অনলাইন ডেস্ক।। রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ সাত দিনের সফরে কিশোরগঞ্জ রয়েছেন। এ কয়দিন তিনি ইটনা, মিঠামইন ও অষ্টগ্রাম উপজেলায় উন্নয়ন কর্মকাণ্ড পরিদর্শনসহ বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশ নেন। বুধবার (১৭ নভেম্বর) সন্ধ্যার পর কিশোরগঞ্জ শিল্পকলা একাডেমিতে জেলার জনপ্রতিনিধি, গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ, কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার বিশিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় অংশ নেন তিনি। সেখানে ইউপি নির্বাচনের প্রসঙ্গ তুলে রাষ্ট্রপতি বলেন, ইউপি নির্বাচন নিয়ে দেশের বিভিন্ন জায়গায় সহিংসতা, মারামারি ও খুনোখুনি হচ্ছে। সব জায়গায় জোর খাটানোর প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। কিন্তু জোর করে চেয়ারম্যান ও মেম্বার হয়ে প্রকৃত জনপ্রতিনিধি হওয়া যায় না। তাই জোর করে মানুষের সেবা করার মানসিকতা ছাড়তে হবে। জনগণ যাকে ভোট দেবেন তিনিই হবেন জনপ্রতিনিধি।
রাষ্ট্রপতি বলেন, ক্ষমতা হলো মানুষের কল্যাণের জন্য। ভালো কাজের জন্য ক্ষমতা। ক্ষমতার অপব্যবহার না করে মানুষের কল্যাণে এই ক্ষমতার চর্চা করতে হবে জনপ্রতিনিধি ও কর্মকর্তাদের। রাষ্ট্রপতি কিশোরগঞ্জ শহরের যানজট, পরিবেশ দূষণ, নদী-পুকুর ভরাটের বিষয়ে দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, আমাদের প্রিয় কিশারগঞ্জ শহর বলতে গেলে বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। রাস্তায় হাজার হাজার ইজিবাইক, রিকশা ও গাড়ি চলাচলের কারণে জনজীবন স্থবির হয়ে গেছে। শহরের পুকুরগুলো ভরাট হয়ে যাচ্ছে। কেউ কিছু বলছে না। নরসুন্দা নদীর অবস্থাও করুণ। এভাবে চলতে থাকলে শহরে আগুন লাগলে নেভানোর পানি পাবে না শহরবাসী। এখনই এ ব্যাপারে সমন্বিত পদক্ষেপ না নেওয়া হলে কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হবো আমরা। এ সময় তিনি কিশোর গ্যাংয়ের উৎপাত থেকে শহরবাসীকে পরিত্রাণ দিতে সবাইকে কঠোর ভূমিকা পালনের আহবান জানান।
তিনি করোনার প্রসঙ্গ এবং এ সময়ে বঙ্গভবনে নিজের কঠিন জীবনযাপনের কথা তুলে ধরে বলেন, করোনার আগে ছিলাম জেলখানায়। করোনা শুরু হওয়ার পরে শুধু সেল নয়, কমডেম সেলে জীবনযাপন করতে হচ্ছে আমাকে। একেবারে বিচ্ছিন্ন জীবন। আগে প্রতিদিন বঙ্গভবনে কিশোরগঞ্জের লোকজনসহ সারা দেশের অন্তত দেড় থেকে দুই শ লোক আমার সঙ্গে দেখা করত। কিন্তু এখন সেখানে কেউ যেতে পারে না। এই দুই বছর দুই মাসে হাতেগোনা কয়েকজন কর্মকর্তার চেহারা দেখতে দেখতে আমি ক্লান্ত হয়ে পড়েছি।
সমাবেশে সংসদ সদস্য রেজওয়ান আহমেদ তৌফিক, আফজল হোসেন, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট জিল্লুর রহমান, কিশোরগঞ্জের মেয়র মো. পারভেজ মিয়া, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এম এ আফজল, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক শাহ আজিজুল হক, সৈয়দ আশফাকুল ইসলাম টিটু, উইমেন চেম্বারের সভাপতি ফাতেমা তুজ জহুরা, গণতন্ত্রী পার্টির সভাপতি ভূপেন্দ্র ভৌমিক দোলন, সিপিবি সভাপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম, জেলা প্রেস ক্লাবে সভাপতি মোস্তফা কামাল, জেলা বিএমএ-এর সভাপতি ডা. মাহবুব ইকবালসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার গণ্যমান্য লোকজন উপস্থিত ছিলেন। রাষ্ট্রপতির বক্তৃতার পর উপস্থিত সুধী সমাজের প্রতিনিধিরা জেলার বিভিন্ন সমস্যা ও দাবি-দাওয়া নিয়ে বক্তব্য রাখেন।
এর আগে, বিকেলে কিশোরগঞ্জে প্রেসিডেন্ট আবদুল হামিদ মেডিক্যাল কলেজে অধ্যয়নরত বিদেশি শিক্ষার্থীরা রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। প্রেসিডেন্ট আবদুল হামিদ মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. আ. ন. ম নৌওশাদ খান কলেজের সার্বিক কর্মকাণ্ড সম্পর্কে রাষ্ট্রপতিকে অবহিত করেন। রাষ্ট্রপতির সচিবগণ এ সময় উপস্থিত ছিলেন। সাত দিনের সফর শেষে আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে রাষ্ট্রপতির ঢাকা ফিরে যাওয়ার কথা রয়েছে।