স্পোট্স অনলাইন ডেস্ক।। ১৩৮ রানের সহজ লক্ষ্য স্বাচ্ছন্দ্যেই পাড়ি দিল বাংলাদেশ। আয়ারল্যান্ডকে ৭ উইকেটে হারিয়েছে টাইগাররা। প্রথম ইনিংসের সেঞ্চুরিয়ান মুশফিকুর রহিম জ্বলে উঠেছিলেন এই ইনিংসেও, তুলে নিয়েছেন অর্ধশতক। সুবাদে প্রায় তিন বছর পর দেশের মাটিতে টেস্ট জয়ের স্বাদ পেল বাংলাদেশ।
এই টেস্টে পরিষ্কারভাবেই ফেভারিট ছিল বাংলাদেশ, প্রথম দু’দিন সেই দাপটও ধরে রেখেছিল টাইগাররা। তবে তৃতীয় দিন লড়াইয়ে আইরিশরা অভাবনীয়ভাবে ঘুরে দাঁড়ায়, টাইগার বোলারদের ধৈর্যের বেশ কঠিন পরীক্ষাই নিয়েছে তারা। তবে চতুর্থ দিন সকালে আবার ম্যাচটি নিজেদের দিকে নিয়ে আসে স্বাগতিকেরা।
দ্বিতীয় ইনিংসে আয়ারল্যান্ড দল ২৯২ রান তুললেও প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশের থেকে ১৫৫ রানে পিছিয়ে থাকায় সাকিব বাহিনীর সামনে জয়ের জন্য লক্ষ্য দাঁড়ায় ১৩৮ রানের। ছোট লক্ষ্য তাড়ায় পা ফসকায়নি আজ, ২ উইকেট হারালেও লাঞ্চ ব্রেকের আগেই সংগ্রহ করে ৮৯ রান।
লক্ষ্য তাড়া করতে এই সময় লিটন দাসকে নিয়ে ওপেনিংয়ে আসেন তামিম ইকবাল খান। যদিও প্রথম ইনিংসে উদ্বোধনী জুটিতে তামিমের সঙ্গী ছিলেন নাজমুল হোসেন শান্ত। শুরুটা বেশ ভালোই করেছিল, স্বভাবজাত দ্রুতবেগে রান তুলতে থাকেন লিটন।
তবে ইনিংস বড় করতে পারেননি তিনি। দলীয় সংগ্রহ যখন ৫ ওভারে ৩৯ রান, তখন ১৯ বলে ২৩ করে আউট হন তিনি। যদিও ছোট এই ইনিংসেও একটি রেকর্ড গড়েছেন লিটন, বাংলাদেশের ষষ্ঠ ব্যাটসম্যান হিসেবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ছুঁয়েছেন ৬ হাজার রান।
আজও হতাশ করেছেন নাজমুল হোসেন শান্ত। সীমিত ওভারের ক্রিকেটে দারুণ ছন্দে থাকা এই ব্যাটার ফিরেছেন মাত্র ৪ রান করে, প্রথম ইনিংসেও অবশ্য রানের খাতা খুলতেই পারেননি তিনি। ১১ রানের মাঝে ২ উইকেট হারায় বাংলাদেশ। তবুও আগ্রাসন ছাড়েনি টাইগাররা, স্বাভাবিক খেলাই খেলতে থাকেন বাকিরা।
দ্রুত ২ উইকেট হারালেও পথ হারায়নি বাংলাদেশ, দলকে জয়ের পথেই রাখেন তামিম ইকবাল ও মুশফিকুর রহিম। স্বাচ্ছন্দ্যেই রান তুলতে থাকেন তারা। তবে একসাথে মাঠে থেকে জয় উদযাপন করা হয়নি, জয় থেকে যখন মাত্র ৩৩ রান দূরে থাকতে ৩১ রান করে সাজঘরে ফেরেন তামিম। আউট হওয়া আগে মুশফিকের সাথে গড়েন ৭৪ বলে ৬২ রানের জুটি।
তামিম আউট হলে মুমিনুল হককে সাথে নিয়ে বাকি পথটা পাড়ি দেন মুশফিক। মুশফিক ৪৮ বলে ৫১ ও মুমিনুল অপরাজিত থাকেন ২২ বলে ২০ রানে। এই সময় দ্বিতীয় বাংলাদেশী হিসেবে ১৪ হাজার আন্তর্জাতিক রান সংগ্রহের কীর্তি গড়েন মুশফিক, বসে যান বন্ধু তামিম ইকবালের সাথে।
এর আগে চতুর্থ দিনে এসে ইবাদতের কল্যাণে বেশিদূর দৌড়াতে পারেনি আয়ারল্যান্ড। আগের দিনের ৮ উইকেটে সংগ্রহ করা ২৮৬ রানের সাথে আরো ৬ রান যোগ করতেই হারায় শেষ ২ উইকেট। দিনের শুরুতেই অ্যান্ডি ম্যাকব্রাইনের স্ট্যাম্প ভাঙেন ইবাদত, ১৫৬ বলে ক্যারিয়ার সেরা ৭২ রান করেন ম্যাকব্রাইন। আর গ্রাহাম হোমকে লিটন দাসের ক্যাচ বানান ইবাদত, ৫৫ বলে ১৪ রান আসে তার ব্যাটে।
বাংলাদেশের পক্ষে সর্বোচ্চ ৪ উইকেট নেন তাইজুল ইসলাম, প্রথম ইনিংসেও ৫ উইকেট শিকার করেছিলেন এই স্পিনার। তাছাড়া ইবাদত হোসেন ৩ ও সাকিব আল হাসান পান ২ উইকেট নিয়েছেন। ১ উইকেট নিয়েছেন শরিফুল ইসলাম।
অবশ্য তৃতীয় দিনে টাইগারদের ধৈর্যের কঠিন পরীক্ষা নেয় আইরিশরা। মাটি কামড়ানো মন্থর ব্যাটিংয়ে সারাদিন কাঁটিয়ে দেয় তারা। ক্যারিয়ারের প্রথম টেস্ট শতক তুলে নেন লরকান টাকার, ১০৮ রান করেন তিনি। তাছাড়া হ্যারি টেক্টর খেলেন ৫৬ রানের ইনিংস, প্রথম ইনিংসেও অর্ধশতকের দেখা পেয়েছিলেন এই ব্যাটার।
এই টেস্টে টস জিতে আগে ব্যাট করা আইরিশরা প্রথম ইনিংসে থামে ২১৪ রানে। একাই ৫ উইকেট শিকার করেন তাইজুল ইসলাম। জবাবে ব্যাট করতে নেমে দ্রুত ৩ উইকেট হারায় টাইগাররাও, তবে মিডল অর্ডারের দৃঢ়তায় স্কোরবোর্ডে ৩৬৯ রান তোলে প্রথম ইনিংস শেষ করে বাংলাদেশ, শতক হাঁকান মুশফিকুর রহিম। ১৫৫ রানের লিড পায় বাংলাদেশ।