*তদন্ত কমিটির তিনটি সুপারিশ
খোকন আহম্মেদ হীরা, বরিশাল :- একদিকে নদীর ভাঙন, অন্যদিকে নেই সীমানা প্রাচীর, আবার ক্ষয়ে গেছে রানওয়ের বেশ কিছু জায়গা। সবমিলিয়ে বিমান চলাচলে মারাত্মক ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে দক্ষিণাঞ্চলের একমাত্র বরিশাল বিমানবন্দর। দ্রæত এসব সমস্যা সমাধান করা না হলে যেকোন সময় ঘটতে পারে বড় ধরনের দুর্ঘটনা।
অতিসম্প্রতি বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের তদন্ত কমিটির সরেজমিন তদন্তে বিমানবন্দরের এমন ঝুঁকির চিত্র উঠে এসেছে। এমনকি গত ১৩ জানুয়ারি তদন্ত কমিটির প্রধান মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (পরিকল্পনা) সুকেশ কুমার সরকার বরিশাল বিমানবন্দরে ঝুঁকির বিষয়টি তুলে ধরে প্রতিবেদন দাখিল করেছেন। একইসাথে প্রতিবেদনে ঝুঁকিমুক্ত বিমানবন্দর গড়ে তুলতে তিন দফা সুপারিশও করা হয়েছে। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য চিঠি দেওয়া হয়েছে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষকে (বেবিচক)।
বুধবার সকালে সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা গেছে, এর আগে চলতি বছরের ৩ জানুয়ারি বরিশালের বাবুগঞ্জ উপজেলাধীন রহমতপুরে অবস্থিত বরিশাল বিমানবন্দর পরিদর্শন করেন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব সুকেশ কুমার সরকার। এসময় বরিশাল বিমানবন্দরের ব্যবস্থাপক ও বেবিচকের নির্বাহী প্রকৌশলী জাহাঙ্গীর আরিফুজ্জামান এবং পানিউন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী উপস্থিত ছিলেন। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, আড়িয়াল খাঁ নদের শাখা এবং সুগন্ধা নদীর তীরে অবস্থিত বরিশাল বিমানবন্দরটি। নদীর তীরে তীব্র ভাঙনের কারণে ঝুঁকিতে রয়েছে বিমানবন্দর। ভাঙনের থেকে ৭৫ মিটার দূরে বিমানবন্দরের উত্তর পাশের সীমানা প্রাচীর। বিমানবন্দরের নিরাপত্তা দেয়ালেরও বিভিন্ন অংশ ভাঙা। রানওয়ে দিয়ে অবৈধভাবে তৈরি করা হয়েছে এলাকাবাসীর যাতায়াতের রাস্তা, যা বিমান চলাচলে নিরাপত্তাঝুঁকি আছে। আবার বিমানবন্দরের রানওয়ের বেশ কিছু জায়গা ক্ষয়ে গেছে। দ্রæত মেরামত করা না হলে বড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। তাছাড়া দুটি বিমান পাশাপাশি দাঁড়ানো এবং চলাচলের জন্য নির্মিত অ্যাপ্রোনটিও পর্যাপ্ত নয় বলে উল্লেখ করা হয়েছে তদন্ত প্রতিবেদনে।
প্রতিবেদনে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বরাত দিয়ে উল্লেখ করা হয়েছে, নদীর ভাঙন মোকাবেলায় ভাঙনমুখে ১২০ মিটার দৈর্ঘ্য বরাবর ১০ হাজার ৩১০টি জিওব্যাগ ডাম্পিং করা হচ্ছে। এজন্য কোন প্রকল্প অনুমোদন ও বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত বিমানবন্দরের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ ৫০০ মিটার এলাকায় ৮৬ হাজার জিওব্যাগ ডাম্পিং করা হলে তীর রক্ষা সম্ভব হবে। এজন্য প্রয়োজন প্রায় সাড়ে চার কোটি টাকা। তাছাড়া সুগন্ধা নদীর বিভিন্ন ভাঙন এলাকার জন্য প্রায় এক হাজার ২১২ কোটি টাকার একটি উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) তৈরি করা হয়েছে। এ কাজের জন্য বিস্তারিত সমীক্ষা চলছে। এছাড়া নদীর ভাঙন প্রতিরোধে হাতে নেওয়া হয়েছে আরেকটি ড্রেজিং প্রকল্প।
সূত্রমতে, তদন্ত প্রতিবেদনে বরিশাল বিমানবন্দর রক্ষার পাশাপাশি নিরাপত্তা ঝুঁকি মোকাবেলার জন্য তিন দফা সুপারিশ করেছে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের তদন্ত কমিটি। সুপারিশে বলা হয়েছে, নদীর ভাঙন হতে বিমানবন্দর রক্ষায় পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় এবং পানিউন্নয়ন বোর্ডের সাথে যোগাযোগ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা জরুরি। বিমানবন্দরের নিরাপত্তার জন্য যেসব স্থানে নিরাপত্তা দেয়াল নেই, সেগুলো দ্রæত নির্মাণ এবং রানওয়েসহ ভবন মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণ করতে হবে।
বরিশাল বিমানবন্দরের প্রকৌশলী মশিউর রহমান জিহাদ জনকণ্ঠকে বলেন, ঝুঁকি মোকাবেলার বিষয়ে ইতোমধ্যে চেয়ারম্যান স্যারের কাছে নির্দেশনা এসেছে। আশাকরছি খুব শীঘ্রই তিনি আমাদের নির্দেশনা দিবেন।