শামীম মীর, গৌরনদী (বরিশাল ):- পৃথিবীর মধ্যে সবথেকে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ ও সন্মানজনক পেশা হলো সাংবাদিকতা। সাংবাদিকতা সমাজের দর্পন, জাতীর বিবেক। বাক স্বাধীনতা ও নাগরিক অধিকার রক্ষায়, সাংবিধানিক নিয়ম-নীতি সমন্বিত মৌলিক বিষয়গুলি সঠিকভাবে জনসাধারণের এবং সরকারের কাছে উপস্থাপন করাই সাংবাদিকদের প্রধান কাজ। ” “ওয়াশিংটন পোস্ট পত্রিকার একদা পরিচালন সম্পাদক জেমস রাসেন উইগিনস বলেছেন, ‘সভ্যতা বলতে আমরা যা বুঝি তা বাঁচত না, যদি সংবাদ প্রচারের ব্যবস্থা না থাকতো। সংবাদ ছাড়া সমাজের বাসিন্দারা সেই সমতাবোধ থেকে বঞ্চিত হতো, যা না থাকলে আনুষ্ঠানিক বা রীতিবহির্ভূত কোনো আইন তৈরি করা সম্ভব নয়।” ” রোম সাম্রাজ্য টিকে থাকতে পারেনি তার একটিমাত্র কারণ হলো, সেখানে কোনো সংবাদপত্র ছিল না। সংবাদপত্র না থাকার কারণে দূর-দূরান্তে ছড়িয়ে থাকা মানুষের কাছে কেন্দ্রীয় শাসকদের মতিগতি জানাবার কোনো উপায় ছিল না। সাংবাদিকদের জাতির বিবেক বলা হয়, সাংবাদিকরা কলম সৈনিক অর্থাৎ সাংবাদিক দেশ ও জাতির বিবেক। ঝুঁকিপূর্ণ জেনেও সাংবাদিকরা দেশ ও জাতির কল্যাণে পেশাগত দায়িত্ব পালন করছেন।
বর্তমানে করোনাভাইরাস কোভিড-১৯ মোকাবিলায় সাংবাদিকরা সম্মুখযুদ্ধে লিপ্ত আছেন। তাঁরা এই করোনা যুদ্ধে প্রথমসারির সৈনিক। ইতোমধ্যে চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মী, মাঠ পর্যায়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা-কর্মাচারী, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য, সশস্ত্রবাহিনী ও বিজিবি সদস্যসহ প্রজাতন্ত্রের অন্যান্য কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য স্বাস্থ্য সুরক্ষাসহ বিশেষ ইন্সুরেন্স এবং বিশেষ সম্মানী ও বীমা বাবদ প্রায় হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ রাখার ঘোষণা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ১৩ এপ্রিল জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে তিনি এসব ঘোষণা দেন। এইদিন প্রধানমন্ত্রীর তার ভাষণে প্রথম সারির যোদ্ধা বলেন সাংবাদিকদের। কিন্তু সেই সাংবাদিকদের ভাগ্যে জুটেছে শুধুমাত্র ‘ধন্যবাদ’ এছাড়া আর কিছুই না!
প্রধানমন্ত্রী, তথ্যমন্ত্রী এবং বিভিন্ন মিডিয়ার মালিকপক্ষ একবাক্যে স্বীকার করছেন এই সময়ে সাংবাদিকরা কতটা ঝুঁকি নিয়ে কাজ করছেন, কিন্তু তাদের ভাগ্যে শুধু ধন্যবাদ ছাড়া আর কিছুই বাস্তবায়ন নেই। সাংবাদিকদের ভাগ্যে চিরকাল জুটে এসেছে অবহেলা, অবহেলা আর অবহেলা।দেশের এই ভয়াবহ পরিস্থিতিতে সাংবাদিক ও গণমাধ্যমকর্মীরা অনেক খবর প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দেশবাসী ও প্রশাসনের কাছে পৌঁছে দিচ্ছেন। চিকিৎসক, নার্স ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মতো মাঠে কর্মরত সাংবাদিকরাও করোনাবিরোধী যোদ্ধা। আজকে করোনায় অনেক সাংবাদিকরা আক্রান্ত হচ্ছে এমনকি মারাও যাচ্ছেন। তাদের সহায়তা করা সরকার ও মিডিয়ার মালিক পক্ষের দায়িত্ব ও কর্তব্য কিন্তু তারা সেটা করছেন কি?
