সন্তান পালনে যে ১৩টি টিপস অবশ্যই মা-বাবার জানা উচিত
সন্তান ভূমিষ্ট হওয়ার পর একটা আলাদা দায়িত্ব চলে আসে মা-বাবার ওপর। কী করলে সন্তান সুস্থ থাকবে, কীভাবে রাখলে সন্তানের কোনো সমস্যা হবে না এ নিয়ে সব সময় চিন্তায় থাকে বাবা-মা। বুকের দুধ খাওয়ানোর সময় কোনো সতর্কতা অবলম্বন করা লাগবে কিনা এ বিষয়েও অনেক সময় সংশয়ে থাকেন মা।
এসব সমস্যার সমাধান পেতে অনেক সময় ডাক্তার, পরিচিত বন্ধু-বান্ধব ও আত্মীয়দের কাছ থেকে প্রচলিত বা আধুনিক পরামর্শ পাওয়া যায়। কিন্তু দেখা যায় এসব পরামর্শ কারও সঙ্গে মিলছে তো কারও সঙ্গে সাংঘর্ষিক হচ্ছে। তখনই বিপাকে পড়েন বাবা-মায়েরা।।
উদাহরণস্বরূপ, যুক্তরাষ্ট্রের ব্রাউন বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির অধ্যাপক এমিলি ওস্টার অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় প্রচণ্ড দ্বিধা-দ্বন্দ্বের মধ্যে ছিলেন যে কোন পরামর্শটি তার সন্তান লালন-পালনের জন্য উপযুক্ত হবে।
এরপর তিনি সিদ্ধান্ত নেন সন্তানের যত্ন বিষয়ক যত ধরনের গবেষণা আছে সবগুলো তিনি যাচাই-বাছাই করবেন। যেই ভাবনা সেই কাজ, সব মেডিকেল জার্নালে চিরুণী অভযান চালিয়ে বিশ্লেষণ করে একটি বই লেখেন যার নাম দেন ‘গর্ভাবস্থায় কী করবেন আর কী করবেন না’।
তিনি সম্প্রতি আরও একটি বই লিখেছেন বলে জানিয়েছে বিবিসি বাংলা। এই বইটিতে সন্তানের লালন-পালন বিষয়ে তিনি মোট ১৩টি পরামর্শ দিয়েছেন। আর এ পরামর্শগুলো প্রত্যেক মা-বাবার জানা উচিত বলেও তিনি মনে করেন।
যে ১৩টি পরামর্শ দিয়েছেন সেগুলো হলো-
১. স্বল্প সময়ের জন্য শিশুর স্বাস্থ্য ভালো রাখতে বুকের দুধ অনেক উপকারী এমন অনেক তথ্য আছে কিন্তু গবেষণায় দেখা গেছে, যেসব শিশুরা বুকের দুধ খায় তারা বিশেষ করে অ্যালার্জি, পেটের সমস্যা এবং কানে সংক্রমণের মতো সমস্যায় কম পড়ে। আবার বুকের দুধের দীর্ঘমেয়াদী উপকারিতা সম্পর্কে পর্যাপ্ত তথ্য গবেষকদের কাছে নেই। তবে, সন্তানকে বুকের দুধ খাওয়ালে মায়েদের ব্রেস্ট ক্যান্সার হবার ঝুঁকি ২০-৩০ শতাংশ পর্যন্ত কমে যায়।
২. অনেকেই মনে করেন যে সময়টাজুড়ে শিশু বুকের দুধ পান করেন সেই সময়টা অ্যালকোহল পান করা যাবে না। কিন্তু অধ্যাপক ওস্টার বলছেন, ওই সময়টাতে অ্যালকোহল পান করলে, রক্তে অ্যালকোহলের পরিমাণ যা থাকে সেই একই পরিমাণ থাকবে বুকের দুধেও। আর তাই যদি কোনো মা তার সন্তানকে অ্যালকোহল দিতে না চান তাহলে পান করার দুই ঘণ্টা পর সন্তানকে দুধ দেবেন।
৩. যেসকল মায়েরা বুকের দুখ খাওয়াচ্ছেন তারা চাইলে ডাক্তারের পরামর্শে বিষণ্নতারোধী ওষুধ খেতে পারবেন। এতে সন্তানের ওপরে কোনো ক্ষতিকর প্রভাব পড়বে না। যদিও গবেষণায় দেখা গেছে বুকের দুধ খাওয়ানোর মধ্য দিয়ে প্রাকৃতিকভাবেই বিষণ্নতা কমে।
