ইব্রাহীম রুবেল।।
জ্বালানি তেলের মুল্য এক ধাক্কায় বিশাল আকারে বৃদ্ধি করার প্রভাব আজ রবিবার সকাল থেকে ভোক্তা পর্যায়ে পড়তে শুরু করেছে গনপরিবহনে ভাড়া বৃদ্ধির মাধ্যমে। শনিবার থেকে জ্বালানি তেলের দাম সর্বোচ্চ ৫১ শতাংশ পর্যন্ত বাড়িয়ে নতুন মূল্য কার্যকরের প্রজ্ঞাপন দিয়েছে সরকার।
এতে গণ ও পন্য পরিবহন যানবাহনের জ্বালানি ডিজেলের দাম লিটারে ৩৪ টাকা বেড়ে ১১৪ টাকা হয়েছে। গাড়ি ও মোটর বাইকের জ্বালানি পেট্রোলের দাম ৪৪ টাকা বাড়িয়ে ১৩০ টাকা এবং অকটেনের দাম ৪৬ টাকা বাড়িয়ে ১৩৫ টাকা করা হয়েছে। তাছাড়া কেরোসিনের দাম নিরধারন করা হয় ১১৪ টাকা।
জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধির কারণে বাস মালিকদের দাবির মুখে ঢাকা ও চট্টগ্রাম মহানগরীতে প্রতি কিলোমিটারে বাস ও মিনিবাসে ভাড়া ৩৫ পয়সা বাড়িয়েছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)। দূরপাল্লায় বাস ভাড়া বাড়িয়েছে ৪০ পয়সা।
জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির প্রভাবে নতুন ভাড়া নির্ধারণের লক্ষ্যে শনিবার (৬ আগস্ট) রাজধানীর বনানীর বিআরটিএর চেয়ারম্যান কার্যালয়ে পরিবহন খাতের নেতা ও বাস মালিকদের সঙ্গে বৈঠক শেষে এ সিদ্ধান্ত জানান বিআরটিএর চেয়ারম্যান নুর মোহাম্মদ মজুমদার।
বিআরটিএ চেয়ারম্যান নুর মোহাম্মদ মজুমদার বলেন, জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির ফলে আমরা আজ বাস ভাড়া পুনঃনির্ধারণী বৈঠক করেছি। পাশাপাশি আমদানি ব্যয় বাড়ায় বাসের বিভিন্ন সামগ্রীর মূল্যবৃদ্ধির কারণেও বাস মালিকদের কিছু দাবি ছিল। বৈঠকে সবার আলোচনা-পর্যালোচনার ভিত্তিতে এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছি যে, এখন থেকে মহানগর পর্যায়ে কিলোমিটারে বাসে ২.৫০ টাকা, মিনিবাসে ২.৪০ টাকা ভাড়া হবে। দূরপাল্লার বাসে ভাড়া হবে কিলোমিটার প্রতি ২.২০ পয়সা।
আগে বাসে ভাড়া ছিল মহানগর পর্যায়ে কিলোমিটারে ২.১৫, মিনিবাসে ২.১০ টাকা। দূরপাল্লার বাসে ভাড়া কিলোমিটার প্রতি ১.৮০ টাকা ছিল।
সর্বনিম্ন ভাড়া বাসে ১০ টাকা, মিনিবাসে ৮ টাকা।
এসব বিষয়ে আজ সকাল থেকেই গনপরিবহনে বাড়তি ভাড়া আদায়ে যাত্রীদের সাথে পরিবহণ শ্রমিকদের নানা ধরনের বাকবিতণ্ডা হয়। অনেকের মন্তব্য কিলোমিটার প্রতি ২.৫০ পয়সা হলেও নানা কৌশলে বাড়তি ভাড়া নেয়া হচ্ছে। অনুসরন করা হচ্ছে না সরকার নির্ধারিত ভাড়ার হার।
মিরপুর-১ থেকে মিরপুর -১৪ নাম্বার বাস স্ট্যান্ডের দূরত্ব ৪.৪ কিলোমিটার সেই হিসেবে ভাড়া হয় ১১ টাকা কিন্তু নেয়া হচ্ছে ১৫ টাকা। অনেকেই বলছেন বাস ভাড়া নির্ধারণে জনগণের অংশগ্রহন ছিলনা বা কোণ প্রতিনিধিও রাখা হয়নি।
দেশে যা-ইচ্ছে তাই হচ্ছে, সকল পণ্যের দাম আগেই লাগাম ছাড়া ছিল এখন নতুন করে আবার বৃদ্ধি পেলে অনেকেরই ঢাকা ছাড়তে হবে। অনেকে বলছিলেন দুইবেলা খেতে হবে। নানামুখী দুর্নীতি বন্ধ এবং বাজার কারসাজি নিয়ন্ত্রন করে জ্বালানি তেলের মূল্য সমন্বয় করা যেত বলেও অনেকে বলছিলেন।
এখনো ওয়ে বিলের নামে কিলোমিটার হিসেবে ভাড়া নিচ্ছে না বাসগুলো। সরকার এতই অক্ষম যে পরিবহণ মালিকদের কন্ট্রোল করতে পারছে না। আইন প্রয়োগ করতে পারছে না?
