বিশেষ প্রতিনিধি।। টঙ্গীর তুরাগ নদের তীরে তাবলীগ জামাতের দ্বিতীয় পর্বের তিন দিনের বিশ্ব ইজতেমা আজ শুক্রবার থেকে শুরু হচ্ছে। এ পর্বে দিল্লির সা’দ অনুসারী ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা অংশগ্রহণ করছেন। শুক্রবার বাদ ফজর থেকে ইজতেমার কার্যক্রম শুরু হলেও কার্যত গতকাল বৃহস্পতিবার বাদ আসর থেকেই পাকিস্তানের মাওলানা উসমানের আম বয়ানের মাধ্যমে ইজতেমা অনানুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু হয়ে গেছে।
এ পর্বের ইজতেমায়ও আগত মুসল্লিদের উদ্দেশে ইমান আমলের ওপর তাবলীগ জামাতের শীর্ষস্থানীয় দেশি-বিদেশি বুজুর্গ আলেমগণ গুরুত্বপূর্ণ বয়ান করছেন। শুরুর দিন শুক্রবার ইজতেমা ময়দানে অনুষ্ঠিত হবে বৃহত্তম জুমার নামাজ। এতে ইমামতি করবেন ভারতের মাওলানা ইউসুফ বিন সা’দ। গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত অর্ধশতাধিক দেশের প্রায় ৫ হাজার বিদেশি মেহমান ময়দানে তাদের জন্য নির্ধারিত নিবাসে অবস্থান নিয়েছেন বলে জানিয়েছেন বিশ্ব ইজতেমার মিডিয়া সমন্বয়কারী মোহাম্মদ সায়েম। আগামী রবিবার আখেরি মোনাজাত-পূর্ব পর্যন্ত তাবলীগ জামাতের শীর্ষস্থানীয় বুজুর্গ মুরুব্বিরা বিভিন্ন ভাষায় পর্যায়ক্রমে গুরুত্বপূর্ণ বয়ান করবেন।
এ পর্বের ইজতেমায় অংশগ্রহণের জন্য তীব্র শীত ও ঘন কুয়াশা উপেক্ষা করে বুধবার থেকেই বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা জামাতভুক্ত হয়ে তুরাগতীরে বিশাল ময়দানে সমবেত হচ্ছেন। মহান আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টি অর্জনে ইবাদত বন্দেগি আর কোরআন হাদিসের আলোচনায় এখন বিশ্ব ইজতেমার সামিয়ানার নিচে বিরাজ করছে ধর্মীয় আবহাওয়া। গত পর্বের মতো এবারও ধর্মপ্রাণ মুসল্লিদের সমাগমে টঙ্গীর শিল্প শহরটি জনসমুদ্রে পরিণত হতে চলেছে। দ্বিতীয় পর্বের ইজতেমা চলাকালীন ট্রাফিক ও যাতায়াত ব্যবস্থা প্রথম পর্বের মতো বলবত থাকবে বলে ইজতেমা পরিচালনা কমিটিসহ গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ, গাজীপুরের জেলা প্রশাসকসহ সরকারের বিভিন্ন সংস্থা এ প্রতিনিধিকে জানিয়েছে।
এবারের ইজতেমায় বিশ্ব তাবলীগ জামাতের ভারতের শীর্ষ মুরুব্বি মাওলানা সা’দ কান্ধলভির অংশগ্রহণের সম্ভাবনা না থাকলেও বৃহস্পতিবার সকালে তার তিন ছেলে ও মেয়ের জামাতা ময়দানে এসেছেন। তারা হলেন, মাওলানা সা’দ কান্ধলভির বড় ছেলে মাওলানা ইউসুফ কান্ধলভি, মেজো ছেলে মাওলানা সাঈদ কান্ধলভি ও ছোট ছেলে মাওলানা ইলিয়াস কান্ধলভি। এ ছাড়া তাদের সঙ্গে মাওলানা সা’দের মেয়ের জামাতা মাওলানা হাসানসহ সাত জনের একটি জামাত ময়দানে উপস্থিত হয়েছেন। বর্তমানে তারা বিদেশি তাঁবুর ১ নম্বর বিল্ডিংয়ে বিশ্ব ইজতেমার শীর্ষস্থানীয় শুরা সদস্যদের সঙ্গে অবস্থান করছেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ইজতেমার মিডিয়া সমন্বয়কারী মোহাম্মদ সায়েম।
ময়দানে দ্বিতীয় পর্বে খিত্তাওয়ারি
মুসল্লিদের অবস্থান :