৪. যুক্তরাষ্ট্রের শিশু বিশেষজ্ঞদের সংগঠনের পরামর্শ, জন্মের পর অন্তত প্রথম ছয়মাস থেকে এক বছর যেন মা-বাবা তার শিশুদের একসঙ্গে একই ঘরে রাখে। এতে শিশুদের হঠাৎ মৃত্যুর হার রোধ করা সম্ভব। কিন্তু চিকিৎসকেরা বলছেন, একই ঘরে থাকার সুবিধা অল্প কয়েক মাসের মধ্যেই ফুরিয়ে যায়। এ বিষয়ে অধ্যাপক ওস্টার বলছেন, কোনো মা-বাবা যদি তার শিশুকে নিয়ে একই ঘরে থাকতে চান তাহলে যত দিন ইচ্ছা থাকতে পারবেন।
৫. অনেক মা এখনো তার ঘুমন্ত সন্তানকে পরিষ্কার কাপড় দিয়ে শক্ত করে বুকের কাছে বেঁধে রাখেন। এ বিষয়ে গবেষণায় দেখা গেছে এটা শিশুদের জন্য উপকারী, এর ফলে শিশু ভয় পেয়ে কেঁদে ওঠে না এবং শিশুর ঘুম ভালো হয়। তবে বুকের কাছে বেঁধে রাখার সময় শিশু যেন তার কোমর এবং পশ্চাৎদেশ ঠিকমতো নড়াচড়া করতে পারে সেটি নিশ্চিত করতে হবে।
৬. গবেষণায় দেখা গেছে প্রাপ্তবয়স্ক কোনো মানুষের সঙ্গে শিশুরা সোফায় বা যেকোনো জায়গায় ঘুমিয়ে পড়লে শিশু মৃত্যুর হার ২০-৬০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়তে পারে। অনেক সময় অসচেতনতার কারণে প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের শরীরের নিচে চাপা পড়তে পারে বাচ্চারা। তাই এমনটি করতে নিষেধ করেছেন ওস্টার।
৭. সন্তান জন্মের পরবর্তী ছয় সপ্তাহ শারীরিক সম্পর্ক করা উচিত নয়। তবে গবেষণায় দেখা গেছে এর জন্য কোনো আদর্শ সময় নেই। এটি নির্ভর করে মায়ের শারীরিক অবস্থার ওপর।
৮. সন্তানকে অবশ্যই প্রয়োজনীয় সব টিকা দিতে হবে। সেই সঙ্গে মায়ের নিজের সুস্থতার জন্যও প্রয়োজনীয় টিকা ও অন্যান্য চিকিৎসা নিতে হবে।
৯. বাচ্চাকে ঘুমের প্রশিক্ষণ দেওয়া উচিত কিনা এ বিষয়ে অধ্যাপক ওস্টার অনেকগুলো গবেষণা বিশ্লেষণ করে যে তথ্য পেয়েছেন তা হলো বাচ্চাদের খুব অল্প বয়সেই ঘুমের একটি নিয়ম ঠিক করা উচিত। তাহলে বাকী কাজগুলো একটি নির্দিষ্ট নিয়মে চলবে।
১০. অনেকগুলো গবেষণায় দেখা গেছে, জন্মের পর শিশুদের কিছু সময় মায়ের সঙ্গে একান্তে কাটানো প্রয়োজন। ফলে একজন মায়ের মাতৃত্বকালীন ছুটি নেওয়ার ফলে সন্তান উপকৃত হয়।
১১. অনেক মা আছেন তাদের ব্যক্তিগত কাজের জন্য সন্তানকে সময় দিতে পারেন না যার ফলে তারা তাদের সন্তানকে ডে-কেয়ারে দেন। কিন্তু ডে-কেয়ারে দিলে সন্তানের সঙ্গে মায়ের সম্পর্ক দূর্বল হয়ে যায় এমন কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। তারপরও সব সময় সন্তানকে সময় দিতে হবে।
১২. এখন প্রায়ই দেখা যায় সন্তানদেরকে টিভি দেখিয়ে খাওয়াতে হয়। এক্ষেত্রে তিন থেকে পাঁচ বছর বয়সী শিশুরা টিভি দেখে অনেক কিছু শিখতে পারে। তবে কোনো কোনো চিকিৎসক মনে করেন দুই বছরের কম বয়সী শিশুরা টিভি দেখলে চোখের ক্ষতি হতে পারে।
১৩. সন্তানদের পড়ানোর পড়ে সে সম্পর্কে তাদের আরও প্রশ্ন করা উচিত। এতে তাদের মধ্যে চিন্তা করার ক্ষমতা বাড়ে।