্রায় হাজার কোটি টাকার লোকসানের মুখে পড়েছেন তারা।
সেপ্টেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি, এই সময়টা পর্যটন খাতের ভরা মৌসুম হিসেবে পরিচিত। পর্যটননির্ভর ব্যবসায়ীরা সারা বছর অপেক্ষায় থাকেন এ সময়ের জন্য। আর এ সময়ের পুরোটা জুড়েই ছিল প্রাণঘাতী করোনার প্রভাব। অন্যান্য বছরে এই সময় কুয়াকাটার বিভিন্ন দর্শনীয় জায়গায় পর্যটকদের উপচে পড়া ভিড় থাকলেও এবারের চিত্র একেবারেই ভিন্ন। করোনা প্রতিরোধে কুয়াকাটার আবাসিক হোটেলগুলো স্বাস্থবিধি মেনে পর্যটক রাখার ব্যবস্থা গ্রহণ করাসহ নানা উদ্যোগ নিলেও আশানুরূপ পর্যটক আসছে না এখন। করোনার ২য় ঢেউয়ের কারণে অনেকেই বাতিল করছেন হোটেলের অগ্রিম বুকিং।
জানা গেছে, কুয়াকাটায় ছোট বড় আবাসিক হোটেলের সংখ্যা দেড় শতাধিক। ১০ হাজারেরও বেশি পর্যটক এখানে গড়ে অবস্থান করতে পারেন। সেখানে বিভিন্ন হোটেল মোটেলের ৮০ শতাংশ রুমই খালি পড়ে থাকছে। কোন কোন হোটেলে দৈনিক ৫০ হাজার থেকে লাখ টাকা পর্যন্ত লোকসান গুনছেন। খরচ কমাতে ছাঁটাই করা হয়েছে হোটেলের কর্মচারী। প্রতিদিনই ক্ষতির পরিমাণ বাড়ছে।
কুয়াকাটা পর্যটননির্ভর ও হোটেল মোটেল এবং রিসোর্টের ক্ষতির পরিমাণ হাজার কোটি টাকা বলে জানিয়েছেন হোটেল মোটেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সেক্রেটারি মো. মোতালেব শরীফ। তিনি আরও বলেন, লোকাল কিছু পর্যটক আসেন কুয়াকাটায়। তারা রাত যাপন করেন না। আবাসিক হোটেলে থাকার পর্যটকদের পরিমাণ একেবারেই কম।
কুয়াকাটায় আগত পর্যটকদের পছন্দের তালিকায় থাকে ফাতরারবন, সুন্দরবনের পূর্বাংশ, চর বিজয়। আর এসব জায়গায় যেতে স্পিডবোট আর ফাইবারের বোটে করে যেতে হয়। কিন্তু করোনার প্রভাবে পর্যটক না থাকায় সারাদিন ঘাটে বাঁধা থাকে এসব স্পিডবোট আর ফাইবারের বোটগুলো। খালি হাতেই ফিরতে হচ্ছে মালিক ও চালকদের।
কুয়াকাটা ট্যুরিস্ট বোট মালিক সমবায় সমিতির সভাপতি জনি আলমগীর বলেন, ভরা মৌসুমেই আমাদের বিপদে পড়তে হলো। করোনার কারণে আমার ৫ লক্ষাধিক টাকা ক্ষতি হয়েছে। জমানো টাকা শেষ হয়ে গেছে। কোনো রকম আমাদের দিন চলে।
সিকদার রিসোর্টের সহযোগী প্রতিষ্ঠান ওসানভিউ হোটেলের অপারেশন ম্যানেজার মো. আল আমিন খাঁন (উজ্জ্বল) বলেন, কুয়াকাটায় দিন দিন পর্যটকের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় নতুন অভিজাত হোটেল মোটেল ও রিসোর্ট নির্মাণ করা হয়েছে। লাভের আশা করে এসব স্থাপনা তৈরি করা হয়েছিল। তাতে লাভ না হয়ে উল্টো লোকসানে পড়তে হলো প্রাণঘাতী করোনার কারণে।
আবাসিক হোটেল খাঁন প্যালেসের ব্যবস্থাপক মো. রাসেল খাঁন বলেন, ৩০% রুম রিজার্ভ হয় বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার। বিশেষ ছাড়েও আশানুরূপ পর্যটক পাচ্ছি না।
ঘরোয়া রেস্তোরাঁর পরিচালক মো. কবির বলেন, পর্যটক না থাকায় আমাদের প্রতিদিন লোকসান হচ্ছে। লাভের কথা বাদই দিলাম, ঘরভাড়া কর্মচারী বেতন দিতে হিমশিম খাচ্ছি।
কুয়াকাটা আচারের স্বত্বাধিকারী মো. মিরাজ বলেন, পর্যটক না আসায় বেচাকেনা ভালো হয় না। স্থানীয় পর্যটকরা তেমন একটা আচার কিনেন না। তাই আমাদের দুর্দিন চলছে।
বাউফল কাঁকড়া ফ্রাইয়ের পরিচালক মো. জামাল ব্যাপারী বলেন, এমনিতেই আমাদের ব্যবসা ছয় মাসের। বাকি ছয় মাস আমরা অন্য কাজ করি। এবার পুরো মৌসুমই শেষ হয়ে গেল। পর্যটক না আশায় আমাদের প্রতিদিন ২০-৩০ হাজার টাকা লোকসান হচ্ছে।
মা শুঁটকি ঘরের পরিচালক মো. সোহেল মাহমুদ বলেন, গত বছরের শুঁটকি এখনো ঘরে পড়ে আছে। পর্যটক না আশায় আমার ৬-৭ লাখ টাকা লোকসান হয়েছে।