বিশেষ প্রতিনিধি।। চুয়াডাঙ্গায় মসজিদের সামনে উচ্চশব্দে গান বাজানোর প্রতিবাদ করায় মসজিদ কমিটির সভাপতি ও বিকাশ ব্যবসায়ী আরিফ হাসানকে (৩৮) এলোপাতাড়ি কুপিয়ে জখম করা হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। শনিবার রাত ১০টার দিকে দিকে চুয়াডাঙ্গা পৌর শহরের মহিলা কলেজ সড়কের লিচুতলায় এ ঘটনা ঘটে। এসময় আরিফ হাসানের চিৎকার শুনে স্থানীয় রক্তাক্ত জখম অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ভর্তি করে। আহত আরিফ হাসান চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকার সুমিরদিয়া স্কুলপাড়ার মৃত আমানত আলীর ছেলে, সুমিরদিয়া স্কুলপাড়া জামে মসজিদের সভাপতি ও চুয়াডাঙ্গা কোর্ট মোড়ের বিকাশ ব্যবসায়ী।
জানা যায়, গত ৩১ ডিসেম্বর (থার্টি ফার্স্ট) বিকেলে আসরের আজানের সময় স্কুলপাড়া মসজিদের সামনে উচ্চশব্দে গান বাজাচ্ছিলেন কেদারগঞ্জপাড়ার আকবার আলীর ছেলে শরিফুল ওরফে ছোটনসহ বেশকিছু যুবক। এসময় মসজিদ কমিটর সভাপতি আরিফ হাসানসহ কমিটির সদস্যরা তাদেরকে আজানের সময় গান বাজাতে নিষেধ করে। এসময় সভাপতি আরিফ হাসানসহ কমিটির সদস্যদের সাথে শরিফুল ওরফে ছোটনসহ ওই যুবকদের মধ্যে বাগবিতণ্ডার সৃষ্টি হয়। একপর্যায়ে হাতাহাতির ঘটনা ঘটলে উভয়পক্ষ চুয়াডাঙ্গা সদর থানায় পাল্টা-পাল্টি অভিযোগ করে। ঘটনার পদিন উভয়পক্ষকে সদর থানায় হাজির করে একটি আপস-মীমাংসা করে দেয় থানা কর্তৃপক্ষ।
অভিযোগ পাওয়া গেছে, এ ঘটনার জের ধরে গতকাল রাতে একা পেয়ে আরিফ হাসানকে এলোপাতড়ি কুপিয়ে জখম করে শরিফুল ওরফে ছোটনসহ দুজন। পরে আরিফের চিৎকারে স্থানীয় ব্যক্তিরা ছুটে গেলে পালিয়ে যায় ঘাতক শরিফুল ও তার সঙ্গী। স্থানীয় ব্যক্তিরা রক্তাক্ত জখম অবস্থায় আরিফকে উদ্ধার করে সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নেয়। জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক আরিফকে তাৎক্ষণিক চিকিৎসা দিয়ে হাসপাতালের পুরুষ সার্জারি বিভাগে ভর্তি করেন।
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আরিফ হাসান বলেন, ‘প্রতিদিনের ন্যায় রাত সাড়ে নয়টার দিকে আমার বিকাশের দোকান বন্ধ করে বাইসাইকেলযোগে নিজ বাড়ির দিকে যাচ্ছিলাম। পথের মধ্যে চুয়াডাঙ্গা মহিলা কলেজের অদূরে ফিরোজ রোডের লিচু গাছের নিকটে পৌঁছালে পেছন থেকে ছোটন আমাকে ডাকতে থাকে। এসময় আমি সাইকেল না থামিয়ে বাড়ির দিকে এগুতে থাকলে পেছন থেকে ছোটন দৌড়ে এসে আমার পিঠে একটি কোপ মারে। আমি ভয় পেয়ে আরো দ্রুত সাইকেল চালানো চেষ্টা করলে ছোটনসহ দুজন মিলে পেছন থেকে দৌড়াতে দৌড়াতে আমার পিঠে কোপ মারতে থাকে। এসময় আমি রাস্তার পাশের একটি বালির স্তুপে পড়ে গেলে তারা আমার মাথায় ও হাতে এলোপাতাড়ি কোপাতে থাকে। আমি প্রাণভয়ে চিৎকার করলে স্থানীয় কয়েকজন চিৎকার করতে করতে ছুটে এলে ওরা দুজনেই পালিয়ে যায়। আমার সঙ্গে একটি ব্যাগে দোকানের তিন লাখ নগদ টাকা ছিল। ওরা পালানোর সময় সেই টাকার ব্যাগ নিয়ে গেছে।’
চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. সোহরাব হোসেন বলেন, ‘রাত ১০টার পরে আরিফ হাসান নামের এক রক্তাক্ত জখম ব্যক্তিকে কয়েকজন মিলে জরুরি বিভাগে নেয়। তাকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে জখম করা হয়েছে বলে জানতে পারি। জরুরি বিভাগে আমরা আরিফের পিঠে, মাথায়, হাতে ও পায়ে ধারাল অস্ত্রের এলোপাতাড়ি জখমের চিহ্ন পেয়েছি। তার ক্ষতস্থানগুলোতে ৬০টির অধিক সেলাই দেয়া হয়েছে। আরিফের পিঠের ক্ষতটি সবথেকে গভীর। তার শরীর থেকে প্রচুর রক্তক্ষরণও হয়েছে। জরুরি বিভাগ থেকে তাকে তাৎক্ষণিক চিকিৎসা শেষে হাসপাতালের সার্জারি বিভাগে অবজারভেশনে রাখা হয়েছে। অবস্থার অবনতি হলে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করা হতে পারে।’
এ বিষয়ে চুয়াডাঙ্গা সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (তদন্ত) মাসুদুর রহমান বলেন, ‘মসজিদের সামনে গান বাজানোকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট বিরোধের জেরে মসজিদ কমিটির সভাপতি আরিফ হাসানকে কুপিয়ে জখম করা হয়েছে বলে জানতে পেরেছি। গত ৩১ ডিসেম্বর বিকেলে মসজিদের সামনে গান বাজানোকে কেন্দ্র করে মসজিদ কমিটি ও স্থানীয় কয়েকজন যুবকের মধ্যে একটি বিরোধের সৃষ্টি হয়। পরদিন উভয় পক্ষকে থানায় ডেকে বিষয়টির সমাধানও করা হয়েছিল। এ বিষয়ে এখন পর্যন্ত কোনো অভিযোগ পাইনি। তবে অভিযুক্তদের ধরতে পুলিশের একটি টিম মাঠে কাজ করছে।