বরিশালের বাবুগঞ্জ উপজেলার দুই বীর মুক্তিযোদ্ধার গেজেট বাতিলকে কেন্দ্র করে গণমাধ্যমে প্রকাশিত “বাবুগঞ্জ দুই ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা শনাক্ত, গেজেট বাতিলে নির্দেশ” শিরোনামে প্রকাশিত সংবাদের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন বাবুগঞ্জ উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের রহমতপুর ইউনিয়নের কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল মালেক খান এবং চাঁদপাশা ইউনিয়নের বকশির চর গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিজ উদ্দিন মোল্লা। প্রতিবাদলিপিতে তারা উক্ত সংবাদকে বানোয়াট, ভিত্তিহীন, উদ্দেশ্য প্রণোদিত ও যড়যন্ত্রকারীদের চক্রান্তে সামাজিক মান-মর্যাদা হেয় করার একটি অপচেষ্টা বলে আখ্যা দিয়েছেন।

প্রতিবাদ বিবৃতিতে মুক্তিযোদ্ধা সংসদের রহমতপুর ইউনিয়ন কমান্ডার আবদুল মালেক খান জানান, তিনি নবম সেক্টরের বাবুগঞ্জ অঞ্চলের যুদ্ধকালীন বেইজ কমান্ডার আবদুল মজিদ খানের অধীনে যুদ্ধ করেন। দীর্ঘ ৯ মাসের যুদ্ধ শেষে তিনি বেইজ কমান্ডার মজিদ খানের মাধ্যমে প্রতাবপুর মিলিশিয়া ক্যাম্পে লেফটেন্যান্ট শামসুদ্দিনের কাছে অস্ত্র সমর্পণ করেন এবং সনদপত্র গ্রহণ করেন। পরবর্তীকালে ১৯৭৬ সালে তিনি ওই মুক্তিযোদ্ধা সনদ দিয়েই বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে চাকরি নেন। এরপরে ২০০০ সালে তৎকালীন সরকার মুক্তিযোদ্ধা তালিকাভুক্তি কার্যক্রম শুরু করলে তিনি মুক্তিযোদ্ধা তালিকাভুক্ত হওয়ার আবেদন করেন। ওই আবেদনের প্রেক্ষিতে যাচাই-বাছাই শেষে ২০০৫ সালে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় তাকে বেসামরিক গেজেটভুক্ত করে যার নম্বর-১৯৪৬। এই বেসামরিক ১৯৪৬ নং গেজেটের মাধ্যমেই তিনি প্রথমে ৩০০ টাকা মাসিক ভাতা থেকে শুরু করে বর্তমানে ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত ভাতা পেয়ে আসছেন। এদিকে মুক্তিযুদ্ধের প্রধান সেনাপতি আতাউল গনি ওসমানী প্রদত্ত সনদপত্র দিয়ে তিনি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে চাকরি নেওয়ার কারণে সেনা গেজেটও তার নাম মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তালিকাভুক্ত হয়ে যায়। ২০১৩ সালে সেনাবাহিনীর তৈরি ওই সেনা গেজেট তার নম্বর-২৩৭৯। সামরিক এবং বেসামরিক উভয় গেজেটে তার নাম থাকলেও তিনি তা জানতেন না। তিনি কেবল বেসামরিক গেজেটের অধীনেই ভাতা এবং অন্যান্য সুযোগসুবিধা গ্রহণ করেছেন। সম্প্রতি উভয় গেজেটে নাম থাকার ঘটনা নিয়ে জটিলতা সৃষ্টি হলে গত ১৩ নভেম্বর জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের (জামুকা) ১০০তম সভায় সিদ্ধান্ত মোতাবেক তার নামে অতিরিক্ত সামরিক গেজেট (সেনা গেটেজ নং-২৩৭৯) বাতিল করা হয়। বর্তমানে তার বেসামরিক গেজেট নম্বর-১৯৪৬ চালু আছে এবং এখনো তিনি মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে মন্ত্রণালয়ে তালিকাভুক্ত রয়েছেন। যুদ্ধের সকল প্রমাণপত্র ও সনদপত্র থাকার পরেও একটি কুচক্রী মহল তার অতিরিক্ত গেজেট বাতিল করার ঘটনা নিয়ে নানান অপপ্রচার চালাচ্ছে বলে অভিযোগ করেন বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল মালেক খান।

