স্টাফ রিপোর্টার, বরিশাল।। সরকারি অনুদান নির্ভর প্রায় দেড়শ’ বছরের ঐতিহ্যবাহী একটি দুর্গা মন্দির রাতের আঁধারে ভেঙে জোরপূর্বক জমি দখলসহ মন্দিরের প্রতিমাগুলো পাশ্ববর্তী পালরদী নদীতে নিয়ে ফেলে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। ঘটনাটি বরিশালের গৌরনদী পৌরসভার সুন্দরী মহল্লার।

ধর্মীয় স্থাপনা ভাঙচুর করে জমি দখলের ঘটনায় প্রতিপক্ষের ভাড়াটিয়া লোকজনের ভয়ে আতঙ্কিত ভুক্তভোগী পরিবারসহ ওই এলাকার হিন্দু সম্প্রদায়ের বাসিন্দারা কেউ মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছেন না।

এ ঘটনায় থানায় লিখিত অভিযোগ দায়েরের পর থানা পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। মন্দির ভাঙচুর করে জমি দখলের ঘটনায় ওই এলাকার হিন্দু সম্প্রদায়ের মাঝে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ধর্মীয় ঐতিহ্যের নির্মম অবমাননা দাবি করে স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায়ের নেতৃবৃন্দরা তাদের প্রাচীণ এ ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান রক্ষা করার জন্য প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

সুন্দরদী এলাকার বাসিন্দা মৃত মনোরঞ্জন মিত্রের ছেলে নারায়ন মিত্রের থানায় দায়ের করা লিখিত অভিযোগে জানা গেছে, সুন্দরদী মৌজায় এসএ রের্কডীয় মালিক ব্রজবিলাশ মিত্রের কাছ থেকে ১৯৮৬ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি তিনি ৫৯৬ নম্বর দলিলে ১০৪৫/২ নম্বর খতিয়ানের ১৯৩৪ নম্বর দাগের ১০ শতক জমি ক্রয় করেন। ক্রয়কৃত ওই জমির ওপর প্রায় দেড়শ’ বছরের ঐতিহ্যবাহী পুরানো সুন্দরী মিত্রবাড়ী সার্বজনীন দুর্গা মন্দির রয়েছে।

নারায়ন মিত্র বলেন-প্রতিবছর সার্বজনীন দুর্গােৎসবসহ ওই মন্দিরে নানা ধর্মীয় অনুষ্ঠান পালন হয়ে আসছে। সরকারি অনুদানের ওপর নির্ভরশীল মন্দিরটি স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায়ের মাধ্যমে একটি কমিটি গঠন করে পরিচালিত হচ্ছে। গত ১৯ নভেম্বর দিবাগত রাতে স্থানীয় মৃত ব্রজ বিলাশ মিত্রের ছেলে রিপন মিত্র ও সুমন মিত্র ওয়ারিশসূত্রে মন্দিরের ওই জমি নিজেদের দাবি করে ভাড়াটিয়া লোকজন নিয়ে পরিকল্পিতভাবে পুরনো দুর্গা মন্দিরটি ভেঙে ফেলে জোরপূর্বক জমি দখল করে নেয়।

লিখিত অভিযোগে নারায়ন মিত্র আরও উল্লেখ করেন-প্রায় দেড়শ’ বছরের ঐতিহ্যবাহী সাবজনীন দুর্গা মন্দির জোরপুর্বক ভাঙচুর করে জমি দখলের সময় আমি বাঁধা প্রদান করলে প্রতিপক্ষ ও তাদের ভাড়াটিয়া লোকজনে আমাকে বিভিন্ন ধরনের ভয়ভীতি প্রদর্শন করেন।

এমনকি দখলের সুবিধার্থে রিপন মিত্র ও সুমন মিত্রসহ তাদের ভাড়াটিয়া লোকজনে দুর্গা মন্দিরের প্রতিমা এবং পূজার সামগ্রী পাশ্ববর্তী পালরদী নদীতে ফেলে দিয়েছে। যা আমাদের ধর্মীয় অনুভূতির ওপর নির্মম আঘাত। উপায়অন্তুর না পেয়ে তিনি (নারায়ন মিত্র) তার দলিলকৃত সম্পত্তি উদ্ধার ও সার্বজনীন দুর্গা মন্দিরটি পুনস্থাপনের জন্য সহায়তা চেয়ে গৌরনদী মডেল থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।

নারায়ন মিত্র বলেন-এ ঘটনায় বুধবার বরিশাল বিজ্ঞ অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের স্মরনাপন্ন হলে বিচারক ওই সম্পত্তির ওপর স্থগিতাদেশ জারি করেন।

৪৬৬২ (২৬-১১-২০২৫) নাম্বার স্মারকে ১৪৪/১৪৫ ধারায় স্থগিতাদেশ জারি করে আদালতের বিচারক ওই সম্পত্তির দখল ও রেকর্ডের বিষয়ে প্রতিবেদন দেয়ার জন্য গৌরনদী মডেল থানার ওসিকে নির্দেশ প্রদান করেছেন।

বুধবার (২৬ নভেম্বর) দুপুরে গৌরনদী মডেল থানার ওসি মো. তরিকুল ইসলাম বলেন-পূর্বে নারায়ন মিত্রের লিখিত অভিযোগ পেয়ে তাৎক্ষনিক থানা পুলিশকে ঘটনাস্থলে পাঠিয়ে দখল কার্যক্রম বন্ধ করা হয়েছে। এমনকি বুধবার (২৬ নভেম্বর) সকালে পুনরায় দখল প্রক্রিয়া শুরুর খবর পেয়ে দুইবার ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠিয়ে কাজ বন্ধ রাখা হয়েছে।

তিনি আরো বলেন-এখনো আদালতের নির্দেশের কপি হাতে পাইনি। কাগজ হাতে পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।

তবে জমি দখল ও দুর্গা মন্দিরের প্রতিমা এবং পূজার সামগ্রী পাশ্ববর্তী পালরদী নদীতে ফেলে দেয়ার অভিযোগ অস্বীকার করে অভিযুক্ত রিপন মিত্র ও সুমন মিত্র বলেন, জমিটি আমাদের ওয়ারিশসূত্রে পাওয়া। মায়ের অসুস্থতায় ঋণের দায়ে জর্জরিত হয়ে আমরা জমিটি বিক্রি করে দিয়েছি।

তারা আরও বলেন-বিষয়টি নিয়ে উপজেলা সহকারি কমিশনারের (ভূমি) কার্যালয়ে বসা হয়েছিলো। তিনি (সহকারি কমিশনার) উভয়পক্ষকে জমির মূল কাগজপত্র নিয়ে যেতে বলেছেন।

Share.

উপদেষ্টাঃ আলহাজ সিরাজ আহমেদ
প্রকাশক ও সম্পাদকঃ রফিকুল ইসলাম রনি
প্রধান সম্পাদকঃ ইব্রাহিম রুবেল
বার্তা সম্পাদকঃ আব্দুল বারী
© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
যোগাযোগঃ
৬/সি, আনেমা ভিস্তা (৭ম ফ্লোর), ৩০ তোপখানা রোড, ঢাকা ১০০০।
মোবাইলঃ ০১৮২৪২৪১০২৩, ০১৭১৯২৬৪০৪৫

Exit mobile version