দ্বিতীয় পর্বে পুরো ইজতেমা ময়দানকে ৮৫টি খিত্তায় ভাগ করা হয়েছে। আগত ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা যেসব খিত্তায় অবস্থান করবেন তা হলো—ঢাকা (খিত্তা নং ১-৪, ৬-২২), টঙ্গী (খিত্তা নং-৪), নরসিংদী (খিত্তা নং-২৩), গোপালগঞ্জ (খিত্তা নং-২৪), মাদারীপুর (খিত্তা নং-২৫), ফরিদপুর (খিত্তা নং-২৬), রাজবাড়ী (খিত্তা নং-২৭), শরীয়তপুর (খিত্তা নং-২৮), নারায়ণগঞ্জ (খিত্তা নং-২৯), কিশোরগঞ্জ (খিত্তা নং-৩০), টাঙ্গাইল (খিত্তা নং-৩১), মানিকগঞ্জ (খিত্তা নং-৩২), মুন্সীগঞ্জ (খিত্তা নং-৩৩), গাজীপুর (খিত্তা নং-৩৪), বগুড়া (খিত্তা নং-৩৫), নওগাঁ (খিত্তা নং-৩৬), নাটোর (খিত্তা নং-৩৭), মৌলভীবাজার (খিত্তা নং-৩৮), সিলেট (খিত্তা নং-৩৯), রাজশাহী (খিত্তা নং-৪০), চাঁপাইনবাবগঞ্জ (খিত্তা নং-৪১), পাবনা (খিত্তা নং-৪২), সিরাজগঞ্জ (খিত্তা নং-৪৩), জয়পুরহাট (খিত্তা নং-৪৪), ব্রাহ্মণবাড়িয়া (খিত্তা নং-৪৫), চাঁদপুর (খিত্তা নং-৪৬), কুমিল্লা (খিত্তা নং-৪৭), খাগড়াছড়ি (খিত্তা নং-৪৮), নেত্রকোনা (খিত্তা নং-৪৯), ময়মনসিংহ (খিত্তা নং-৫০), জামালপুর (খিত্তা নং-৫১), সুনামগঞ্জ (খিত্তা নং-৫২), হবিগঞ্জ (খিত্তা নং-৫৩), শেরপুর (খিত্তা নং-৫৪), কক্সবাজার (খিত্তা নং-৫৫), রাঙ্গামাটি (খিত্তা নং-৫৬), বান্দরবান (খিত্তা নং-৫৭), চট্টগ্রাম (খিত্তা নং-৫৮), নোয়াখালী (খিত্তা নং-৫৯), ফেনী (খিত্তা নং-৬০), লক্ষ্মীপুর (খিত্তা নং-৬১), পিরোজপুর (খিত্তা নং-৬২), বরগুনা (খিত্তা নং-৬৩), ঝালকাঠি (খিত্তা নং-৬৪), পটুয়াখালী (খিত্তা নং-৬৫), ভোলা (খিত্তা নং-৬৬), বরিশাল (খিত্তা নং-৬৭), কুষ্টিয়া (খিত্তা নং-৬৮), চুয়াডাঙ্গা (খিত্তা নং-৬৯), বাগেরহাট (খিত্তা নং-৭০), নড়াইল (খিত্তা নং-৭১), খুলনা (খিত্তা নং-৭২), যশোর (খিত্তা নং-৭৩), মাগুরা (খিত্তা নং-৭৪), ঝিনাইদহ (খিত্তা নং-৭৫), সাতক্ষীরা (খিত্তা নং-৭৬), মেহেরপুর (খিত্তা নং-৭৭), নীলফামারী (খিত্তা নং-৭৮), দিনাজপুর (খিত্তা নং-৭৯), রংপুর (খিত্তা নং-৮০), লালমনিরহাট (খিত্তা নং-৮১), ঠাকুরগাঁও (খিত্তা নং-৮২), গাইবান্ধা (খিত্তা নং-৮৩), পঞ্চগড় (খিত্তা নং-৮৪) ও কুড়িগ্রাম (খিত্তা নং-৮৫)।
ইজতেমার মিডিয়া সমন্বয়কারী মোহাম্মদ সায়েম জানান, ইতিমধ্যে ইজতেমা ময়দানের যাবতীয় প্রস্তুতির কাজ সম্পন্ন হয়েছে। ইজতেমার আয়োজক তাবলীগ জামাতের স্বেচ্ছাসেবীদের প্রস্তুতি ছাড়াও সংশ্লিষ্ট সেবাদানকারী সংস্থাগুলো তাদের প্রস্তুতি সম্পন্ন করছেন। ২২ জানুয়ারি আখেরি মোনাজাতের মধ্যদিয়ে শেষ হবে নিজাম উদ্দিন মারকাজ অনুসারী মূলধারার তিন দিনের বিশ্ব ইজতেমা। এদিকে গাজীপুর মেট্রোপলিটনের পুলিশ কমিশনার মোল্যা নজরুল ইসলাম বৃহস্পতিবার সকালে ইজতেমা কন্ট্রোলরুমের সামনে ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের বলেন, দ্বিতীয় পর্বেও নিরাপদ পরিবেশে ইজতেমা আয়োজনে পুলিশের পক্ষ থেকে সার্বিক প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। নিরাপত্তার জন্য গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের পাশাপাশি র্যাব, গোয়েন্দা সংস্থা ও আনসার বাহিনীর সদস্যরা মোতায়েন থাকবেন। এছাড়া সাদা পোশাকে বিভিন্ন খিত্তায় পুলিশের তীক্ষ্ণ নজরদারি রাখা হবে। কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ছাড়া দ্বিতীয় পর্বের ইজতেমাও সফলভাবে সম্পন্ন হবে বলে আশা করি।