আমার দেখা, পাবনা জেলার তাঁতীবন্দের বিজয় গোবিন্দ চৌধুরী জমিদার বাড়ি
তাঁতীবন্দ জমিদার বাড়ি ( Tatibond jomidar bari ) বাংলাদেশ এর পাবনা জেলার সুজানগর উপজেলার তাঁতীবন্দ নামক গ্রামে অবস্থিত এক ঐতিহাসিক জমিদার বাড়ি। পাবনা জেলার যে কয়েকটি জমিদার বাড়ি রয়েছে তার মধ্যে অন্যতম জমিদারবারি এই তাঁতিবন্দ জমিদার বাড়ি। এটি বাংলাদেশের রাজশাহী বিভাগের পাবনা জেলার সুজানগর উপজেলার তাঁতিবন্দ নামক গ্রামে অবস্থিত ঐতিহাসিক জমিদার বাড়ি। উক্ত জমিদার বাড়ি থেকে এই জমিদার বংশের তৈরি করা মঠ বিজয় বাবুর মঠ জনসাধারণের কাছে বেশ পরিচিত।
৯আনুমানিক ১৭০০ শতকের মাঝামাঝি জমিদার উপেন্দ্র নারায়ণ চৌধুরীর হাতে এই জমিদার বংশ ও জমিদার বাড়ির গোড়াপত্তন। এরপর একেএকে এই জমিদার বংশধররা উক্ত জমিদারী তাদের নিজ স্বীয় গুণাবলীর মাধ্যমে পরিচালনা করতে থাকেন। সুজানগরের তাঁতীবন্দ গ্রামে বিজয় গোবিন্দ চৌধুরীর জন্ম,কিন্তু এই জমিদার বাড়ির ইতিহাসে জমিদার বিজয় গোবিন্দ চৌধুরীর নামটি একটু আলাদাভাবে জায়গা করে নেয় তার অসাধারণ গুণাবলীর কারণে। কারণ তার জমিদারী আমলেই উক্ত জমিদারী আরো বিশাল আকারে বৃদ্ধি পেতে শুরু করে। তাই অনেকের কাছে উক্ত জমিদার বাড়ি ( Tatibond jomidar bari ) তার নামেই বেশ পরিচিত। তিনি তার জমিদারী কঠোর নিয়ম এবং উদারতার মাধ্যমে পরিচালনা করে প্রজাদের কাছে সু-পরিচিত হয়ে উঠেন। সামর্থবান প্রজার কাছ থেকে নিয়মমাফিক খাজনা আদায় করতেন। যাতে কোনোরকম ছাড় দিতেন না। আবার যারা অসামর্থ্যবান প্রজা। তাদের কাছ থেকে তিনি জোর করে কোনো খাজনা আদায় করতেন না। উল্টো তাদের খাজনাগুলো মাফ করে দিতেন। তার জমিদারী আমলে মুসলিম সম্প্রদায়ের উপর নিপীড়নমূলক কর্মকাণ্ডের জন্য তিনিও অন্যান্য হিন্দু জমিদারদের থেকে একটুও ব্যতিক্রম ছিলেন না। ঐসময় তার জমিদারী এলাকায় মুসলমানরা কোরবানির জন্য গরু জবাই দিতে পারতেন না। এছাড়াও মুসলমানদের অন্যান্য ধর্মীয় অনুষ্ঠানের উপরও ছিল নিষেধাজ্ঞা। বিজয় গোবিন্দ তার সৌখিন জীবনে চলাফেরা করার জন্য হাতিবহর ব্যবহার করতেন। ঐ হাতিবহরের খরচের জন্য তিনি প্রতিমাসে প্রজাদের কাছ থেকে আলাদাভাবে খাজনা আদায় করতেন। কথিত আছে জমিদারী আমলে বর্তমান পাবনা জেলার সুজানগর উপজেলায় এই জমিদার বংশধরদের মত আরেকটি জমিদার বংশ ছিল। যা ছিল মুসলিম জমিদার আজিম চৌধুরীর জমিদার বংশ। সুজানগরের আরেক মুসলিম জমিদার আজিম চৌধুরীর সাথে এই হিন্দু জমিদার বিজয় গোবিন্দ চৌধুরীর বেশ ভালো সম্পর্ক ছিল।
উপেন্দ্র নারায়ণ উক্ত জমিদার বংশ ও জমিদার বাড়ির প্রতিষ্ঠাতা হলেও মূলত জমিদার বিজয় গোবিন্দ চৌধুরীর সময়ই জমিদার বাড়িতে বিশাল বিশাল সুন্দর কারুকার্যখচিত একাধিক অট্টালিকা তৈরি করা হয়। এছাড়াও কয়েকটি দিঘী ও দুইটি সুইচ্চ মঠ তৈরি করা হয়। এই দুইটি সুইচ্চ মঠ বর্তমান প্রজন্মের কাছে বেশ আকর্ষিত বস্তু হিসেবে রয়েছে।
এলাকাবাসির দীর্ঘ দিনের দাবি পাবনার সুজানগরের দুলাই আজিম চৌধুরীর জমিদার বাড়ি ও তাঁতীবন্দের বিজয় গোবিন্দ বাবুর জমিদার বাড়ি সরকার পর্যটনকেন্দ্র হিসাবে গড়ে তুললে বাংলাদেশ তথা বিদেশী পর্যটকদের আকৃষ্ট করতে সক্ষম হত বলে বিভিন্ন মহলের দাবি।
কিভাবে যাওয়া যায়:
পাবনা হতে ১৯ কি.মি. দুরে সিনজি/নিজ পরিবহন যোগে সুজানগর যাওয়া যায়। সুজানগর উপজেলা থেকে সি.এন.জি/ভ্যান যোগে উত্তর দিকে প্রায় ৫ কি.মি. দুরে তাঁতিবন্দ উচ্চ বিদ্যালয় সংলগ্ন জমিদার বাড়ী যাওয়া যায়।
এছাড়া পাবনা ঢাকা মহাসড়কের চিনাখড়া থেকে সি এন জি, ব্যাটারী চালিত ভ্যানরিক্সা যোগেও যাতায়াত সুবিধা আছে।
তথ্য সংগ্রহেঃ বিধান চন্দ্র ঘোষ,
সহকারী উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা,
সুজানগর,পাবনা।