খোকন আহম্মেদ হীরা, বরিশাল:– নগরীকে ঘিরে নতুন পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে সড়ক ও জনপথ বিভাগ (সওজ)। শুধু নগর কেন্দ্রীক পরিকল্পনাই নয়; সড়কের দীর্ঘস্থায়িত্ব বজায় রাখতে এ পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। পরিকল্পনা অনুসারে নগরীর নথুল্লাবাদ থেকে রূপাতলী পর্যন্ত চারলেন সড়ক নির্মাণ করা হবে। পাশাপাশি গড়িয়ারপাড়-কুদঘাটা-কালিজিরায় তৈরি করা হবে বাইপাস সড়ক।
সড়ক ও জনপথ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, বরিশাল বিভাগজুড়ে তৃতীয় বৃহৎ সমুদ্র বন্দর পায়রা, আন্তর্জাতিক মানের শিপ ইয়ার্ড, পর্যটন কেন্দ্র, তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রসহ শিল্প নগরী গড়ে তোলার কার্যক্রম চলমান রয়েছে। তার ওপর পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজ শেষ হলে বরিশালে বেসরকারী পর্যায়ে প্রচুর শিল্প-কারখানা গড়ে উঠবে। এ কারণে সরকার ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে এ অঞ্চলের প্রত্যেকটি সড়ক মেরামত এবং প্রশস্তকরণের পরিকল্পনা করেছে। পরিকল্পনা অনুযায়ী ইতোমধ্যে কাজ শুরু করেছে সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগ।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, দুটি কারণে বরিশাল নগরীর মধ্যথেকে চারলেন এবং গড়িয়ারপাড় থেকে কালিজিরা পর্যন্ত বাইপাস সড়ক নির্মাণের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। যারমধ্যে চারলেন সড়ক ব্যবহার করা হবে আঞ্চলিক ও ক্ষুদ্র থেকে মাঝারি আকৃতির যানবাহনের জন্য। আর বাইপাস ব্যবহার করা হবে শিল্প কারখানার কাচামাল বহনকারী এবং ভারী যানবাহন চলাচলের জন্য। এতে করে সড়কের দীর্ঘস্থায়িত্ব যেমন বজায় থাকবে, তেমনি যানজটের কোনো সম্ভাবনা থাকবে না।
প্রকৌশল বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, নগরীর ভেতরে থাকা চারলেন সড়কটি নামে মাত্র চারলেন। এ সড়কটির জন্য বেশ কয়েকটি কালভার্ট এবং আমতলার মোড় থেকে রূপাতলী বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত সরু সড়ক প্রধান প্রতিবন্ধকতা। চলতি মাসের শেষের দিকে এ প্রতিবন্ধকতা দূর করতে আমতলা মোড় এলাকা প্রশস্ত করতে সমাজ কল্যাণ অধিদফতরের কাছে জমির চাহিদা প্রস্তাব করা হবে। পাশাপাশি ওই অংশের সড়কের নিজস্ব জমিও উদ্ধার করা হবে। একইসাথে কালভার্টগুলোকে চারলেনের উপযুক্ত করার পরিকল্পনাও রয়েছে সওজের।
সড়ক ও জনপথ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, কাশিপুর থেকে রূপাতলী পর্যন্ত ৯৫৭টি অবৈধ স্থাপনা চিহ্নিত করা হয়েছে। একইসাথে মূল সড়কের পাশে কতটুকু জমি রয়েছে সড়ক ও জনপথ বিভাগের তা নির্ধারণ করে অভিযানে নামারও পরিকল্পনা রয়েছে। এছাড়া ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের বরিশাল জেলার প্রবেশদ্বার ভুরঘাটা থেকে কাশিপুর এবং রূপাতলী থেকে লেবুখালী পর্যন্ত সড়কে অবৈধ স্থাপনা সনাক্তের কাজও এগিয়ে চলছে।
সূত্রমতে, চারলেন ব্যবহার উপযোগী করার পাশাপাশি জুন মাসের মাঝামাঝি সময়ে সড়ক ও জনপথ বিভাগ থেকে বাইপাস সড়ক নির্মাণ কাজ শুরু করা হবে। এনিয়ে ইতোমধ্যে স্থানীয় সুধীজন ও সম্ভাব্য বিভিন্ন দফতরের কর্মকর্তাদের সাথে বৈঠক করা হয়েছে।
