অনলাইন ডেস্ক।। দেশের কোনো কোনো অঞ্চলে কিছু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী অনুপাতে শিক্ষকের সংখ্যা অপ্রতুল আবার কোথাও বেশি। সমস্যা আছে অবকাঠামোগতও। যেমন- শ্রেণিকক্ষ কম, শিক্ষার্থী বেশি। শিক্ষার্থী কম, শ্রেণি কক্ষ বেশি। প্রাথমিক স্তরে মানসম্পন্ন পাঠদান নিশ্চিতে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এ ধরনের সমস্যা চিহ্নিত করে সমন্বয়ের উদ্যোগ নিচ্ছে। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব আমিনুল ইসলাম খান নিজ দপ্তরে রাঙা প্রভাতকে এ তথ্য জানান।
সচিব বলেন, বিভিন্ন জেলায় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিদর্শনকালে দেখা গেছে, কোনো স্কুলে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের দুই শিফট করে ক্লাস নিতে হয়। শিক্ষার্থীর তুলনায় শ্রেণিকক্ষ কম। আবার কোথাও শ্রেণিকক্ষ শিক্ষার্থীর তুলনায় বেশি আছে। কোনো সরকারি স্কুলে একজন প্রধান শিক্ষকসহ চারজন সহকারী শিক্ষক আছেন। আবার কোনো স্কুলে তিনটি শ্রেণিকক্ষ। তিনজন ক্লাস নেন। বাকি দুই শিক্ষক ক্লাস নিতে পারেন না। এ ধরনের স্কুলে শিক্ষকরা নিজেরা একটা রুটিন তৈরি করে ফেলছেন, তারা কোন তিনজন কবে ক্লাস নেবেন। বাকিরা স্কুলেই আসেন না। এভাবে স্কুল চলা ঠিক না। প্রাথমিক স্তরে মানসম্পন্ন পাঠদান নিশ্চিতে এ ধরনের সমসা সমাধানের পথ খোঁজা হচ্ছে। দেশের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোর কোথায় কত শিক্ষার্থী ও শিক্ষক আছেন, নেওয়া হচ্ছে তার চিত্র। এ ছাড়া স্কুলগুলোয় অবকাঠামো কেমন সেটাও খোঁজ নেওয়া হচ্ছে। এ থেকে আমরা (মন্ত্রণালয়) শিক্ষার্থী অনুপাতে শিক্ষক, শ্রেণিকক্ষ, ক্লাসের শিফট চালু করে সমন্বয় করব।
খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, সেখানকার ময়নাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তিনজন শিক্ষক
থাকলেও ছাত্র মাত্র একজন। এ ছাড়া উপজেলার আরও ২০টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৫০ জনেরও নিচে। উপজেলার ২১৪টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ১১০টির সঙ্গে নতুন করে জাতীয়করণকৃত ১০৪টি বিদ্যালয়ে মোট শিক্ষার্থীর সংখ্যা ২২ হাজার ৬১৭ জন। তবে ২১টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে পুরনো আটটি ও নতুন জাতীয়করণকৃত ১৩টির শিক্ষার্থী সংখ্যা ৫০ জনের নিচে রয়েছে। এর মধ্যে নতুন জাতীয়করণকৃত ময়নাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দ্বিতীয় শ্রেণিতে একজন ছাত্র।
ডুমুরিয়ার বিপরীত তথ্য পাওয়া গেছে কুড়িগ্রামের চিলমারী উপজেলার অষ্টমীরচর ইউনিয়নের ডাটিয়ারচরে অবস্থিত দক্ষিণ নটারকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। স্কুলটি দুই শতাধিক শিক্ষার্থীর বিপরীতে একজন শিক্ষক দিয়েই চলছে। ২০২০ সালে করোনা মহামারীর শুরুর দিকে স্কুলটির ২ জন শিক্ষক ও পরে প্রধান শিক্ষকসহ আরও একজন অবসরে যান। ফলে ২০১৩ সালে চাকরিতে যোগ দেওয়া শিক্ষক রোজিনা খাতুনের ওপর দায়িত্ব পড়ে সব শিক্ষার্থীর। বর্তমানে অফিস, বিদ্যালয়ের কাজ, ক্লাস নেওয়াসহ সব দায়িত্বই একা সামলাচ্ছেন তিনি। এ ধরনের সংবাদের পর দেশব্যাপী স্কুলগুলোর তথ্য নিচ্ছে প্রাথমিক শিক্ষা প্রশাসন। এরপর শুরু হবে সমন্বয় কার্যক্রম।
বর্তমানে সারাদেশে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় আছে ৬৫ হাজার ৫৬৬টি। এগুলোয় মোট শিক্ষক আছেন প্রায় পৌনে চার লাখ। শিক্ষার্থী প্রায় দুই কোটি। এখন নতুন করে আরও ৪৫ হাজার সহকারী শিক্ষক নিয়োগের প্রক্রিয়া চলছে।