রাঙা প্রভাত ডেস্ক:- সন-তারিখ গণনার রেওয়াজ চলে পৃথিবীর শুরুলগ্ন থেকেই। মানুষের দৈনন্দিন কাজের সুবিধার্থেই দিন-তারিখের হিসাব রাখতে হয়। আমাদের দেশে সাধারণত তিন ধরনের দিন-তারিখের হিসাব প্রচলিত। ইংরেজি বা খ্রিস্টাব্দ হলো সবচেয়ে প্রাচীন রীতি। উপমহাদেশে কৃষি কাজ ও খাজনা আদায়ের সুবিধার্থে বাদশাহ আকবর প্রচলিত যে সন তাকে বাংলা বা বঙ্গাব্দ বলা হয়। আর হিজরি হলো ইসলামি সন। এর সঙ্গে মুসলমানদের বেশকিছু ইবাদত, উৎসব ও উপলক্ষের যোগসূত্রতা রয়েছে। এ জন্য মুসলমানদের কাছে হিজরি সনের গুরুত্ব বেশি।
সারা বছর তেমন হিসাব-নিকাশ না হলেও দুই ঈদসহ কয়েকটি উপলক্ষে হিজরি সনের হিসাবটুকু গুরুত্বের সঙ্গে করা হয়। হিজরি সনের সম্পর্ক চাঁদের সঙ্গে। এ জন্য এটাকে চন্দ বর্ষও বলা হয়। যেহেতু চাঁদ দেখার সঙ্গে হিজরি মাসের সম্পর্ক এ জন্য গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি ইবাদতের সময় সরকারিভাবে চাঁদ দেখার ঘোষণা দেয় নির্দিষ্ট কমিটি।
৬২২ খ্রিস্টাব্দের ১২ সেপ্টেম্বর আল্লাহর নির্দেশে মহানবী (সা.) মক্কা থেকে মদিনায় হিজরত করেন। মুসলিম জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা ৬২২ খ্রিস্টাব্দের ১৪ বা ১৫ জুলাইয়ের সূর্যাস্তের সময়কে হিজরি সন শুরুর সময় হিসাবে নির্ধারণ করেছেন। ১৭ হিজরি থেকে তৎকালীন মুসলিম বিশ্বের শাসক হজরত ওমর (রা.)-এর শাসনামলে হিজরি সন গণনা শুরু হয়। মহানবী (সা.) মদিনায় হিজরতের মাধ্যমে ইসলাম প্রসার লাভ করে, মুসলিমদের সংখ্যা বাড়তে থাকে, মুসলিমদের শক্তিমত্তা বাড়তে থাকে ও ইসলামের শ্রেষ্ঠত্ব বহির্বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে। হিজরতের ঘটনাকে স্মরণ করে বানানো হয়েছে বলে এ সনকে হিজরি সন বলা হয়।
চন্দ্র মাসের প্রভাব মুসলমানদের জীবনে ব্যাপক। জীবনের সব ক্ষেত্রেই এর প্রভাব ও গুরুত্ব রয়েছে। বিশেষত ইবাদতের তারিখ, ক্ষণ ও মৌসুম নির্ধারণের ক্ষেত্রে হিজরি সনের প্রভাব এবং গুরুত্ব অপরিসীম। যেমন রমজানের রোজা, দুই ঈদ, হজ ও জাকাত ইত্যাদি ক্ষেত্রে হিজরি সন ধরেই আমল করতে হয়। এ কারণে হিজরি সনের হিসাব স্মরণ রাখা মুসলমানদের জন্য জরুরি। হিজরি সনের গণনা মুসলিম সংস্কৃতির সঙ্গেও ওতপ্রোতভাবে জড়িত। প্রয়োজনের তাগিদে আমরা ইংরেজি ও বাংলা সন অবশ্যই গণনা করব। কিন্তু আমাদের হিজরি সনের কথা ভুলে থাকলে চলবে না। বিভিন্ন ক্ষেত্রে আমরা এই সনটি গণনার প্রচলন ঘটাতে পারলে এর সঙ্গে বিস্তৃতি ঘটবে মুসলিম সংস্কৃতির। স্মরণ করিয়ে দেবে হিজরতের গুরুত্ব ও তাৎপর্যের কথা।