একইভাবে বাবুগঞ্জ উপজেলার চাঁদপাশা ইউনিয়নের বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিজ উদ্দিন মোল্লা জানান, তার নামেও দুইটি গেজেট রয়েছে। সম্প্রতি তার নামে মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য সরকারি বসতঘর বীর নিবাস বরাদ্দ হয়। এই বীর নিবাস নির্মাণ কাজের শেষ পর্যায়ে টয়লেট নির্মাণের সময় জমি নিয়ে বিরোধের জের ধরে তাকে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা সাজিয়ে স্থানীয় মিরাজুল হাসান নামে জনৈক ব্যক্তি মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন জায়গায় মিথ্যা অভিযোগ দায়ের করেন। মন্ত্রণালয়ে ওই অভিযোগের পরে গত ১৩ নভেম্বর জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের (জামুকা) ১০০তম সভায় তার বেসামরিক ১৮৫৪ নম্বর গেজেট বাতিল করা হয়। তার দুটি গেজেটের একটি বাতিল করা হলেও লাল মুক্তিবার্তা গেজেট নম্বর-৬০১০৪০৩২৯ এখনো বহাল আছে এবং তিনি মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তালিকাভুক্ত আছেন। তিনি যুদ্ধকালীন বেইজ কমান্ডার আবদুল মজিদ খানের অধীনে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন এবং তার মাধ্যমেই লেফটেন্যান্ট শামসুদ্দিন খানের কাছে অস্ত্র সমর্পণ করে সনদপত্র গ্রহণ করেন। মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষে তার সকল প্রমাণ ও সনদপত্র থাকার পরেও ওই মিরাজুল হাসান গং তার বিরুদ্ধে নানান অপপ্রচার চালাচ্ছে এবং তাকে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা বানাতে বিভিন্ন ষড়যন্ত্রে লিপ্ত আছে বলে অভিযোগ করেন বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিজ উদ্দিন মোল্লা।

বাবুগঞ্জের দুই স্বনামধন্য বীর মুক্তিযোদ্ধাকে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা আখ্যা দিয়ে কয়েকটি গণমাধ্যমে সংবাদ পরিবেশন করা হয়েছে, যা অত্যন্ত দুঃখজনক এবং মানহানিকর বলে মন্তব্য করেছেন তারা। আসল ঘটনা না জেনে একটি কুচক্রী মহলের ইন্ধনে উদ্দেশ্যমূলকভাবে তাদের সামাজিক মান-মর্যাদা নষ্ট করার জন্য এমন সংবাদ প্রকাশ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন তারা। তাই বাবুগঞ্জের রহমতপুর ইউনিয়ন কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল মালেক খান এবং বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিজ উদ্দিন মোল্লা উভয়ে উক্ত বানোয়াট, মানহানিকর ও বিভ্রান্তিমূলক সংবাদের তীব্র নিন্দা ও জোর প্রতিবাদ জানিয়েছেন।

বাবুগঞ্জ উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের ডেপুটি কমান্ডার আবদুল করিম হাওলাদারের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘রহমতপুর ইউনিয়নের মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আবদুল মালেক খান এবং চাঁদপাশা ইউনিয়নের বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিজ উদ্দিন মোল্লার নামে একাধিক গেটেজ রয়েছে। একজন মুক্তিযোদ্ধার নামে একের অধিক গেজেট থাকার বিষয়টি সম্প্রতি জামুকার সভায় আলোচনা হলে যাদের একের বেশি গেজেট রয়েছে সেগুলো বাতিলের সিদ্ধান্ত হয়। এই অতিরিক্ত গেজেট বাতিল মানে এটা নয় যে তারা মুক্তিযোদ্ধা নন কিংবা তারা সবাই ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা। তারা অবশ্যই মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে সর্বত্র স্বীকৃত আছেন এবং থাকবেন। মানুষের সাথে এলাকাভিত্তিক দ্বন্দ্ব-শত্রুতা থাকতেই পারে, কিন্তু তাই বলে একজন বীর মুক্তিযোদ্ধাকে ভুয়া বলে মানহানি করা কোনোভাবেই কাম্য নয়।’

Share.

উপদেষ্টাঃ আলহাজ সিরাজ আহমেদ
প্রকাশক ও সম্পাদকঃ রফিকুল ইসলাম রনি
প্রধান সম্পাদকঃ ইব্রাহিম রুবেল
বার্তা সম্পাদকঃ আব্দুল বারী
© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
যোগাযোগঃ
৬/সি, আনেমা ভিস্তা (৭ম ফ্লোর), ৩০ তোপখানা রোড, ঢাকা ১০০০।
মোবাইলঃ ০১৮২৪২৪১০২৩, ০১৭১৯২৬৪০৪৫

Exit mobile version