বরিশাল সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মাসুদ খান জানান, এখন দুটি ভাগে কাজ শুরু হয়েছে। প্রথমত যেসব সড়ক রয়েছে তাতে আর্ন্তজাতিক নিয়ম মেনে সংস্কার করার। এ কাজের অংশহিসেবে সাত থেকে ১০দিনের মধ্যে ভুরঘাটা থেকে লেবুখালী মহাসড়কের মোট ১০টি স্পিড ব্রেকার উচ্ছেদ করা হবে। কারণ মহাসড়কে স্পিড ব্রেকার রাখার কোনো নিয়ম নেই। এর পরপরই অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ কার্যক্রম শুরু করা হবে। তিনি আরও জানান, অপরদিকে চারলেন ও বাইপাস নির্মাণের জন্য সম্ভাব্য সবকিছু করা হয়েছে। বাইপাসের জন্য ডিপিপি দাখিল করা হচ্ছে।
নির্বাহী প্রকৌশলী মাসুদ খান আরও জানান, আগামী সাতদিনের মধ্যে কোন স্থান থেকে বাইপাস সড়ক যাবে তা নির্ধারণ করার জন্য ভূমি জরিপের কাজ করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি ফেব্রæয়ারী মাসের ১৫ তারিখের মধ্যে সড়কের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হবে। সূত্রমতে, নগরীর মধ্যে সনাক্ত করা ৯৫৭টি অবৈধ স্থাপনার মধ্যে পাকা, আধা পাকা ও কাঠের ঘর রয়েছে। এছাড়া ভুরঘাটা থেকে কাশিপুর এবং রূপাতলী থেকে লেবুখালী পর্যন্ত মহাসড়কে অবৈধ স্থাপনা সনাক্তের কাজও দ্রæতগতিতে এগিয়ে চলছে। এ সংক্রান্ত একটি নির্দেশনা বরিশাল জেলা প্রশাসন থেকেও দেওয়া হয়েছে। চলতি বছরের ১২ জানুয়ারি জেলা প্রশাসন (পিটিশন নং ১৫৬৪/২০১১) এর অনুকূলে ২০১৫ সালের ৭ ডিসেম্বরের রায় মোতাবেক সড়কের উভয় পাশে ১০ মিটার করে ফাঁকা স্থান রাখার নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে ওই নোটিশে।
উল্লেখ্য, নগরীর কাশিপুর থেকে নথুল্লাবাদ হয়ে সিএন্ডবি রোড থেকে রূপাতলী পর্যন্ত সড়কটি চারলেন মহাসড়কে উন্নীত করার পরিকল্পনা নেওয়া হলে এ সড়কের দুইপাশের বাসিন্দারা প্রতিবাদ জানায়। এমনকি সিএন্ডবি রোডকে চারলেনে উন্নীত না করার জন্য এবং নিজেদের ভবন ও জমি রক্ষার জন্য বরিশাল শহর বাইপাস সড়ক বাস্তবায়ন কমিটি গঠণ করে কর্মসূচিও পালন করে স্থানীয়রা। অপরদিকে শহরের মধ্য থেকে চারলেনের বিরোধিতা করে বরিশাল নগর উন্নয়ন অধিদপ্তর। এতে পুরো বিষয়টি পুনরায় বিবেচনায় নেয় সড়ক ও জনপথ বিভাগ। নগরবাসীর দাবীর সাথে ঐক্যমত পোষণ করে বাইপাস সড়কের নীতিগত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে সওজ। এখন সড়কটি বাস্তবায়নের জন্য পরবর্তী কার্যক্রম গ্রহণের চিন্তা করছে সওজ। এর আগে ১৯৯৮ সালে গড়িয়ারপাড় থেকে চহঠা-বারুজ্জারহাট-রুইয়ারপুল-টিয়াখালী-দপদপিয়া এলাকা দিয়ে বিকল্প চারলেন বাইপাস মহাসড়ক নির্মাণের প্রকল্প প্রহণ করেছিল সওজ। ওই বাইপাস সড়কটি বরিশাল-ঢাকা এবং বরিশাল-কুয়াকাটা মহাসড়কে সংযুক্ত হবে। সেটি বাস্তবায়ন হলে বরিশাল নগরীর শিক্ষা ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, সরকারী দপ্তরের ভবন ও আবাসিক ভবনের ধ্বংসযজ্ঞ এড়ানো যাবে, আবার নগরীর মধ্যভাগও নিরাপদ হবে। তাছাড়া বর্তমান ফোরলেন সড়কটি মাত্র ১২০ ফুট প্রশস্ত। এরপর আর জমি বাড়ানো সম্ভব নয়। যা জাতীয় মহাসড়কের নির্ধারিত নিয়ম অনুসরন করে না বলে মনে করছেন নগরবিদরা।