
স্টাফ রিপোর্টার, বরিশাল।। প্রবাসী নারীর বাড়িতে গিয়ে বিএনপি নেতার নেতৃত্বে চাঁদা দাবি ও হুমকির অভিযোগ এনে শনিবার (পহেলা নভেম্বর) বেলা বারোটার দিকে বরিশাল রিপোর্টার্স ইউনিটিতে সংবাদ সম্মেলন করেছে ভূক্তভোগীরা।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন ভুক্তভোগী শিমু বেগম। এসময় তিনি সাংবাদিকদের কাছে একটি ভিডিওসহ তথ্য প্রমান তুলে ধরেন। ভুক্তভোগী শিমু বেগম বরিশালের বাকেরগঞ্জ উপজেলার দাড়িয়াল ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন-২০২২ সালে তিনি নিজ উদ্যোগে দাড়িয়াল গ্রামে একটি বসত বাড়ি নির্মাণ করেন। যার মালিকানা তার প্রবাসী বড় মেয়ে জাহিদা আক্তারের নামে। বাড়ি নির্মাণের পর থেকে তার স্বামী বজলু হাওলাদার বাড়িটি নিজের নামে লিখে নেয়ার জন্য নিয়মিতভাবে তাকে শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করে আসছেন। এ বিষয়ে তিনি আইনের আশ্রয় নিলে বাকেরগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব ও দাড়িয়াল ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান মিজান মিয়া মামলা তুলে নেয়ার জন্য তাকে জোরপূর্বক চাঁপ প্রয়োগ করেন। পরে তিনি মামলা তুলে নিতে বাধ্য হয়েছেন।
শিমু বেগম আরও বলেন-এনিয়ে সৃষ্ট বিরোধের জেরধরে গত একবছর পূর্বে তার দ্বিতীয় স্বামী বজলু হাওলাদারের সাথে তার বিবাহ বিচ্ছেদ হয়। তিনি আরও বলেন-গত ২২ অক্টোবর তার মেয়ে জাহিদা আক্তার প্রবাস থেকে দেশে ফেরার পর থেকে বজলু হাওলাদার ও তার সহযোগিরা তাদের কাছে নানা অজুহাতে অর্থ দাবি করতে থাকে।
শিমু বেগম অভিযোগ করে বলেন-সবশেষে গত (৩১ অক্টোবর) শুক্রবার সকালে বরিশাল দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহবায়ক ও বরিশাল-৬ আসন থেকে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী আবুল হোসেন খানের প্রভাব বিস্তার করে তার ঘনিষ্ঠ অনুসারী বাকেরগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব কামরুজ্জামান মিজান মিয়ার নেতৃত্বে তার অন্যান্য সহযোগিরা তাদের (শিমু বেগম) বাড়িতে গিয়ে ৪০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে এবং বাড়িটি বজলু হাওলাদারের নামে লিখে দেয়ার জন্য চাপ প্রয়োগ করে।
শিমু বেগম অভিযোগ করে আরও বলেন, এ ঘটনার প্রতিবাদ করলে আমাদের অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজসহ ‘পোস্টিটিউট’ আখ্যা দেয়া হয়। পাশাপাশি আমাদের বাড়ি ও এলাকা ছেড়ে চলে যাওয়ার হুমকি দেয়া হয়।
সংবাদ সম্মেলনে শিমু বেগম ঘটনার একটি ভিডিও সাংবাদিকদের কাছে তুলে ধরেন। ভিডিওতে বাকেরগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব কামরুজ্জামান মিজান মিয়াকে বলতে শোনা যায়-তোমরা এখানে ক্যামনে থাকবা, আমি দেখবো? এছাড়াও ভিডিওতে শিমু বেগমের পরিবারকে বিভিন্ন ধরণের হুমকি-ধামকি দিতেও দেখা গেছে।
অভিযোগের ব্যাপারে সংবাদ সম্মেলন থেকে সাংবাদিকরা বরিশাল দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহবায়ক আবুল হোসেন খানের ব্যবহৃত মোবাইল ফোন ও হোয়াটসঅ্যাপে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তাকে পাওয়া যায়নি। তবে বাকেরগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব কামরুজ্জামান মিজান মিয়া অভিযোগ অস্বীকার করে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন-ওই নারীর একাধিক বিয়ে হয়েছে। বজলু আমার পাশের গ্রামের বাসিন্দা। যে বাড়ির কথা বলা হচ্ছে সেটি বজলুর জমির ওপর নির্মিত। বজলু তার মালিকানা বুঝে নিতে তার (মিজান) সহযোগিতা চেয়েছেন।
তিনি আরও বলেন, ওই নারী পাশের এলাকার কামাল মাস্টারের সাথে পরকীয়ার পর তাকে বিয়ে করেছে। কিন্ত সেই স্বামীর বাড়িতে যায়না। তাদের এলাকা ছাড়তে বলা হয়েছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে মিজান মিয়া বলেন, যেহেতু তার বজলুর সাথে তালাক হয়েছে, তাই ওই নারীকে বলেছি কামাল মাস্টারের সাথে গিয়ে থাকুক।
৪০ লাখ টাকা চাঁদা দাবির অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, আমি ৩১ অক্টোবর তাদের বাড়িতে গিয়েছিলাম সালিশিতে। বজলু বলেছে বাড়ি করতে ৬৮ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। যারমধ্যে ওই নারী দিয়েছে ২৮ লাখ টাকা। এখন যদি ওই বাড়িতে বজলুকে থাকতেনা দেয় তাহলে তার পাওনা ৪০ লাখ টাকা দিয়ে দেবে। এখানে কোনো চাঁদা দাবি করা হয়নি।
অপরদিকে বজলু হাওলাদার বলেন, আমার বিরুদ্ধে ভিত্তিহীন অভিযোগ তোলা হয়েছে। আমি ১৯৯৮ সাল থেকে ব্যবসা করছি। ২০১৯ সালে এই বাড়ি করতে গিয়ে বাবার সম্পত্তি বিক্রি করেছি। এখন সেই বাড়ি নিয়ে যাওয়ার জন্য আমার বিরুদ্ধে নানা ষড়যন্ত্র করা হয়েছে।