উপজেলা পর্যায়ের অনেক মফস্বল সাংবাদিক শুধু মুখে মাস্ক আর মাথায় পলিথিন দিয়ে সাহসিকতার সাথে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। তাদের নিজের হাতে যা আছে, তাই নিয়েই ঝাঁপিয়ে পড়েছেন। তাঁরা মন ও আত্মার মুক্তির জন্য সত্যের প্রতি প্রকৃত নিষ্ঠা প্রদর্শন, জনসাধারণের প্রকৃত অবস্থা সম্বন্ধে সরকারকে এবং দেশের আইন-কানুন সম্বন্ধে জনগণকে অবহিত করতে কাজ করেন। দুর্বার গতিতে জাতির এই ক্রান্তিলগ্নে তাঁরা দায়িত্ব পালনে কখনো পিছপা না হয়ে ছুটে চলেছেন। সেসব সাংবাদিকদের মধ্যে অনেকেই টিভি চ্যানেলে কর্মরত,অনেকেই জাতীয় দৈনিক পত্রিকা, মফস্বল পত্রিকা ও অনলাইনে কর্মরত।
সাংবাদিক সংগঠন গুলোর সেইসব নেতারা আজ কোথায়? যারা সাংবাদিকদের সুবিধা অসুবিধা নিয়ে কথা বলবে। অনেক সাংবাদিক আছে যারা কোন সংগঠনের সাথে যুক্ত না, সাংবাদিক সংগঠন ও ক্লাবে সদস্য হতে আগ্রহী থাকলেও বিভিন্ন কারণে তারা সদস্য হতে পারেন না। বেশিরভাগ সাংবাদিকরা ঐক্যবদ্ধ না থাকার কারণে অনেকেই আবার নতুন করে আলাদা ভাবে সাংবাদিকদের নিয়ে সাংবাদিক সংগঠন করেছেন, কিন্তু তারাও এখন এর মধ্যে পিছিয়ে পড়েছেন। সাংবাদিক নেতারা একে অন্যের সাথে দন্দে জরিয়ে সাংবাদিকদের স্বার্থ হাছিল করছেন না। তাদের তদারকির অভাবে ঐক্যবদ্ধ না থাকার কারনে অনেকে নিউজ না করেই কার্ড গলায় ঝুঁলিয়ে পরিচয় দেন যে, আমি সাংবাদিক! আবার অনেক আছে সাংবাদিক না তবুও সাংবাদিক সাজেন। এমন হলুদ সাংবাদিকদের জন্য প্রকৃত সাংবাদিকদের হতে হচ্ছে প্রশ্নের সম্মুখীন, পরতে হচ্ছে বিভ্রান্তিকর পরিস্থিতিতে। এগুলো দেখারও যেন কেউ নেই!
সম্প্রতি করোনায় আক্রান্ত হয়ে দৈনিক সময়ের আলো পত্রিকার প্রধান প্রতিবেদক হুমায়ুন কবীর খোকন মারা গেছেন। শুধু তাই নয়, ঢাকা ও মফস্বলে অনেক সাংবাদিক করোনায় আক্রান্ত। সকল সাংবাদিক জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সংবাদ সংগ্রহে মাঠে ময়দানে কাজ করছেন। সাংবাদিকরা করোনা মোকাবিলায় সরকারকে সহযোগিতা করছেন। তেমনি করোনা সমস্যা মোকাবিলায় অনেক সীমাবদ্ধতা, অনেক প্রতিষ্ঠানের ব্যর্থতার কথাও সাহসের সাথে তুলে ধরছেন সাংবাদিকরা। চিকিৎসার ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধতা ও ত্রাণ তৎপরতায় সফলতা এবং ব্যর্থতার কথাও সাংবাদিকরা তুলে ধরছেন।
তাই এখনই সাংবাদিকদের জন্য সঠিক সুরক্ষা ব্যবস্থা সহ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহনের জন্য প্রধানমন্ত্রী ও তথ্যমন্ত্রীর সহ মিডিয়ার মালিকপক্ষের কাছে বিশেষভাবে অনুরোধ জানাচ্ছি।