নিজের অষ্টম টেস্টে এসে ক্যারিয়ারে পাওয়া প্রথম সেঞ্চুরিটিকে ‘ডাবলে’ রূপ দিয়ে তখন ‘ট্রিপলে’র দিকে ছুটছেন জ্যাক ক্রলি। নিয়মিত বোলারদের তাকে আউট করা দূরে থাক জুটিটাই ভাঙতে পারছিলেন না আজহার আলী। শেষমেশ বল তুলে দিলেন খণ্ডকালীন অফস্পিনার আসাদ শফিকের হাতে। শফিক তার তৃতীয় ওভারের দ্বিতীয় বলে সফল। তুলে নিলেন সবচেয়ে দামি উইকেটটি। উইকেট থেকে বেরিয়ে মারার প্রবণতা দেখে বল করেছিলেন লেগ স্টাম্পের বাইরে, উইকেটকিপার রিজওয়ান স্টাম্পিং করতে কোনও ভুলচুক করেননি। দলের ১২ রানে ওপেনার ররি বার্নস ফিরে গেলে উইকেটে আসেন ক্রলি। আর যখন আউট হলেন, নামের পাশে ২৬৭ রান, ইংল্যান্ডের দশম সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত টেস্ট স্কোর, তিন নম্বর ব্যাটসম্যান হিসেবে স্বর্গীয় ওয়ালি হ্যামন্ডের অপরাজিত ৩৩৬ রানের পরে ইংল্যান্ডের হয়ে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ইনিংস। ইংল্যান্ডের তৃতীয় কনিষ্ঠতম টেস্ট ডাবল সেঞ্চুরিয়ান তিনি। শনিবার ক্রলি ডাবল সেঞ্চুরি করলেন ২২ বছর ২০১ দিন বয়সে। তার চেয়ে কম বয়সে ডাবল সেঞ্চুরি করেছেন শুধু দুজন- কিংবদন্তি লেন হাটন (২২ বছর ৫৮ দিন) ও ডেভিড গাওয়ার ( ২২ বছর ১০২ দিন)।
ক্রিকেট হলো রেকর্ডময় খেলা। এর বাঁকে বাঁকে ছড়িয়ে থাকে রেকর্ড। ক্রলির আরেকটি রেকর্ড হলো, টেড ডেক্সটার, অ্যালিস্টার কুক, বর্তমান অধিনায়ক জো রুটের পর তিনি চতুর্থ ইংলিশ ব্যাটসম্যান যিনি পাকিস্তানের বিপক্ষে ডাবল সেঞ্চুরি পেলেন। তার আরেকটি কীর্তি, ইংল্যান্ডের সপ্তম ব্যাটসম্যান হিসেবে প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরিকে রূপ দিতে পেরেছেন ‘ডাবলে’। ক্যারিয়ারে নিজের দ্বিতীয় সেঞ্চুরিটিকে ডাবলের দিকে নিয়ে ছুটে ১৫২ রানে আউট হয়েছেন ক্রলির সঙ্গী বাটলার। নিজের টেস্ট সর্বোচ্চ ১৫২ রান করে ফিরতি ক্যাচ দিয়েছেন তিনি বাঁহাতি স্পিনার ফাওয়াদ আলমকে।
তবে সে যাই হোক, বাংলাদেশের একটু সন্তুষ্টির জায়গা হলো বাটলারকে নিয়ে পঞ্চম উইকেটে সাকিব আল হাসান ও মুশফিকুর রহিমের ৩৫৯ রানের জুটিটাকে টপকে ওপরে যেতে পারেননি ক্রলি। বেসিন রিজার্ভে স্বাগতিক নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সাকিব-মুশফিকের ব্যাটে গড়া টেস্ট ইতিহাসের চতুর্থ সর্বোচ্চ পঞ্চম উইকেট জুটিটি ভেঙেছিল মুশফিকের বিদায়ে। ১৩ জানুয়ারি, ২০১৭, বাঁহাতি পেসার টেন্ট্র বোল্টের বলে উইকেটকিপার বি জে ওয়াটলিংকে ক্যাচ দেওয়ার আগে মুশফিক করেছিলেন ১৫৯ রান। সাকিব অবশ্য ডাবল সেঞ্চুরি করেছিলেন, সেই সময় বাংলাদেশের সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত টেস্ট ইনিংসই খেলেছিলেন তিনি। ২১৭ করে বোল্ড হয়ে গিয়েছিলেন বাঁহাতি পেসার নিল ওয়াগনারের বলে।
শুধু পঞ্চম উইকেটেই নয়, ৩৫৯ রান এখনও পর্যন্ত টেস্টে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ টেস্ট জুটি হয়ে রয়েছে। এর আগে পঞ্চম উইকেটে সর্বোচ্চ তিনটি জুটি গড়েছেন সিডনি বার্নস ও ডন ব্র্যাডম্যান (৪০৫ রান, বনাম ইংল্যান্ড, সিডনি, ১৯৪৬), স্টিভ ওয়াহ ও গ্রেগ ব্লুয়েট (৩৮৫ বনাম দক্ষিণ আফ্রিকা, জোহানেসবার্গ, ১৯৯৭), ভিভিএস লক্ষ্মণ ও রাহুল দ্রাবিড় (৩৭৬ বনাম অস্ট্রেলিয়া, কলকাতা, ২০০১)।
ক্রলি-বাটলারের ৩৫৯ রানের জুটি পাকিস্তানের বিপক্ষে সিরিজের তৃতীয় ও শেষ টেস্টে ইংল্যান্ডকে বসিয়েছে চালকের আসনে। আর ক্রলিকে নিয়ে ধন্য ধন্য পড়ে গেছে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট অঙ্গনে। ক্রলি ডাবল সেঞ্চুরি পেতেই ভারতের সাবেক অধিনায়ক ও ভারতীয় ক্রিকেট কন্ট্রোল বোর্ডের সভাপতি সৌরভ গাঙ্গুলীর টুইট করেন, ‘অবশেষ তিন নম্বর পজিশনে অসাধারণ একজন ব্যাটসম্যান খুঁজে পেয়েছে ইংল্যান্ড। একতম জাত ক্রিকেটার।’ ছোট কাউন্টি কেন্ট থেকে উঠে এসেছেন ক্রলি। কেন্টের ক্রিকেট পরিচালক পল ডাউনটনের আশাবাদ, ক্রলি ইংল্যান্ডের অন্যতম প্রধান খেলোয়াড়ে পরিণত হতে চলেছেন, ‘তার যে মানসিকতা, সেটা একজন তরুণের পক্ষে অস্বাভাবিক। খেলার প্রতি তার আত্মনিবেদন ও রান করার জন্য তার সবসময়ের ক্ষুধাই তাকে অন্যদের চেয়ে আলাদা করে তুলেছে।