বিআরটিসি বাস নেই রাস্তায়। বাস গুলো ডিপোতে পরে থেকে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে আর সরকার পরিবহণ নেতাদের পায়ে ধরতেছেন। সরকারি পাবলিক পরিবহণ থাকলে এসব সহজেই কন্ট্রোল করা যায়। কেউ কেউ বলেন মন্ত্রী আমলরা পকেট ভারি করার জন্য সরকারী বাস সেবা ধ্বংস করে দিচ্ছে। কেউ কেউ বলছেন জনগণ বলির পাঠা হয়ে গেছে। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো বরং ব্যবসা হারাচ্ছে এবং সেই অজুহাতে বেতন কমাচ্ছে।
সার্বিকভাবে জনগণকেই ভুগতে হবে। বলে মত দেন অনেকেই।
তাছাড়া সরকারী প্রতিষ্ঠান গুলোতে নানাবিধ দুর্নীতি এবং লাগামহীন মূল্যবৃদ্ধিতে ক্ষোভ ঝাড়তে দেখা গেছে।
মিরপুর-১৪ থেকে ক্যান্টনমেন্ট হয়ে বনানী আসার পথের যাত্রীদের ভেতর ক্ষোভ দেখা গেছে। এই পথে ২.৫ কিলোমিটার পথে ভাড়া নেয়া হচ্ছে ১৫ টাকা। এ যেন দেশের ভেতর নতুন দেশ যেখানে পরিবহণ মালিকগণ রাজা। এতসব নৈরাজ্যের মধ্যেও মানুষকে যখন জীবন চালাতে হয় তখন তো ক্ষুব্ধ হবেই।
এই পথের যাত্রীদের অনেকে ১৫ বছর ধরে ভর্তুকি দিয়ে কুইক রেন্টাল চলছে বলছিলো। ব্যাংক খাতের পি কে হালদার দের হাজার কোটি টাকা পাচারের বিষয় উঠে আসে। এরকম হাজার হাজার পিকে হালদার আছে দেশে। লক্ষ লক্ষ মানুষের কানাডা, ইউরোপ কিংবা ভারত, মালয়শিয়াতে সেকেন্ড হোম হচ্ছে। সরকারী কর্মকর্তাদের এক একজনের হাজার কোটি টাকার সম্পদ। পিওন বা গাড়ি চালকদেরও একাধিক বাড়ি-গাড়ি।
সকল স্থাপনা নির্মাণে প্রয়োজনের অধিক বাজেট হয়। সেখান থেকে ৭০ ভাগ দুর্নীতি হয়ে পকেটে যায়। এসব কন্ট্রোল করে জনগণের বৃহৎ অংশের জন্য ভর্তুকি দিলে অবশ্যই দেশের জনগণ এই খারাপ সময়ে স্বস্থিতে থাকবে। অনেককেই ব্যাংক খাতের দুর্নীতি নিয়ে ব্যপক ক্ষোভ ঝাড়তে দেখা গেছে। এসব সমস্যা সমাধান না করে তেলের দাম বাড়িয়ে মরার ওপর খাঁড়ার ঘা দিয়েছে সরকার।