খোকন আহম্মেদ হীরা, বরিশাল:- একটি সুন্দর সকালের মধ্যদিয়ে শুরু হয়েছিলো ২০১৯ সালের ১ জানুয়ারি। দেখতে দেখতে ৩৬৫দিন পর ক্যালেন্ডারের পাতায় চলে এসেছে ২০২০ সাল। বিদায় নেয়া ২০১৯ সালটি বরিশালসহ দক্ষিণাঞ্চলের জন্য বেশ আলোচিত ও সমালোচিত ছিলো। বিশেষ করে বছরের মধ্য এবং শেষ ভাগে বেশকিছু হত্যাকান্ড কাপিয়ে তুলেছিলো গোটা দেশ।
যারমধ্যে অন্যতম বৃহত্তর বরিশাল বিভাগের বরগুনার রিফাত শরীফ হত্যাকান্ড। ২০১৯ সালের ২৬ জুন প্রকাশ্য দিবালোকে বরগুনা সরকারী কলেজের সামনে স্ত্রী মিন্নির সামনে তার স্বামী রিফাত শরীফকে নির্মমভাবে কুপিয়ে হত্যা করে কিশোর গ্যাং ‘বন্ড গ্রæপ’। সেই ঘটনার ভিডিও দেশব্যাপী ছড়িয়ে পরে। পরবর্তীতে যা নিয়ে সরকারের উচ্চ মহলও কেঁপে ওঠে। খোঁদ প্রধানমন্ত্রী নিজেই ওই ঘটনায় দুঃপ্রকাশ করে দ্রæত আসামিদের গ্রেফতারের নির্দেশ দিয়েছিলেন। রিফাত হত্যাকান্ডের প্রধান ঘাতক নয়ন বন্ড পুলিশের সাথে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়। তাছাড়া ঘটনার শেষভাগে হত্যা মামলার প্রধান স্বাক্ষী থেকে নিহতের স্ত্রী মিন্নির আসামি হওয়ার বিষয়টি আরও সমালোচিত হয়।
অপরদিকে বছরের শেষভাগে আলোচনার বিষয় ছিলো বরিশালের বানারীপাড়া উপজেলার ট্রিপল মার্ডার। গত ৭ ডিসেম্বর গ্রাম্য এক কবিরাজ রাতের আধারে প্রবাসীর মা, বোন জামাতা এবং খালাতো ভাইকে হত্যা করে। ওই ঘটনায় হত্যার পরিকল্পনাকারী এবং প্রধান ঘাতককে তার সহযোগিসহ গ্রেফতার করেছে বানারীপাড়া থানা পুলিশ। একই সাথে প্রবাসীর স্ত্রীকেও গ্রেফতার করা হয়।
এর আগে দেশজুড়ে উত্তাপ ছড়িয়েছিলো ভোলার বোরহানউদ্দিনে পুলিশ ও মুসল্লীদের সংঘর্ষের ঘটনা। ফেসবুকে মহানবি (স.) অবমাননা করার গুজব ছড়িয়ে গত ২০ অক্টোবর মুসল্লীদের প্রতিবাদ সমাবেশে বাঁধা দিলে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় পাঁচজন নিহত ও অসংখ্য মানুষ আহত হয়েছিলো।
এছাড়াও ২০১৯ সালের আলোচিত ঘটনার মধ্যে অন্যতম বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ডাস্টবিনের পাশ থেকে নবজাতকের ভ্রন উদ্ধারের ঘটনা। ১৮ ফেব্রæয়ারি পরীক্ষাগারে সংরক্ষিত ২১টি নবজাতকের ভ্রন উদ্ধারের ঘটনা দেশজুড়ে তোলপাড় শুরু হয়েছিলো। ২২ মার্চ থ্রী-হুইলার মাহেন্দ্রা দুর্ঘটনায় বিএম কলেজের ছাত্রীসহ আটজন নিহতের ঘটনাও ছিলো বেশ আলোচিত। ১৯ এপ্রিল সদর উপজেলার চরমোনাই এলাকায় পরকীয়া প্রেমিককে সাথে নিয়ে খুন করা হয় দলিল লেখক রিয়াজ উদ্দিনকে।
গত ৩ জুন যাত্রীবাহী ফারহান লঞ্চে অজ্ঞান পার্টির খপ্পরে পরে প্রাণহারায় বাবুগঞ্জের এক যুবক। বাঙালি শ্রমিক নিহত হওয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে ১৯ জুন কলাপাড়ায় পায়রা তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রে চীনা নাগরিক ও বাঙালি শ্রমিকদের মধ্যে সংঘর্ষে এক চীনা নাগরিকের মৃত্যু নিয়েও বেশ আলোচনার সৃষ্টি হয়েছিলো। ১৩ জুন বরগুনায় ঘরে আগুন দিয়ে সন্তানকে পুড়িয়ে হত্যা। ১৫ জুলাই বরিশাল বিশ^বিদ্যালয় এলাকায় ট্রাফিক সার্জেন্ট কিবরিয়াকে চাঁপা দিয়ে হত্যা করে কাভার্ডভ্যান চালক। ১৯ জুলাই ঢাকা-বরিশাল নৌ রুটের সুরভী-৮ লঞ্চের স্টাফ কেবিনে এক গার্মেন্টস কর্মীকে ধর্ষণ চেষ্টায় ব্যর্থ হয়ে হত্যা। ওই বছরের ২ আগস্ট নগরীর কাশিপুরে পিকাপ চালককে হত্যা, ৬ আগস্ট নগরীর এক তেল ব্যবসায়ীকে বাবুগঞ্জে নিয়ে হত্যা করা হয়।
১০ অক্টোবর অতিরিক্ত মদপানে নগরীর ৩ যুবকের মৃত্যু হয়। ৮ আগস্ট র্যাবের সাথে বন্দুকযুদ্ধে মাদক ব্যবসায়ী গাঁজা মালেক নিহত হয়। ১১ নভেম্বর ঘূর্ণিঝড় ‘বুলবুলের প্রভাবে ভোলার মেঘনায় ট্রলার ডুবে নিখোঁজ ১০ জেলের লাশ মেহেন্দিগঞ্জে উদ্ধার। একইদিন বিয়ে না করায় তরুনীর গায়ে আগুন ধরিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা এবং ঢাকায় নেয়ার পরে মৃত্যু। এছাড়া ১ ডিসেম্বর বাবুগঞ্জে মোবাইল ফোন কেনার টাকা নিয়ে বিরোধের জেরধরে কিশোরকে আগুনদিয়ে পুড়িয়ে দেয়ার ঘটনা দেশজুড়ে ব্যাপক আলোচনার সৃষ্টি হয়েছিলো। নতুন বছরে ওইসব আলোচিত ও সমালোচিত ঘটনার মতো আর যেন কোন নির্মম ঘটনা না ঘটে এমনটাই আশা করছেন সচেতন বরিশালবাসী।