✪ মিয়া রোকন।। বাবুগঞ্জের মধ্য পাংশা গ্রামের ৭নং ওয়ার্ডের মামলাবাজ ও ভূমি দস্যু তোরাব আলীর অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে প্রতিবাদ সভা এবং সংবাদ সম্মেলন করেছেন স্থানীয়রা। উপজেলার মাধবপাশা ইউনিয়নের মধ্য পাংশা গ্রামের মৃত সৈয়দ আদম আলীর পুত্র সৈয়দ তোরাব ওরফে তোরাব আলীর (৪৫) বিরুদ্ধে পাংশা মুসলিম ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন ক্লাব মাঠে গতকাল ওই প্রতিবাদ সভা অনুষ্ঠিত হয়। পাংশা মুসলিম ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সিনিয়র সহ-সভাপতি ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুস সাত্তার মোল্লার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত প্রতিবাদ সভায় বক্তব্য রাখেন ভুক্তভোগী স্থানীয় প্রয়াত বীর মুক্তিযোদ্ধা সোবহানের স্ত্রী মমতাজ বেগম, গৃহবধূ শিফা বেগম, শিউলি আক্তার, জয়দেব মন্ডল, সাখাওয়াত হোসেন, মনির হোসেন প্রমুখ।
প্রতিবাদ সভার সভাপতি আব্দুস সাত্তার মোল্লা অভিযোগ করে বলেন, ‘তোরাব আলী একজন চিহ্নিত মামলাবাজ, ভূমিদস্যু, চাঁদাবাজ, নারীলিপ্সুক ও জুলুমবাজ প্রকৃতির লোক। তাঁর ভয়ে এলাকার কেউ মুখ খুলতে সাহস পায় না। তিনি গ্রামের কোথাও জমি সংক্রান্ত বিরোধ দেখা দিলে সেখানে গিয়ে একপক্ষকে দিয়ে অন্যপক্ষের নামে মামলা ঠুকে দেন। সেই মামলার নিজেই তদবির করেন। পরবর্তীতে সেই মামলা তুলে নিতে আবার আরেকপক্ষের কাছ থেকে মোটা অংকের চাঁদা আদায় করেন। তিনি গ্রামের অসংখ্য মানুষকে ৪-৫টা করে মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে দিয়েছেন। এছাড়া তিনি সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ে আমার বাড়িতে কয়েকবার হামলা চালিয়েছেন এবং আমাকে মারপিট করে এলাকাছাড়া করার হুমকি দিচ্ছেন।’
মধ্য পাংশা গ্রামের প্রয়াত বীর মুক্তিযোদ্ধা সৈয়দ সোবাহানের স্ত্রী মমতাজ বেগম অভিযোগ করে বলেন, ‘তোরাব আলী আমার পুত্রবধূ মাহিনুরকে দিয়ে আমার ছেলেদের নামে ৪-৫টা মামলা করিয়েছেন। এখন তিনি ৫ লাখ টাকা চাচ্ছেন সেই মামলা তুলে নেওয়ার জন্য। নাহলে তাকে জমি লিখে দিতে হবে।’
একই গ্রামের আদিল শেখের স্ত্রী শিউলি বেগম বলেন, তোরাব আলী আমার জায়গাজমি ঠিক করে দেওয়ার নাম করে ১ লক্ষ টাকা নেন। কিন্তু কিছুই করেননি। ওই টাকা চাইতে গেলে তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে আমার বাড়িতে ভাংচুর-লুটপাট চালিয়ে আমার ছেলেকে কুপিয়ে জখম করেন। তার ভয়ে বর্তমানে আমি গ্রামছাড়া। বাড়ি ছেড়ে সাতমাইলে গিয়ে ভাড়াবাসায় থাকি।’
স্থানীয় সৈয়দ সোলায়মানের স্ত্রী শিফা বেগম বলেন, ‘তোরাব আলী আমার জা মাহিনুরকে দিয়ে আমার স্বামীর নামে ২-৩টা মামলা দেন এবং আমার স্বামীকে মারপিট করে ঘরে আটকে রাখেন। পরে ৯৯৯ ফোন দিলে পুলিশ এসে আমার স্বামীকে উদ্ধার করে। বর্তমানে তার ভয়ে আমরা ঢাকাতেও শান্তিতে থাকতে পারছি না। সেখানেও তিনি হুমকি দিচ্ছেন।’
মধ্য পাংশা গ্রামের সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘তাদের এজমালি ৩.২৬ একর জমি একেক পর এক মামলা দিয়ে দখল করেছেন তোরাব আলী।’ একই গ্রামের সংখ্যালঘু জয়দেব মন্ডল জানান, প্রতিপক্ষ খোকন বেপারিকে সাথে নিয়ে তোরাব আলী তাদের ৬ ভাইকে দেশ থেকে উৎখাত করার ষড়যন্ত্র করছেন। এছাড়াও মনির হোসেনসহ প্রতিবাদ সভা ও সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত মধ্য পাংশা গ্রামের অর্ধশতাধিক বাসিন্দার অভিযোগ প্রায় অভিন্ন।
এদিকে এসব অভিযোগ সরাসরি অস্বীকার করে অভিযুক্ত সৈয়দ তোরাব ওরফে তোরাব আলী বলেন, ‘আমি যুবলীগ এবং কমিউনিটি পুলিশিং কমিটির সদস্য। তাই পুলিশের সাথে আমার চলাফেরা। কিন্তু পুলিশের দাপট দেখিয়ে আমি কারও জমি দখল কিংবা কারও নামে কোনো মামলা দেইনি। এসব অভিযোগ সম্পূর্ণ বানোয়াট এবং ভিত্তিহীন। মুক্তিযোদ্ধা সোবাহানের বিধবা পুত্রবধূ মাহিনুর বেগমকে তার শাশুড়ি, ননদ এবং দুই জা’ মিলে বাড়ি থেকে বাচ্চাসহ বিতাড়িত করেন। পরে বরিশালের ৩০ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর কালাম মোল্লার নির্দেশে আমি সেই ঘটনার সালিস করি এবং তিনিও সেখানের একজন সালিসদার ছিলেন। সালিসিতে মমতাজ, শিউলি, শিফা, সোলায়মান গংদের পক্ষ হেরে যায়। ৩ সন্তানসহ বিধবা মাহিনুর বেগমকে তার স্বামীর সম্পত্তির অধিকার থেকে বঞ্চিত করতে চেয়েছিলেন তারা। আমি এই অসহায় মহিলাকে ন্যায়বিচার পেতে সাহায্য করেছি। কাউন্সিলর কালাম মোল্লাসহ আমার সহায়তায় বসতঘর ফিরে পান মাহিনুর বেগম। সালিসিতে হেরে গিয়ে এই একটা পরিবারই তাদের আত্মীয়-স্বজন নিয়ে আমার বিরুদ্ধে পরিকল্পিতভাবে এসব ষড়যন্ত্র করছে।’